Dr. Neem on Daraz
Victory Day

স্বাস্থ্য প্রশাসনে অস্থিরতা


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২০, ০৮:৪০ এএম
স্বাস্থ্য প্রশাসনে অস্থিরতা

দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগে অস্থিরতা চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অধীনস্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রশাসন থেকে একের পর এক সিদ্ধান্ত আসছে স্বাস্থ্য বিভাগে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক বদলি ও কারণ দর্শানো নোটিস হরহামেশাই দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালগুলোকে সকালে দেওয়া নির্দেশ রাতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নানা ধরনের মন্তব্য চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে।

বিশেষ করে করোনার পর থেকে এখন অবধি বিভিন্ন কভিড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক কর্মকর্তা ও সাধারণ চিকিৎসকদের বদলি, চিকিৎসক ও নার্সদের খাবার নিয়ে অবহেলা ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণে অনিয়ম, মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থায় চিকিৎসকদের বাদ দিয়ে নন-টেকনিক্যাল সচিব ও কর্মকর্তা পদায়নসহ নানা ধরনের সিদ্ধান্তে এই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে একজন অতিরিক্ত সচিব পদপমর্যাদার এক আমলা নিয়োগ পাচ্ছেন এমন খবরে ভীষণভাবে তেতে আছেন চিকিৎসক ও চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো। এ নিয়ে গত শনিবার জরুরি বৈঠকও করেছে চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। তারা যে কোনো উপায়ে এ ধরনের নিয়োগ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

চিকিৎসকরা বলছেন, এমন অস্থিরতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণ সঠিক পথে এগোতে বাধা পাচ্ছে। এখনো করোনার গতিপ্রকৃতি বুঝতে ও সে অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে ‘প্রজেকশন মডেল’ হয়নি দেশে। সংক্রমণ  অনুপাতে পরীক্ষা বাড়ানো যাচ্ছে না। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নানা অভিযোগ বাড়ছে। লকডাউন শুরু করা যাচ্ছে না ঢাকা শহরসহ দেশের অধিকাংশ রেড জোনগুলোতে।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের এমন অস্থিরতার পেছনে তিনটি কারণ দেখছেন সরকার সমর্থিত চিকিৎসক নেতারা। তাদের মতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ব্যর্থতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

এসব চিকিৎসক নেতা স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের করোনা মোকাবিলার সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, এসব কর্মকর্তা হয় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন অথবা তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছেন না।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা স্বাস্থ্য খাতে বেশকিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, পরিবর্তনের তালিকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রয়েছেন। তবে প্রথমে মহাপরিচালককে পরিবর্তন করা হতে পারে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।

স্বাস্থ্য প্রশাসনে এই মুহূর্তে রদবদল প্রয়োজন কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সেটা সরকারই ভালো বুঝবে কাকে কোথায় দেবে। তবে এটা তো সত্য যে, তাদের সম্পর্কে যতগুলো বিষয় জনমানসে চলে এসেছে, তাদের প্রতি কিন্তু কারোরই আস্থা নেই। আস্থাহীন ব্যক্তিকে কমান্ডার হিসেবে সামনে রেখে আপনি কতটুকু ফল নিয়ে আসতে পারবেন, সেটা নিয়েও আমি সন্দিহান। এখানে যদি সিম্বল অব ডিসিপ্লিন তাদের যদি চেঞ্জ করার চিন্তা করে সরকার, আমি সেটাকে দোষের কিছু দেখি না।

স্বাস্থ্য বিভাগে সর্বশেষ এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বদলি নিয়ে তোলপাড় চলছে। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে, তাকে সরিয়ে তার স্থলে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসক নেতাসহ স্বাস্থ্য খাতে কর্মরতদের পাশাপাশি এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি সামাল দিতে না পারার দায়ে এই মহাপরিচালকের অপসারণ চাইলেও তার স্থলে কোনো আমলাকে চান না বলে জানিয়েছেন অনেকে। তারা চিকিৎসকদের মধ্য থেকেই সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কাউকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে সরকার সমর্থিত চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্বস্ত সূত্র থেকেই আমরা জানতে পারলাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে একজন আমলা বসানোর পাঁয়তারা চলছে। এটার প্রতিবাদ করে ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাসও দিয়েছি আমি। কেননা এর আগে সিএমএসডিতে এরকম ঘটনা ঘটেছে। এর আগে এইচআইভি লাইন ডিরেক্টর পদে একজন যুগ্ম সচিবকে পদায়ন করা হয়েছিল। তখন আমাদের প্রতিবাদের মুখে সে আদেশ বাতিল করা হয়। এর মধ্যেই গত শনিবার বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারলাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে একজন আমলাকে বসানোর পাঁয়তারা চলছে। তখন আমরা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে বাধ্য হলাম। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) গত শনিবার রাতে জরুরি সভা করেছে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় তাহলে বিএমএ সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার জানামতে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তবে এরকম হওয়া উচিত না। এই পদে আসীন চিকিৎসকদের মধ্য থেকেই হওয়া উচিত।

সর্বপ্রথম ‘কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে’ ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় ১১ এপ্রিল। প্রথমে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেহাব উদ্দিন। ওই দিনই সন্ধ্যায় অধিদপ্তর তাদের সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেয়। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে এই ছয় চিকিৎসক অনিচ্ছা দেখিয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন। পরে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন চিকিৎসকরা এবং অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় পরে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অধিদপ্তর।

এর আগে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবস্থান করছিলেন এমন একটি আবাসিক হোটেল থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে রাঁধুনিসহ অনেক স্টাফ পালিয়ে যান। ফলে, সেখানে অবস্থানরত ৫৬ জন চিকিৎসক খাবারের কষ্টে রীতিমতো বিপাকে পড়েন। এমনকি এখানকার চিকিৎসক ও নার্সদের খাবার ও নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া সিএমএসডির পরিচালক পদে রদবদলের ঘটনাও বেশ সমালোচিত হয়। মে মাসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে পরিচালকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয় আবু হেনা মোরশেদ জামানকে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেস্কো কমিশনে ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োজিত ছিলেন।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় বিএমএ ও স্বাচিপ। বিএমএ ও স্বাচিপ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লিখে, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে এই পদে নিয়োগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি অশনি সংকেতের ইঙ্গিত বহন করছে।’ এই পদায়ন ‘অত্যন্ত উদ্বেগের’ বলেও মন্তব্য করেন তারা।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এর জুনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে বদলি করা হয়। সেখানে আনা হয় ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আব্দুল মান্নানকে। তখন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসক নেতারা। এরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দুজন অতিরিক্ত সচিবকেও বদলি করা হয়।

একইভাবে মে মাসে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজেও কয়েক দফা কর্মকর্তাদের রদবদলের ঘটনা ঘটে। প্রথমে পরিচালক শহিদ মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলামকে বদলি করা হয়। এরপর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক করা হয় ওই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবীকে। এক মাস পর তাকেসহ চার চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি করা হয়। পরে ডা. রওশন আনোয়ারকে নতুন পরিচালক করা হয়। তিনি যোগ দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অদ্যাবধি তিনি ছুটিতে আছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আবুল হাশেম পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডি ছিলেন। করোনা শুরুর এক মাস আগে এসেছেন। চিকিৎসকরা জানান, এই ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নামেমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন। তার প্রশাসনিক কোনো সক্ষমতা নেই।

স্বাস্থ্য বিভাগে এমনটা কেন হচ্ছে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং এদের অধীনস্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করছে। এর ফলে রোগী ও চিকিৎসকসহ মানুষের যে ভোগান্তি থেকে সেটা আড়াল করতে একের পর এক নানা ধরনের কান্ড করছে। এটা কখনোই কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এই চিকিৎসক নেতা বলেন, করোনাকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেন সঠিক পথে থাকে, সে জন্য বারবার তাদের অনুরোধ করছি। পরামর্শ দিচ্ছি। তারাও প্রায়ই ট্র্যাক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। মানহীন জিনিসপত্র সরবরাহ করছে। বারবার আমরা সেগুলোতে নজর দিচ্ছি। কথা বলছি। আবার সেগুলো ঠিক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কমেন্ট করলেন। তারপর তারা একটু নড়েচড়ে বসলেন। তারপরও তো জিনিসগুলো থেমে নেই। আমাদের মনে হচ্ছে যে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে যেন কী একটা অস্থিরতা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এখান থেকে কেউ চলে গেলে সব থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে। সে জন্য একটা রাখঢাক ব্যাপার, কেউ যেন সরে না যায়, সবাই যেন থাকে। তারপরও তো পারল না। সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিল। সচিব, যুগ্ম সচিব গেল। সরকার নিশ্চয় সেখানে কিছু একটা পেয়েছে বা তাদের মনেও এক ধরনের প্রশ্ন এসেছে এরা থাকলে এখানে কোনো কাজ হবে না। আমরা আশা করছি আরও স্টেপ আসবে, যাতে আমরা এই সংকট ভালোমতো সামাল দিয়ে উঠতে পারি। এমনিতেই যা হয়েছে সেটা হয়েই গেছে, এখন যেন আমরা ভালোমতো এগিয়ে যেতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যাপারে এই চিকিৎসক নেতার অভিমত, এখানে সঠিক পদে সঠিক লোকটা নেই। তার লক্ষ্য কী সরকারকে বিব্রত করা, নাকি করোনা জয় করা। যদি করোনা জয় করা লক্ষ্য হতো, তাহলে শুরু থেকেই ওইদিকে গেলেন না কেন। কেন করোনা মহামারীর গভীরতা বুঝলেন না। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করলেন না কেন। বিশেষজ্ঞরাও বারবার বলেছেন, উনি তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন না। টেকনিক্যাল কমিটিও বলেছে, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না।

চিকিৎসকরা জানান, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্ল্যান করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চান  এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। কারণ পরবর্তী পর্যায়ে তার যে রাজনৈতিক পরিচয় বেরিয়ে গেল, সেটা সত্য হয়ে থাকলে, তো বিপদ। প্রথম দিকে যে ডাক্তার বদলি ও শোকজের ঘটনার মধ্য দিয়ে অধিদপ্তর মূল জায়গা থেকে দৃষ্টি আড়াল করার চেষ্টা করেছে। আরেকটা জিনিস, সবাইকে বার্তা দেওয়া আমরা কিন্তু অনেক শক্তিশালী। কথা বলবে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। সবাই চুপ থাকবে। তারা তাদের যা ইচ্ছা করে যাবে।

বিএমএ মহাসচিব বলেন, আমরা সব সময় বলি এবং আমাদের দাবিও সুষ্ঠু পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয়। যে মন্ত্রণালয়গুলো টেকনিক্যাল মন্ত্রণালয়, সেখানে সচিব হবেন সংশ্লিষ্ট পেশার টেকনিক্যাল পার্সন। সারা পৃথিবীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ডাক্তার, মন্ত্রী ডাক্তার। এগুলো টেকনিক্যাল মিনিস্ট্রি। টেকনিক্যাল লোকজন দিতে হবে।

চিকিৎসকরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগকে যত না সময় দিতে দেখা গেছে, তার চেয়ে বেশি সময় কাটছে নানা ধরনের ভুল ও বিতর্কিত নির্দেশ-আদেশ দিতে এবং এসব নিয়ে স্বাস্থ্য প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা লেগেই রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএমএ মহাসচিব বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার বিষয়ে ধারণায় ফাঁক ছিল। তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেনি। অথবা তারা উদাসীন ছিল। করোনা যখন দেশে এলো, তখন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে একটা রূপরেখা প্রণয়ন করা উচিত ছিল। সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা নিজেদের মতো করে সব করেছে। তারা চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রীতে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে।

মহাসচিব বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রত্যেকটা বিষয়ে তারা উদাসীন ছিল। যথাযথ ভূমিকা ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন পদক্ষেপ নিতে শুরু করলেন। তারপর কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করল। চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পেতে শুরু করলাম। হাসপাতালে চিকিৎসকরা কীভাবে কাজ করবেন, সে নির্দেশনা গেল। প্রাইভেট হাসপাতালগুলো তো প্রথমে জিরোতে ছিল, প্রধানমন্ত্রী বলার পরে তারা কাজ শুরু করল। অন্যান্য হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। আইসিইউ বিভিন্ন জায়গায় শুরু হলো। টেস্টিং বাড়ল। সবগুলোর উন্নতিই শেষের দিকে হলো।

মহাসচিব বলেন, এখনো কিন্তু তাদের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। যা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরাসরি হস্তক্ষেপে হচ্ছে। ফ্রন্ট লাইনে থেকে সক্রিয়ভাবে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা এখনো তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। টেকনিক্যাল কমিটির বিশেষজ্ঞরা এখনো বলছেন যে তাদের পরামর্শগুলো তারা সঠিকভাবে আমলে নিচ্ছেন না। তাদের পরামর্শ যথেষ্টভাবে বাস্তবায়ন করছেন না।

এখন করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু একটা ভালোর দিকে যাচ্ছি। করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা মানুষ বুঝে গেছে। লকডাউন হচ্ছে। পরীক্ষা বেড়েছে। আইসোলেশন হচ্ছে।

অস্থিরতার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগে সমন্বয়হীনতার কথা বলেন স্বচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার সময় কিছু কিছু প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পর্যালোচনা না করে। সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, সেই প্রজ্ঞাপনগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

এই চিকিৎসক নেতা বলেন, আমরা সব সময় দেখি, দেশের সব সার্ভিস সেক্টরে আমলারা আমলাতান্ত্রিক খবরদারি সবসময় করার চেষ্টা করেছেন এবং সব পর্যায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। সেখান থেকে আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, যে পেশাই হোক, সেই পেশার ওপর আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ ও খবরদারি, সেটা আমাদের বিচলিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ করে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে কেন জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, করোনার নিয়ন্ত্রণে প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো মানসিক প্রস্তুতি ছিল না। সে কারণেই এসব ঘটনা ঘটেছে। (খবর: দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২৯ জুন,২০২০) 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে