Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পীর-আউলিয়াদের অনুসরণ


আগামী নিউজ | ড. নিম হাকিম প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০, ০২:৫১ পিএম
পীর-আউলিয়াদের অনুসরণ

ফাইল ছবি

১৯৯০ সালের ১৫ জুন, হুজুর আর আমি তাঁর লেখা 'নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতে মাইক ব্যবহার' বইটি আলোচনা করছি। বিদায়ের আগে হুজুর সম্পর্ক নিয়ে কথা বললেন- "বাবা আল্লাহ এবং আল্লাহর সাথে যারা সম্পর্কিত  (পীর, আউলিয়া) শুধু তাদের সাথে সম্পর্ক রাখাই যথেষ্ট"।
মোহাম্মদপুর হুজুরের মেয়ের বাসায় মৃত্যু-যন্ত্রণা নিয়ে কথা বলার সময় হুজুরের মুখে বিষাদের চিহ্ন ফুটে উঠল। আমি বললাম- পীর, আউলিয়াদের জান আযরাইল কবজ না করে আল্লাহর নাম লেখা আপেল সামনে ধারণ করে, আল্লাহর অলি আউলিয়ার রুহ তার প্রভুর সামনে দেহত্যাগ করে। হুজুর হেসে বললেন- ' আমরা কি আর অলি-আল্লাহ!'।

একদিন কথা হচ্ছিল পীরের হাতে হাত রেখে বায়াত হওয়া সম্পর্কে। হুজুর বললেন- 'বাবা হাক্কানী পীরের হাতে হাত রাখা মানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাতে হাত রাখা। কারণ পীরদের পারস্পারিক হাত শিকলের মত হয়ে সাহাবায়ে কেরাম হয়ে হযরত (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে'।

ইতঃপূর্বে হুজুর আব্দুল হক সাহেবকে মেশওয়াক আনতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, আজ মাহফিল শেষে হুজুর মেশওয়াক (ব্যবহৃত) বের করে বললেন- এটা আপনাকে হাদিয়া দিলাম। হক সাহেব লজ্জা পেয়ে গেলেন। মাফ চাইলেন এবং বললেন- 'শয়তান সব ভুলায়ে দেয়'। হুজুর বললেন- " তোমাদের কিছুই হয় নাই, যেদিন দেখবা পীর সাহেবের প্রতিটি কাজ, কথা ভুল হবে না সেদিনই কামালত। বুঝেছো বাবা?"

১৯৯০ সালের ১৮ এপ্রিল মোতাবেক ২১ রমজান। উপদেশ চাইলাম। হুজুরের অবর্তমানে সামনে চলার গাইড লাইন। বিকালে আসরের নামাজ একসঙ্গে পড়লাম। হুজুর জায়নামাজে বসেই বললেন- "আমি চার রাকাত সুন্নত পড়ে তারপর ফরজ পড়লাম। তুমি পড়লে না। এতে তোমার ক্ষতি হল। বিচারের পাল্লা কোন দিকে ভারী হবে কেউ জানে না। তাই যতদূর পার নেকী রোজগার কর। জীবনও সীমিত, সময়ও সীমিত। এ সময়ের মধ্যে যা পার পরকালের জন্য কামাই কর। এ জীবনের কোন মূল্য নাই, আসল হলো পরকালের জীবন। সেখানে সময় সীমিত নয়, জীবন অনন্ত। এখানে ভালো বা নেক কাজ করে নেকীর পাল্লা ভারী করলে সেখানে অনন্তকাল শান্তিতে থাকবে, না হলে কষ্টের কোন সীমা নাই। সেখানে অনন্তকাল কষ্টে থাকতে হতে পারে। আমি জানি না কোন পাল্লা ভারী হবে, তবে যতদূর পারি, নেকির পাল্লা ভারী করার চেষ্টা করি। জানি না কি হয়!"

মোর্তজা সাহেবের ভাই ছবক নেবেন। হুজুর বললেন, 'বসেন'। হুজুর ভেবেছিলেন তার ছয় লতীফা হয়ে গেছে, তাই তিনি বললেন- 'ছয় লতীফা করার পর হাওয়া লতীফা'। তিনি বললেন- 'বাবা আমি তো আখফা শেষ করেছি, এখন নফস'। হুজুর বললেন- 'ঠিক আছে নফসে বসেন।' ছবক শেষ হলে বললেন- "আবার নতুন ছবক নিবেন। অনেকে ছবক নিয়ে আর বলে না। তারা এভাবেই থাকে। যারা বলে ছবক নিয়েছে তারা অনেক অগ্রসর হয়েছে। সব সময় নিজে বলে ছবক নিবা। অনেকে মনে করে পীর সব জানে, তিনি ডেকেই ছবক দিবেন। এটা শেরেক। অন্তরের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না, পীর সাহেব তো দূরের কথা। স্বয়ং হুজুর (সঃ) হুদায়বিয়ার সময় সংবাদ পেলেন হযরত ওসমান (রাঃ) শহীদ হয়েছেন। তখন উপস্থিত সবাইকে বায়েত করলেন এর প্রতিশোধ নেবার জন্য, অথচ সংবাদটি ছিল ভুল। তিনি যদি সব জানতেন তাহলে বায়েত করতেন? অবশ্য তিনি অনেক জানতেন। আল্লাহ তাকে জানাতেন। এখন ভেবে দেখ পীর সাহেবদের অবস্থা! পীর সাহেব জানেন এটা কখনও মনে করবা না। আল্লাহ যতটুকু জানান মানুষ ততটুকু জানতে জানতে পারে, তার বেশি নয়"।

আগামীনিউজ/ড্যানি

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে