Dr. Neem on Daraz
Victory Day

স্বাস্থ্যবিধি প্রশিক্ষণ ছাড়াই চালু হচ্ছে গণপরিবহন


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২০, ০৮:৫৮ এএম
স্বাস্থ্যবিধি প্রশিক্ষণ ছাড়াই চালু হচ্ছে গণপরিবহন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশে ‘সীমিত পরিসরে’ গণপরিবহন চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। আগামীকাল রবিবার থেকে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও সিটি সার্ভিস ও দূরপাল্লার বাস চালু হবে সোমবার। তাই শেষ মুহূর্তে রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে গাড়ি ধোয়ামোছা ও মেরামতের কাজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা না গেলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। তবে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন যাত্রী, শ্রমিক ও মালিকদের অনেকেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাদের অনেকেরই এ সম্পর্কে নেই স্বচ্ছ ধারণা। এছাড়া যানবাহন ও টার্মিনালগুলো জীবাণুমুক্ত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই।

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে বাসশ্রমিকদের পরিষ্কার ধারণা নেই। তাদের জীবাণুনাশক সরঞ্জাম, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে শ্রমিকদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।’

তিনি আরও বলেন, “রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ রুটে বাসগুলো চলে ‘চুক্তিভিত্তিক’। তার ওপর সড়কে চাঁদা, সেতু ও সড়কের টোল, চালক-শ্রমিকদের থাকা-খাওয়া খরচ, বেতন ইত্যাদির জন্য তাদের অধিক যাত্রী তুলতে হয় এবং অধিক ট্রিপ দিতে হয়। তার জন্য শ্রমিকরা নামে ভয়ংকর প্রতিযোগিতায়। দীর্ঘ দুই মাস লকডাউনের কারণে তারা আছেন চরম আর্থিক সংকট ও কষ্টে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি বা মানুষের জীবনের চাইতে তারা রোজগার বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ বেশি দেবে, এটাই স্বাভাবিক। এহেন পরিস্থিতিতে নিয়ম-কানুনের কথা বলা, স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা তাদের কাছে ‘মনীষীর বাণী’র মতোই শোনাবে। সেটা প্রতিপালন হবে না। তাছাড়া শ্রমিকদের কাছে যেহেতু স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো পরিষ্কার নয় বা পরিষ্কার ধারণা নেই, তাই এজন্য তাদের রাস্তায় জরিমানা করা, মামলা দেওয়া হবে আরেক ধরনের গণহয়রানি ও গণঅন্যায়।”

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিটি বড় বাসের ২০টি সিট ও ছোট বাসের ১০ সিট খালি হিসাব করে ভাড়া নির্ধারণ করা থাকে। তাই বাড়তি ভাড়া না নিয়ে বরং আরও ভাড়া কমিয়ে গণপরিবহন চালানো যায়।’ এ ক্ষেত্রে তেলের দাম কমানো, রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ ও ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিবর্তে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্যবিধি মেনের চলার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে গণপরিবহন চালানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।

মহাখালী বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাদেকুর রহমান ওরফে হিরু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৪০ সিটের বাসে ২০ জন যাত্রী তোলা যাবে বলে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাসের ভাড়া কী হবে, সেজন্য শনিবার (আজ) বাসমালিকদের বৈঠক হবে। সেখানে নতুন ভাড়া নির্ধারিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভাড়া যাই হোক, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য চালক, শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা জরুরি। গাড়ির চালক-শ্রমিকদের মানসম্মত মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার দিতে হবে। কারণ বাসে ২০ জন যাত্রীর একজনও করোনায় আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে অন্যসব যাত্রী আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাসমালিকদের উচিত টার্মিনাল বা সুবিধামতো জায়গায় আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা। যাতে কোনো শ্রমিকের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তিনি আইসোলেশনে বা কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারেন। সেটা করা না গেলে ওই শ্রমিক নিজ বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন আক্রান্ত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের জীবাণুমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। টার্মিনালগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটানো জরুরি। যাতে শ্রমিক ও যাত্রীরা নিরাপদ হতে পারেন। তাছাড়া শ্রমিকদের কোনো ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। আমরা প্রস্তাব করেছি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হওয়ার পরও আমরা কেউ কোনো প্রণোদনা পাইনি। আমলাতান্ত্রিকতার কারণে হয়নি। ফলে আমাদের ৭০ লাখ শ্রমিক কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি। এখন প্রধানমন্ত্রীর থোক বরাদ্দ থেকে টার্মিনাল ও বাসগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করা হোক।’

শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হিরু আরও বলেন, ‘যাত্রীরা যারা আছেন তাদেরও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। গাড়িতে কী সুবিধা ভোগ করবেন, কোনটা স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন সেটাও যাত্রীদের জানা জরুরি।’

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গাড়ি চলবে সীমিত পরিসরে। যদি ২০ বা ৩০ শতাংশ গাড়ি চলে, তাহলে আরও ৭০ শতাংশ শ্রমিকের কী হবে? এত গাড়ির মধ্যে কোনটা চলবে, কোনটা চলবে না এ নিয়ে তো মারামারি লাগবে। তাই এ সংক্রান্ত নীতিমালা হওয়া জরুরি। এটা সম্ভব না হলে গণপরিবহন চালু করা নিয়ে এ সেক্টরে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য টার্মিনাল ও বিভিন্ন রুটের চালক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী যাত্রীদের সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। চালক ও হেলপাররা মাস্ক পরবেন, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন। দূরপাল্লার বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব। তবে সিটি সার্ভিসের বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কতটুকু সম্ভব, এটা নিয়ে আমার শঙ্কা আছে। তারপরও যতটুকু সম্ভব আমাদের মেনে চলতে হবে। কেউ যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেটা দেখবে। মালিকদের আমরা বলেছি বাসচালক ও শ্রমিকদের জন্য মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সীমিত আকার বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছে সেটা এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। সেটা নিয়ে আজ শনিবার সভা হবে। সেখানে জানা যাবে।’

এ সম্পর্কে লঞ্চমালিক প্রিন্স আওলাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় লঞ্চ ও যাদের অধিকসংখ্যক কেবিন আছে তারা হয়তো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কেবিনে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। কিন্তু মাঝারি ও ছোট লঞ্চগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আগে যে লঞ্চে ৫০০ যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে এখন আগের ভাড়াতেই ১০০ থেকে ১৫০ যাত্রী পরিবহন করতে হবে। এটা মেনে কোনো মালিক লঞ্চ চালাতে পারলে চালাবে না হলে চালাবে না। তবে আমরা চেষ্টা করব যাতে যাত্রীরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে। বিশেষ করে ডেকে এবং লঞ্চঘাটে নামার সময় বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে।’

এদিকে নৌপথে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ১৪টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি মানসম্মত করা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জ্ঞান থাকা; মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুমুক্তকরণ দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত মজুদ রাখা; টার্মিনালে আসা ও বের হওয়া যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য তাপমাত্রা নির্ধারকযন্ত্র স্থাপন করা; যেসব যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৩ সেলসিয়াস বা ৯৯+ ফারেনহাইটের ওপরে থাকবে তাদের ভ্রমণ করতে না দেওয়া; নৌযানে হাতে ধরা থার্মোমিটার রাখা এবং যথাযথ স্থানে একটি জরুরি এলাকা স্থাপন করা এবং যাত্রীদের অনলাইনে টিকিট ক্রয় করা ইত্যাদি। (খবর: দৈনিক দেশ রূপান্তর, ৩০ মে, ২০২০)

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে