Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রমজান মাসে সহবাস ও হস্তমৈথুন করা যাবে কি?


আগামী নিউজ | ইসলাম ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২২, ১০:৩৫ এএম
রমজান মাসে সহবাস ও হস্তমৈথুন করা যাবে কি?

ঢাকাঃ রোজা রেখে দিনের বেলা পানাহার করা যায় না, একইভাবে স্ত্রী সহবাসও নিষেধ। রোজা রাখার মূল অর্থই হচ্ছে- ওসব থেকে বিরত থাকা। তবে, সূর্য ডোবার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা জায়েজ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে...।’ (সুরা বাকারা: ১৮৭)

তবে, দিনের বেলা রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত সহবাস করলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। স্ত্রীকে চুমু দেওয়া কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে আনন্দসুলভ আচরণ করার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা ভেঙে গেলেও শুধু কাজা ওয়াজিব হবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না। (রদ্দুল মুখতার: ২/১৪২)

যদি নারী সন্তুষ্টচিত্তে যৌনমিলনে সাড়া দেয়, তাহলে একই বিধান নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর যদি জোরপূর্বক নারীর সাথে সহবাস করা হয়, তাহলে তার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হবে না। শুধু ওই দিনের রোজা কাজা করলেই হবে। (ফতোয়া লাজনাদ্‌ দায়িমা-ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র-১০/৩২০)

আর যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মুসাফির হন এবং রোজাদার না হন, তবে সহবাসের কারণে তাদের কোনো গুনাহ হবে না, তাদের উপর কোনো কাফফারাও ওয়াজিব হবে না এবং দিনের বাকি অংশ পানাহার ও যৌনমিলন থেকে বিরত থাকাও ওয়াজিব হবে না। শুধু তাদের উভয়কে ওই দিনের রোজা কাজা করলেই হবে। যেহেতু মুসাফির অবস্থায় রোজা পালন করা, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

তবে, অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে মুসাফিরেরও রোজা রাখাই উত্তম। আবার মুসাফির রোজা রাখা শুরু করলে তা আর ভাঙা জায়েজ হবে না। কিন্তু যদি পিপাসার কারণে প্রাণনাশের আশঙ্কা হয়, তাহলে রোজা ভাঙতে পারবে, পরে তা কাজা আদায় করবে। (ফতোয়া তাতারখানিয়া: ৩/৪০৩; রদ্দুল মুখতার: ২/৪৩১)

শরিয়তে যৌন সম্পর্ক বলতে পুরুষাঙ্গের সাথে স্ত্রী-অঙ্গের মিলন বোঝায়। এখানে বীর্যপাত শর্ত নয়। এই দুই অঙ্গ সংস্পর্শে আসলেই রোজা ভেঙ্গে যাবে। এমনকি বীর্যপাত না ঘটলেও। যেহেতু নবী (স.) বলেছেন, ‘যদি খতনার স্থানদ্বয় মিলিত হয় এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ ভেতরে ডুবে যায়, তাহলে বীর্যপাত হোক বা না-হোক গোসল ফরজ হবে।’ {সুনানে আবু দাউদ-(সহিহ আবু দাউদ: ২০৯)}

আবার, কেউ যদি রোজার দিন ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তমৈথুন করে এবং বীর্য বের হয়, এতে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। যদি এ রোজাটি ফরজ রোজা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে এ রোজা কাজা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। কারণ রোজা রাখা বা রোজা না-রাখা কোনো অবস্থাতেই হস্তমৈথুন করা জায়েজ নয়। (ফতোয়া বিন বায-১৫/২৬৭)

এ প্রসঙ্গে শাইখ ইবনে উসাইমিন বলেন, ‘যদি রোজাদার ব্যক্তি হস্তমৈথুন করে এবং বীর্যপাত হয়, তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেদিন হস্তমৈথুন করেছে, তাকে সেদিনের রোজা কাজা করতে হবে। তবে, তাকে কাফফারা দিতে হবে না। কারণ কাফফারা শুধু সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে সেক্ষেত্রে ফরজ হয়। কিন্তু তাকে তার কৃতপাপের জন্য তওবা করতে হবে।’(ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৪৭৮)

উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে যদি বীর্যপাত হয়। আর যদি বীর্যপাত না হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। (শাইখ উসাইমিন ‘আল-শারহুল মুমতি- ৬/৩৮৮)

আসুন আমরা শরিয়তের বিধি বিধান মেনে চলি। রোজা রেখে দিনের বেলায় সহবাসসহ যাবতীয় যৌনাচার থেকে বিরত থাকি। শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধির মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে