Dr. Neem on Daraz
Victory Day

লতিরাজ কচুই ভাগ্য বদলাচ্ছে জয়পুরহাটের কৃষকদের


আগামী নিউজ | শেরপুর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২১, ০৬:২৬ পিএম
লতিরাজ কচুই ভাগ্য বদলাচ্ছে জয়পুরহাটের কৃষকদের

ছবিঃ আগামী নিউজ

জয়পুরহাটঃ লতিরাজ কচুই কৃষকদের ভাগ্য বদলাচ্ছে । খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে লতিরাজ কচু চাষ করে। বছরের প্রায় দশ মাসই উৎপাদন হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় কৃষকদের আগ্রহ বেশি লতিরাজ কচু চাষে। ফলে জেলায় দিন দিন বাড়ছে লতিরাজ কচুর চাষ। উৎপাদন বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে আমদানি হওয়া হাজার হাজার মেট্রিক টন লতিরাজ কচু এখন রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ সহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, রোপা আমন ধান কাটার পর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী এবং এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত দুই মৌসুমে লতিরাজ কচু চাষ হয়। এটি দুই ভাবে রোপন করা যায়। একটি হলো চারার মাধ্যমে অন্যটি কান্ডের মাধ্যমে। কান্ড রোপনের এক মাস পর আর চারা রোপন করার আড়াই থেকে তিন মাস পর লতিরাজ কচু উৎপাদন শুরু হয়। একবিঘা জমিতে লতিরাজ কচু চাষ করতে চারা, কীটনাশক, সার, শ্রমিক ও অন্যান্য সহ খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। পুরো মৌসুমে প্রতি বিঘায় কচুর লতি উৎপাদন হয় ৭৫ থেকে ৮০ মণ। আর কান্ড উৎপাদন হয় ২৬০ থেকে ২৭০ মন। বাজারে প্রতিমন লতি সাত’শ থেকে সাড়ে সাত’শ টাকা এবং কান্ড প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা মণ দরে। সে হিসেবে একবিঘা জমির লতি ও কান্ড বিক্রি হয় প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের লাভ থাকে ৩৫ হাজার টাকা।

জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পাটাবুকা গ্রামের ভুমিহীন কৃষক আমির আলি প্রায় ৩০ বছর আগে জেলায় প্রথম চাষ শুরু করেছিলেন সাদা জাতের লতিরাজ কচু। যেগুলো ছিল লম্বা এবং সাইজে মোটা। সামান্য কয়েকটি লতিতেই এক কেজি হয়। এতে ভাল লাভ হওয়ায় দ্রুত দৃষ্টি কাড়ে অন্য কৃষকদের। বছরের প্রায় দশ মাসই এর উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি স্বাদে এবং পুষ্টিতে সেরা হওয়ায় খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয় কচুর লতি। দশ বছর আগে কৃষক আমির আলি মারা গেলেও জেলায় তার উদ্ভাবিত কচুর লতি কৃষকদের দারিদ্রতাকে জয় করেছে। কচুর লতি স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় জেলায় বর্তমানে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে জেলায় সাড়ে দশ হাজার হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হলেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চাষ হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর। যা থেকে লতি উৎপাদন হয়েছে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর সবে মাত্র চাষ শুরু হয়েছে। সুত্রটি জানিয়েছে ২১শে মার্চ পর্যন্ত ৯৫০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে লাভ বেশি পাওয়ায় এবারও জেলায় কচু চাষ বৃদ্ধি পাবে।  

জয়পুরহাটের কয়েকজন কৃষক আগামী নিউজকে বলেন,‘লতির চাষ ভাল হলেও স্থায়ী বাজার না থাকায় তারা নায্য মূল্য পাচ্ছেন না। পাঁচবিবির বটতলিই তাদের একমাত্র বাজার। যেখানে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তোলার কারণে কম মূল্যে তারা লতি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রশাসনিক নজরদারির মাধ্যমে লতির নায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বটতলি বাজারের লতির বড় ব্যবসায়ী শাহজাহান দেওয়ান বাবু বলেন, ‘কৃষকদের ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন,‘কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন পাঁচবিবির বটতলি বাজারে আমরা ৪০ জন ব্যবসায়ী লতি কিনছি। ট্রাকে ট্রাকে লতি আমরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠাচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত  বাজারের স্থায়ী জায়গা মেলেনি। ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, ‘এই বাজার থেকে কচুর লতি কুয়েত ও সৌদিআরব সহ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ এর ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যে গুলো বাছাই প্রক্রিয়ার সাথে তিন শতাধিক শ্রমিক জড়িত আছে। এতে এলাকার বেশকিছু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারপরও বাজারের স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করতে কেউ সহযোগীতা করছেন না। প্রয়োজনের তাগিদে জায়গা ভাড়া নিয়ে আমরা ব্যবসা করছি।

জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের পুষ্টিবিদ কচুর লতি সম্পর্কে আগামী নিউজকে বলেন,‘কচুর লতিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এতে আঁশের পরিমাণ বেশি। যা হজমে সাহায্য করে,পুরাতন কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে এবং বড় অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারি পথ্য হিসেবে কাজ করে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা বিনা সংকোচে খেতে পারেন এ সবজি। মোট কথা কচুর লতি ও কচুর পাতা সুস্থ্য এবং অসুস্থ্য সব মানুষের শরীরের জন্যই খুব উপকারি।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে