Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনাতেও থেমে নেই চাঁদাবাজি


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২০, ০৯:০১ এএম
করোনাতেও থেমে নেই চাঁদাবাজি

করোনার মহামারীতেও ঘটছে চাঁদাবাজি। মামলা ও গ্রেপ্তারও হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে বের হচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিছুতেই যেন দমছে না চাঁদাবাজরা। এ নিয়ে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। জানা গেছে, বিদেশে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামেই মোবাইলে চাঁদা বেশি ওঠানো হচ্ছে। ওই সন্ত্রাসীদের দেশে থাকা সহযোগীদের দিয়ে আদায় করা হচ্ছে দাবিকৃত চাঁদা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার পরিস্থিতিতে চাঁদাবাজির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা বৈঠক করছেন। কিছুদিন আগে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে পরিবহন নেতাদের বৈঠক হয়েছে। এরপর আইজিপির নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব বিশেষ অভিযানও চালাচ্ছে। গত এক মাসে ১২০ চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরা সম্ভব হয়নি। চাঁদাবাজির ঘটনায় সম্প্রতি মিরপুর, বাড্ডা, খিলগাঁও, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ৫১টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোন পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের পর মনে করা হয়েছিল মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি বন্ধ হবে। কিন্তু তা হয়নি। মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবিসহ নানা হুমকি পাচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। আবার অনেকে ভয়ে থানায় অভিযোগও করেন না।

পুলিশ সদর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, মোবাইল ট্র্যাকিং আর মোবাইল ফোন অপারেটরদের সহযোগিতা নিয়ে  হুমকিদাতাদের ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি চাঁদাবাজদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে তা সত্য। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা বেশি ওঠানো হচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন দেশের বাইরে পালিয়ে আছে। তবে তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা দেশে থেকেই চাঁদাবাজি করছে। অনেক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ করছে। এতে দেখা গেছে ব্যবসায়ী ও পরিবহন ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের খপ্পরে পড়ছেন। তবে আমরাও পিছিয়ে নেই। চাঁদাবাজদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত ডিএমপিতে চাঁদাবাজির তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেউ যদি অভিযোগ করেন, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে গত ২৫ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে রাজধানীতে আলোচনার বিষয় ছিল ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ও সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তার। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকা ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, এনামুল হক এনু, রূপন ভূঁইয়া ও শফিকুল আলম ফিরোজ। তাদের গ্রেপ্তারের রেশ ধরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া।

পুলিশ সূত্র জানায়, করোনা প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের মধ্যে খিলগাঁও এলাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কেব্ল ব্যবসায়ী শাহজালালের কাছে ক্যাসিনোর গডফাদার খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ডান হাত বলে পরিচিত শাহাদত হোসেন সাধু চাঁদা দাবি করে। শাহজালালের কাছে বেশ কয়েকবার ফোন করে চাঁদা দাবি করে সাধু। এ অভিযোগে শাহজালাল গত ১১ মে খিলগাঁও থানায় সাধু, রকি, রিয়াদ ও সোহেল ব্যাপারী এবং অজ্ঞাত তিন-চারজনকে আসামি করে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে রকি ও সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য অঙ্কুরের নাম উঠে আসে। অঙ্কুর গোপীবাগ এলাকার চাঁদাবাজ। পরে সবুজবাগ থানা পুলিশ ৮ জুন অঙ্কুরকে গ্রেপ্তার করে।

ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইলিয়াস হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা মিলেছে। তবে এই গ্রুপের গডফাদার সাধু এখনো পলাতক। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকার শীর্ষ চাঁদাবাজ হাবিবুর রহমান ওরফে টাইগার হাবিবকে ১৫ জুন আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। টাইগার হাবিবের বিরুদ্ধে পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় কাপড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এর আগে টাইগার হাবিবের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগে ১৫টি মামলা রয়েছে। ২০০৬ সালে কেরানীগঞ্জে চাঁদাবাজির সময় পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয় টাইগার হাবিব। তার বড় ভাই বুদ্দা পিচ্চি ও ছোট ভাই মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে পুরান ঢাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও আন্ডারওয়ার্ল্ডের চাঁদাবাজির থাবা পড়েছে। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে পরিবহন ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। টাইগার হাবিবকে ২০০৪ সালের জুন মাসে অস্ত্র, দুই রাউন্ডগুলিসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জামিনে বের হয়ে আবারও একই অপকর্ম করে আসছিল। ২০০৫ সালের ২৪ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া আল্লাহর দান কমিউনিটি সেন্টারের নিচে রড-সিমেন্টের দোকানে চাঁদাবাজির সময় তাকে আবারও ধরা হয়। পুরান ঢাকার বাবুবাজার, ইসলামপুর, বাদামতলী এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে টাইগার হাবিব ও তার সহযোগীরা। একসময় সে ডাকাত শহীদের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিল। সম্প্রতি টাইগার হাবিব গ্রেপ্তার হলেও তার সহযোগী শাহীন, খায়রুদ্দিন, রেজাউল, নবাববাড়ীর মোটা কামাল, এরফান, মমিন, লালবাগের কালা সাঈদ, স্যুটকেস হান্নান চাঁদাবাজি করছে। কালাম, মোহাম্মদ আলী, জালাল, দেলোয়ার, মুশফিকুল, জাহাঙ্গীর, হান্নান, মুকুল, রেজাউল, বাচ্চু, মোস্তফা, সেলিমসহ অর্ধশত চাঁদাবাজ সায়েদাবাদে সক্রিয় আছে। এরা বিভিন্ন পরিবহন ও শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি করে। মহাখালী বাস টার্মিনাল ও গাবতলী বাস টার্মিনালের পরিবহন ব্যবসায়ীরাও এই চাঁদাবাজির শিকার। মুন্নি আক্তার নিপা নামের এক নারীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি চাঁদাবাজ গ্রুপ সক্রিয় আছে কাফরুল এলাকায়। মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় বাবু ও কাশেম গ্রুপ, কাফরুলে ভাগিনা লিটন, যুবায়ের হেলাল, গফুর, শাহীন ও ল্যাংড়া মনির; রমনা, মগবাজার, ইস্কাটন, বাংলামোটর, মৌচাক ও মধুবাগে মুরাদ, কাটা দিদার, সোর্স দেলোয়ার, কালা শাহীন, ফরহাদ, মিন্টু, দেলু, সুমন, মাসুদ, বাবুল ও খালেক; গাবতলীতে রাসেল, কাশেম ও হানিফ; মিরপুরে দেলোয়ার, ইজাব, মামুন রাসেল, হুমায়ুন, খোকন; পল্লবীতে বিহারি চান গ্রুপ এখনো সক্রিয় আছে।

ডিএমপি পুলিশের এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, মগবাজারের সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, জুরাইনের কাইল্লা আমির, গেণ্ডারিয়ার ইমন, রামপুরার ঈশান ও জিসান, মগবাজারের রনি, বাড্ডার শাহজাদা, বিজয়নগর-পল্টনের মোহাম্মদ, কোতোয়ালিতে ইমু বাহিনীর নামে বেশি চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। তারা মোবাইল ফোনে চাঁদা বেশি দাবি করছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু ফোনকল আসছে বলে তথ্য এসেছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরও মোবাইল ফোনে সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে, তা সত্য। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। ফোনে আসা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতে স্পুফিং প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে। (খবর : দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২১ জুন,২০২০)

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে