Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সংকটকালীন তহবিল গঠন করা জরুরি:ড. আতিউর রহমান


আগামী নিউজ | বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২০, ০৪:২১ এএম
সংকটকালীন তহবিল গঠন করা জরুরি:ড. আতিউর রহমান

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এখনকার সংকটটাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবতে হবে। আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন খাদ্য ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষা। এজন্য সরকারের উচিত হবে ছোট-বড় ব্যবসায়ী, কৃষক, দিনমজুর, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, চাকরিজীবীসহ সব শ্রেণির মানুষকে সহায়তা দিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংকটকালীন তহবিল গঠন করা। আমেরিকা ইতিমধ্যে সে কাজটিই করেছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে একটি রি-ফাইন্যান্সিং ফান্ড গঠন করে সেখান থেকে মানুষকে সহায়তা করা যেতে পারে। রি-ফাইন্যান্সিং তহবিল গঠনের জন্য সরকার চাইলে বন্ড ইস্যু করতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক এই গভর্নর বলেন, এখন সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষ। নগরের শ্রমিক। নগরের দিনমজুর। কারণ ফ্ল্যাটবন্দী জীবনে মানুষ একে অন্যের খোঁজ নেওয়ার সুযোগ পায় না। তবে গ্রামের অবস্থা ভিন্ন। গ্রামে একে অন্যের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ায়। যে কোনো ধরনের সংকটে গ্রামের মানুষ একে অন্যের পাশে ছুটে যায়। ফলে এই শ্রেণির মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সংকটকালীন খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

ড. আতিউর রহমান বলেন, নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তরা এখনো জমানো খাবার খেতে পারছে। জমানো অর্থ খরচ করতে পারছে। আর কদিন পর তারাও সংকটে পড়বে। তাদের জন্যও এখনই ভাবতে হবে। সামনের দিনের জন্য সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে। সামাজিক সংকট একবার তৈরি হলে সেটা কাটাতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। আর সামাজিক সংকট যে কোনো দেশের বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ফলে সামনের দিনগুলোয় যেন কোনোভাবেই সামাজিক সংকট তৈরি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। এজন্য সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যত বেশি বেশি সম্ভব করোনা টেস্ট করতে হবে। যারা ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গে ভুগছেন তাদের টেস্টকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু সরকারের একার নয়, বিভিন্ন ধনাঢ্যশালী, বণিক শ্রেণিসহ হাসপাতালের মালিকদেরও দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের মতো যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের মতো অন্য ব্যবসায়ীদের গ্রুপগুলোকেও সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি খাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামক গার্মেন্টস খাতের জন্য ইতিমধ্যে সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য দেশে করোনা মোকাবিলার জন্য যেসব পণ্য যেমন পিপিই কিংবা হ্যান্ডস গ্লাভস ও স্যানিটাইজার এসব পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। কেননা করোনাকালীন অবস্থায় যেহেতু আমাদের পোশাক খাতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সেটা পুষিয়ে নিতে বিকল্প পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চীন অনেকটাই সামলে নিয়েছে। তারা আবার নতুন করে উৎপাদনে যেতে শুরু করছে। সেখান থেকেও কাঁচামাল আমদানি শুরু করা সম্ভব হবে। তবে এখন সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে মানুষের বাঁচা-মরার সংকট। তাই সবার আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এসএমই খাতের ব্যবসায়ী, কৃষক যারা গরু পালন করেন, মাছ চাষ করেন। অর্থাৎ খামার বা ছোট শিল্পভিত্তিক কৃষিকাজে যারা জড়িত তাদের জন্য একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া এ খাতের উদ্যোক্তাদের নেওয়া ব্যাংক ঋণের সুদ কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বড় শিল্পের মালিকরা তো পার পেয়ে যাবেন। তারা সরকারের সহায়তাও পাবেন। তবে এই ছোটদের ইগনোর বা উপেক্ষা করা যাবে না। এদের কথাই আগে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে ভোক্তা ঋণ, যেমন কেউ হয়তো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটি বাড়ি বানিয়েছেন কেউ আবার একটা জমি কিনেছেন সেখানে কারখানা করবেন। আবার কেউ অন্য কোনো অ্যাসেট বা সম্পত্তি কিনেছেন। এদের ব্যাপারেও সরকারের সহায়তা থাকা দরকার। কেননা এটা এমন একটা সমস্যা যা সব শ্রেণির মানুষকে চরম সংকটে ফেলেছে। ফলে এখান থেকে বের হতে হলে সরবার জন্যই কিছু না কিছু করতে হবে। এই সময়ে মানুষের হাতে টাকাপয়সা কম সঞ্চারিত হচ্ছে। কেননা শুধু খাবার কিংবা স্বাস্থ্যসেবার বাইরে কেউ কোনো কেনাকাটা করছে না। ফলে সামনের দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতির চাপ কম থাকবে। ফলে সরকার এ সময় মানুষের হাতে বিভিন্ন পন্থায় টাকা আসার সুযোগ করে দিলে কিংবা নীতিসহায়তা দিলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ারও তেমন কোনো আশঙ্কা থাকবে না বলে তিনি মনে করেন। ড. আতিউর বলেন, আগামী দিনের সংকট বলতে সারা বিশ্ব কিন্তু একটা মহামন্দার দিকে ঢুকে গেছে। চীনের সংকট হয়তো অনেকটাই কেটে গেছে। কিন্তু অন্য সব দেশ এখন মানুষকে বাঁচাতে যুদ্ধ করছে। এ অবস্থায় আমাদের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় মার্কেট ইউরোপ-আমেরিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের অর্ডারগুলো বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আগামী তিন মাস যেন কোনো খাতের কোনো একজন কর্মীরও চাকরি না যায় সে ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এজন্যই সরকারের উচিত হবে একটি সংকটকালীন তহবিল গঠন করে সবাইকে সহায়তা করা।

আগামী নিউজ/নাঈম
 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে