Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মহাসঙ্কটে নার্সারি ও ফুল ব্যবসায়ীরা


আগামী নিউজ | আরিফুর রহমান প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২০, ০৭:৩৮ পিএম
মহাসঙ্কটে নার্সারি ও ফুল ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: এখন আর দেখা মিলছে না শৌখিন ক্রেতাদের  নার্সারি থেকে ফুলের চারা কিনতে। রাজধানীর অলি-গলিতে বিভিন্ন নার্সারির চারা নিয়ে ভ্যানগাড়িতে ঘুরতেও দেখা যায় না। সব সময়ের মতো এখন আর হাসি নেই নার্সারির মালিক-শ্রমিকের মুখে। কারণ সব হাসি-আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে করোনারভাইরাসের করাল থাবায়। গত এক মাস ধরে দেশজুড়ে এমন চিত্রটাই ধরা পড়েছে।
 
স্বরুপকাঠী, বানারীপাড়া ,পিরোজপুর, যশোর,ঝিনাইদহ,ঢাকার ধানমন্ডি, মিরপুর, রমনা, মহাখালি, সাভার,গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হজার নার্সারি ব্যাবসায়ী রয়েছেন যাদের ব্যবসায় করোনার থাবায় সঙ্কটের মুখে পড়েছে। সব মিলিয়ে সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার নার্সারি রয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠ পেশার শ্রেণির মানুষও। প্রায় কয়েক লাখ মানুষ এই একটি পেশাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। যেমন কুমার,ট্রান্সপোর্ট, পানিসহ ইত্যাদি। আর এ ব্যবসা বন্ধ থাকলে হাজার কোটি টাকার ফুলের ও চারার ব্যসার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানা গেছে।  

নার্সারির সাথে শুধু মালিক নয় অনেক শ্রমিকও যুক্ত। অনেকেই রয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ী। জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে নার্সারি ব্যবসাকে বেছে নিয়েছেন। নার্সারিকে জীবিকা হিসেবে নেওয়া নুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে মাত্র দশ হাত জায়গায় নিজের নার্সারি গড়ে তুলেছেন।  

পারিবারিক ভাবেই তিনি এ ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি বলেন, ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা থাকলে যে কেউ এই ব্যবসায় আসতে পারেন। তাদের পরিবার নার্সারি থেকে অর্জিত আয় দিয়েই খাওয়া-পড়ার খরচ চালান। নার্সারি ছোট হলেও মাসে সব খরচ বাদে ভালোই লাভ থাকে বলে জানান নুরুল ইসলাম। কিন্তু গত ২৬ তারিখের পর থেকে এ ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ। ক্রেতা নেই। কি যে  হচ্ছে আর কি হবে  তা বোঝা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ প্লান নার্সারি ম্যান সোসাইটির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আগামী নিউজডটমকে বলেছেন, ‘নার্সারি ব্যবসা মূলত ট্রান্সপোর্টকে কেন্দ্র করেই। এখন সবই বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন জেলায় যারা মালিক-শ্রমিক রয়েছেন তাদের জন্য এই করোনায় খাদ্য বা অর্থ সহায়তার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনায় শুধু মাত্র ফুলেই হাজার কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসায়ীদের। এরপর রয়েছে চারার ব্যবসা তাতেও একউ পরিমাণ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।’

বাংলাদেশ নার্সারি মালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের দিকে রাজধানীর গুলশান এলাকায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি ব্যবসা চালু হয়। নব্বই দশকের শুরুতে দেশে ব্যক্তিখাতে চার হাজারের মতো নার্সারি ছিল। বর্তমানে সারাদেশে ছোট বড় মিলে প্রায় ২০ হাজার নার্সারি রয়েছে। সারা দেশে এ খাতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নার্সারি ব্যবসার সাথে জড়িত।

এ ব্যপারে আগামী নিউজের সাথে কথা হয় নার্সারি মালিক সমিতির যুগ্ম সচিব ও একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত নার্সারি দীপক কমার্শিয়াল নার্সারি এন্ড সার্ভিসেস (ডিসি নার্সারি) এর মালিক দীপক কুমারের। এ খাতের অসুবিধা ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আগামী নিউজকে বলেন, এ খাতের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশই লকডাউনে আছে। এতে করে এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় দুই লাখ লোক এ মুহূর্তে বেকার সময় কাটাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, 'তার ডিসি নার্সারিটি ২০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। বর্তমানে প্রতিদিন এই নার্সারির পিছনে গড়ে তার খরচ আছে ১৫ হাজার টাকা করে। তার বিপরীতে আয় নেই এক টাকাও। এভাবে পকেটের টাকা খরচ করে কতোদিন চালাতে পারবেন এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।'

প্রতি বছরের ৫ জুন রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজন করা হয় বৃক্ষ মেলার। যেখানে লাখ লাখ বৃক্ষপ্রেমী নিজেদের পছন্দ মতো গাছ কিনে নিয়ে যান।

আর এ মেলার পজিশন নেওয়ার জন্য বন বিভাগ থেকে এপ্রিলের শুরুতেই নার্সারিগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
 
করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বব্যাপী মহামারি চলায় চলতি বছর সঠক সময়ে মেলার আয়োজন করা হবে কিনা?

এমন প্রশ্নের জবাবে বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মনিরুজ্জামান আগামী নিউজকে বলেন,' এখন পর্যন্ত মেলা পিছানোর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমার জানামতে এবছরও মেলা সঠিক সময়ে হবে। পজিশনের জন্য নার্সারিগুলোর প্রতি যে আহ্বান জানানো হয় তাও শীঘ্রই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে জানানো হবে।


কবে নাগাদ বিজ্ঞাপন দেয়া হতে পারে? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'এখনতো অফিস বন্ধ। অফিস চালু হলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য শিল্পের মতো নার্সাারি শিল্পের লোকজনও কর্মহীন হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য বন বিভাগ তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রনোদনা বা ত্রাণ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে না? আগামী নিউজ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি নীতি নির্ধারক যারা তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমিতো নীতি-নির্ধারণের কেউ না। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।'

অপরদিকে  দীপক কমার্শিয়াল নার্সারি এন্ড সার্ভিসেস (ডিসি নার্সারি) এর মালিক দীপক কুমার জানান , 'করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানের অবস্থা খুবই খারাপ। মালিক সমিতি চায়  বিশ্বের এই সঙ্কটকালীন সময়ে  সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে। দু’ একদিনের মধ্যেই মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ও ছোট ছোট নার্সারি মালিকদের  নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবো।

আর অন্য সময়ে নার্সারির অবস্থা বলতে গেলে, সাধারণ মানুষ আগের থেকে সচেতন হয়েছে। তারা এখন গাছ কিনছে গাছ লাগাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ বাজারটা আসলে ছোট। আমরা বিদেশি ক্রেতা ধরতে পারছি না। আমাদের গাছগুলো বিদেশে রফতানি করতে পারছিনা। আমাদের দেশের বাহিরের বাজারও ধরা প্রয়োজন। আর এ জন্য আমাদের উন্নত মানের চারা গাছ উৎপাদন করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হতে হবে বলেও জানান দিপক কুমার।  

ভালো নেই ফুল ব্যবসায়ীরাও:

করোনাভাইরাসের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে ফুলের ব্যবসাও। ফুল কেনার কথা ভাবলেই রাজধানীবাসীর চোখের সামনে ভেসে উঠে শাহবাগের কথা। আগে যেখানে ফুলের ঘ্রানে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় লেগেই থাকতো সেখানে এখন শুধুই নীরবতা। গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শাহবাগ মোড়ের ৫১টি ফুলের দোকান। এতে করে বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।

এতাগুলো মানুষ বেকার হয়ে পড়লেও তাদের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না বলে আগামী নিউজকে জানান শাহবাগ বটতলার ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। 

তিনি বলেন, আমরা এতগুলো মানুষ বেকার হয়ে পড়লাম, আমাদের খবর কেউ নিচ্ছে না। অথচ, আমরা সুবাস বিক্রি করে বেড়াই। প্রতিটা উৎসবেই আছে আমাদের অংশগ্রহণ। সেই আমরাই এখন না খেয়ে দিন পার করছি। অনেক কর্মচারীর ঘরে এখন খাবারের চাল নেই।

আপনারা সাহায্য সহযোগিতার জন্য কারো সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ আগামী নিউজকে বলেন, আমরা এই এলাকার কমিশনারের সাথে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন আমরা এই এলাকায় ব্যবসা করলেও এই এলাকার ভোটারতো না। এ কারণে আমাদের জন্য বেশি কিছু করতে পারবেন না তিনি।

দোকান বন্ধ থাকার কারণে কী পরিমাণ লোকসানে পড়তে হচ্ছে আপনাদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গড়ে প্রতিদিন এখানে ১০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হতো। যা এখন এক টাকাও হচ্ছে না। এছাড়া সামনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে একটা সিজনও ছিলো। মনেতো হচ্ছে না পহেলা বৈশাখের আগে সব ঠিক হবে। যার কারণে বড় ধরনের লোকসানে পড়ে যাবো আমরা।

এছাড়া, আমরা যাদের কাছ থেকে ফুল কিনে আনি, অর্থাৎ বাগানী তারাও লোকসানের মুখে রয়েছে বলেও জানান  ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির এ সভাপতি।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিভিন্ন খাতের অনেকেই অনুদান পাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোনো অনুদান এখনো পাইনি। এখানে ৫১টি দোকানের সঙ্গে প্রায় আড়াই হাজার স্টাফ আছে। এই লোকগুলো অনাহারে চলছে। এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠার জন্য আমাদের একটা ব্যবস্থা করে দেন।

আগামী নিউজ/আরিফ/ডলি/নাঈম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে