থাকি যেন আনন্দ ভিখারি।
আর কিছু ধন যেন কখন, কামনা না করি।
আনন্দে আনন্দ লয়ে, থাকি যেন আনন্দ হয়ে,
কেবল আনন্দময়ে, আনন্দে হৃদয় ধরি।
জগতে যা কিছু দ্বন্ধ, পাইতে শুধু আনন্দ,
ঐশ্বর্যতে ভাল মন্দ, মাধুর্যে পূর্ণ মাধুরী।
দয়াময় দয়াময়, দীনে যদি দয়া হয়,
আনন্দ করো উদয়, নিরানন্দ অপসারি।
যে আনন্দে লাগে দ্বন্ধ, চাহি না সে আনন্দ,
নিত্যানন্দ প্রেমানন্দ, পূর্ণানন্দ প্রাণে ভরি।
পুলকে আপন হারা, হতে চাই পাগল পারা,
বহায়ে আনন্দ ধারা, হৃদি সিংহাসনোপরি।
আনন্দে বসিয়া থাকো, আনন্দে আনন্দ মাখো,
রুপে প্রাণ ভরে রাখো, সেবক দাস তোমারি
মনোমোহনের কাধে বোঝা, আর জানি কি আছে পরে।
প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
প্রজ্ঞাময় আনন্দ মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। প্রজ্ঞাময় আনন্দের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটা কর্মকে উপভোগ করতে পারলে মানব জীবন স্বার্থক হয়। সেই ক্ষেত্রে নিরানন্দ ধন সম্পদ কোন কাজে আসে না বরং নিরানন্দময় অজ্ঞান মনের বস্তুময় আকর্ষণের কারণে ধন মানব জীবনের ধ্বংস ডেকে আনে। তার অজ্ঞান মন আস্তে আস্তে গভীর বস্তুর মধ্যে নিপতিত হয়।
মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি নিজের দেহমনের অনন্ত আনন্দ ধারা সৃষ্টি করা। এই বিশ্বে সব কিছুই আনন্দ ধারা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। কোথাও নিরানন্দ নেই। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের মধ্যে মানুষ নামক সত্ত্বা তার মনের লোভ, দ্বেষ ও মোহের মাধ্যমে নিজের মধ্যে নিরানন্দ বয়ে আনে। কারণ মনের বস্তুময় আকর্ষণ তাকে বস্তুর প্রতি আকর্ষিত করে তোলে। এই তৃষ্ণাময় ভাব তাকে সর্বদা নিরানন্দে ফেলে দেয়। অথচ আনন্দই তার জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা থাকার কথা।
মানুষ যখন সাধনার শক্তির দ্বারা নিজের অন্তরের শক্তিকে অনুভব করতে সক্ষম হয় তখন তার মধ্যে প্রজ্ঞার শক্তি সৃষ্টি হয়। সেই প্রজ্ঞার শক্তির দ্বারা নিজের মনের মধ্যকার নিরানন্দ তথা অজ্ঞানতাকে দূর করে নিজের মধ্যে সদা আনন্দ ভাব জেগে উঠে। তার প্রজ্ঞার শক্তিতে সদা সর্বদা সকল চিন্তা ও কর্মে আনন্দ ভাব বিরাজ করে। তখন কোন অবস্থাতেই নিজের মনের কোন নিরানন্দ ভাব থাকে না। এই প্রজ্ঞার শক্তির দ্বারা মনের মধ্যে এই অনাবিল প্রজ্ঞাময় আনন্দ মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।