Dr. Neem on Daraz
Victory Day

২০ বছরে ফিলিস্তিনে সবচেয়ে বড় হামলা চালালো ইসরায়েল


আগামী নিউজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৩, ১০:০৮ এএম
২০ বছরে ফিলিস্তিনে সবচেয়ে বড় হামলা চালালো ইসরায়েল

ঢাকাঃ অধিকৃত পশ্চিম তীরে জেনিনের শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলার পাশাপাশি বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। রোববার (২ জুলাই) দিনগত রাতে শুরু হওয়া এ অভিযান গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা ও অনুপ্রবেশের ঘটনা।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর এ অভিযানে অন্তত নয় জন ফিলিস্তিনি নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, তারা ওই এলাকার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী চলমান এ হামলাটিকে ‘বিশাল সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান’ হিসেবে দাবি করেছে। তবে ফিলিস্তিনিরা দাবি করেছেন, সেখানে নৃসংসতা চালাচ্ছে তারা।

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তাদের এ অভিযান শেষ হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এটি কয়েক ঘণ্টা বা টানা কয়েক দিনও চলতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, রোববার দিনগত রাতে জেনিনের একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ১০ দফা বিমান হামলা চালায়। এ সময় তাদের একটি গাড়িবহর শিবিরটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অন্তত দেড় শতাধিক সাঁজোয়া যানে করে প্রায় দশ হাজার ইসরায়েলি সেনা শিবিরটিকে ঘিরে রেখেছিল। তাদের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছিল।

দুই দশক আগের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর জেনিন শহরে এ ধরনের বড় অভিযানের ঘটনা আর ঘটেনি। আধা বর্গকিলোমিটারের কম আয়তনের এ শিবিরে ১৮ হাজারের মতো শরণার্থী বাস করে।

জেনিনের ডেপুটি গভর্নর কামাল আবু আল-রৌব জানিয়েছেন সোমবার ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে আনুমানিক ৩,০০০ ফিলিস্তিনি জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়েছে। জেনিনের স্কুল ও অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে বাস্তুচ্যুতদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এ শিবিরটিকে ঘিরে পশ্চিম তীরে সহিংসতাও বাড়ছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত আট জনের নাম ও বয়সের তালিকা প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা হলো- নুর আল-দিন হুসাম মারশউদ (১৬), মাজদি আররাভি (১৭), আলী হানি আল-গৌল (১৭), হুসাম মোহাম্মদ আবু থিবা (১৮), আওস হানি হনউন (১৯), সামীহ ফিরাস আবু আল-ওয়াফা (২০), আহমদ মোহাম্মদ আমের (২১) ও মোহাম্মদ মুহান্নাদ আল-শামি (২৩)।

এছাড়া সোমবার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত নবম ফিলিস্তিনি ছিলেন ২১ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইমাদ হাসানিন। রামাল্লা শহরের উত্তর দিকের প্রবেশপথে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক মাহমুদ আল-সাদী বলেন, জেনিনে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। মনে হচ্ছে ভূপৃষ্ঠে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। অনেক ঘরবাড়ি বোমা হামলার শিকার হয় ও পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর এ হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের অনেকের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। জেনিন শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। পানি ও বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে, শিবিরের ভিতরে শরণার্থীদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

তিনি দাবি করেন, তার মন্ত্রণালয় স্থানীয় হাসপাতালগুলোকে এ ধরনের হামলার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত করে রেখেছিল। গত সপ্তাহে যে পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা দিয়ে তিন মাসের চিকিৎসা চালানো যাবে।

পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে গত কয়েক মাস ধরে ঘন ঘন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলিরা। তাদের দাবি, এখানে সশস্ত্র কার্যক্রম চালাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা।

২০০২ সালে দ্বিতীয় ইনতিফাদার সময়, সর্বশেষবার জেনিনে একসঙ্গে সেনা ও আকাশ শক্তি ব্যবহার করেছিল ইসরায়েল। এক সপ্তাহ ধরে চলা সেই যুদ্ধে ৫২ ফিলিস্তিনি ও ২৩ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। যার মধ্যে একটি ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১৩ ইসরায়েলির।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করে জেনিনে এ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এতে সম্মতি জানিয়েছে; কারণ তারা হামাস, প্যালিস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ এবং অন্যান্য সশস্ত্র দলগুলোর কাছ থেকে সাধারণ ইসরায়েলিদের রক্ষার বিষয়টিকে সমর্থন জানান।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে