Dr. Neem on Daraz
Victory Day

টেস্ট না করেই করোনার সনদ দিত রিজেন্ট হাসপাতাল


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২০, ১০:০৮ পিএম
টেস্ট না করেই করোনার সনদ দিত রিজেন্ট হাসপাতাল

ঢাকা : রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ৮ জনকে আটক করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা এই পরিচালনা করে। হাসপাতালটি টেস্ট না করেই কোভিড-১৯ ‘পজেটিভ’ ও ‘নেগেটিভ’ সনদ দিত বলে জানিয়েছেন অভিযানকারি দলের প্রধান।  

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ২০১৪ সালে অর্থাৎ ৬ বছর আগে হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবুও তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে কীভাবে সনদ নিয়েছে তা বোধগম্য নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
 
হাসপাতালটির উত্তরা ও মিরপুর শাখায় একযোগে অভিযান চলছে উল্লেখ করে সারোয়ার আলম বলেন, সরকারিভাবে যে টেস্টগুলো ফ্রি করার কথা সেই টেস্টের জন্য রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নিচ্ছে। সবচেয়ে জঘন্য যে কাজ করেছে, সেটা হলো টেস্ট না করে রিপোর্ট দেয়া এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সিল ও প্যাড ব্যবহার করা।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিন (নিপসম) সহ যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্যাড ও সিল তারা ব্যবহার করেছে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে সেগুলো তাদের নয়।

এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা চিকিৎসার নামে সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে, আবার রোগীদের কাছ থেকেও মোটা অংকের বিল নিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে কোভিডের বিপুল পরিমান ভুয়া সনদ জব্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, হাসপাতাল পরিচালনার লাইসেন্সের মেয়াদ ৬ বছর আগেই শেষ হয় রিজেন্টের। তারপরও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে করোনা চিকিৎসা দিতে থাকে তারা। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা চললেও রোগীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
এছাড়া করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে কেবল হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করানোর কথা থাকলেও অনুমতি ছাড়াই বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতো রিজেন্ট হাসপাতালের এজেন্টরা।

আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তিনি পরীক্ষা করাতে চান। তার পরিবারেরও কয়েকজনের একই ধরনের উপসর্গ ছিল। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত ২৭ জুন হাসপাতাল থেকে তারিক শিবলি নামে এক কর্মকর্তা  আলমের বাসায় যান নমুনা সংগ্রহ করতে। ৬ জনের নমুনা নিয়ে ফি হিসেবে সাড়ে চার হাজার টাকা করে ২৭ হাজার টাকা নেন তিনি। কোন রশিদ না দিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে আসেন শিবলী। ২৯ জুন নমুনা পরীক্ষার ফল পান সাইফুল।

রিজেন্ট হাসপাতালে  র‌্যাবের অভিযান

ই-মেইল ঠিকানায় যে রিপোর্ট দেয়া হয় সেটি ছিল রাজধানীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিউটের (আইপিএইচ) প্যাডে। ই-মেইলে নমুনা সংগ্রহের সাইট হিসেবে রিজেন্ট হাসপাতাল ও রেফার্ড বাই রিজেন্ট হাসপাতাল লেখা ছিল। নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের মধ্যে দু’জন পজিটিভ ও ৪ জন নেগেটিভ আসে। রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ জানালে ৩ জুলাই ফের তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেয়া হয়। এবার তাদের নমুনা পরীক্ষার ফল আসে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিনের (নিপসম) ওয়েবসাইটে।

তবে এবার আলমের পরিবারে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪ জন পজিটিভ ও ২ জন নেগেটিভ। আগের বারের ৪ জনেরই রিপোর্টে নেগেটিভ ছিলো। শুধু তাই নয়, নিপসমে এই ৬ জনের নমুনা সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই দেখানো হলেও ওই দিন আলম বা তার পরিবারের কারও কোনো নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেন আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের আরেকজন কর্মকর্তা। তার বাসায় গিয়ে ৮ জনের নমুনা পরীক্ষা বাবদ ৪০ হাজার টাকা ফি নেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের জনসংযোগ কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া তারিক শিবলী। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ওই কর্মকর্তাকেও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিটিউট বা আইপিএইচের প্যাডেই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়। পরে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করে জানা যায়, সেখান থেকে এমন কোনো সনদ কাউকে দেয়া হযনি। ২৩ মে তারিখের পর থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের কোনো নমুনাও পরীক্ষা করেনি জনস্বাস্থ ইনস্টিটিউট।  

অথচ তাদের ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্টের স্বাক্ষর করা করা সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ডা. মাহবুবা জামিল বলেন, আমরা এ ধরনের কোনো সনদ দেইনি। আমাদের এখানে নমুনা পরীক্ষাই করায়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছি।

অভিযানের আগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কখনো নমুনা সংগ্রহ করি না। এ বিষয়ে আমরা বারবার আমাদের ফেসবুক পেজ ও বিভিন্নভাবে সতর্ক করে আসছি। আমরা বারবার বলেছি, রিজেন্টের নামে একটি ভুয়া চক্র এ কাজ করছে। এগুলো নিয়ে আমরা প্রেস রিলিজ দিয়েছি। আর আমাদের যেসব স্যাম্পল, সেগুলো আমরা নিপসমে জমা দিয়েছি।

আগামী নিউজ/এআর/এমজামান
 

 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে