Dr. Neem on Daraz
Victory Day

দুপচাঁচিয়ায় ধানকাটা কে ঘিরে কর্মব্যস্ত কামারশালা


আগামী নিউজ | দেওয়ান পলাশ, দুপচাঁচিয়া ( বগুড়া) প্রতিনিধি : প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২১, ০৪:০০ পিএম আপডেট: এপ্রিল ৩০, ২০২১, ০৪:১৩ পিএম দুপচাঁচিয়ায় ধানকাটা কে ঘিরে কর্মব্যস্ত কামারশালা

বগুড়াঃ এক সময় কর্মমুখর থাকতো কামার পাড়া।  হাতুড়ির টুং টাং শব্দ শোনা যেত সকাল থেকে রাত অবধি। ছোট পিড়িতে বসে হাপরে বাতাস ঢুকানো এবং বের করার জন্য শিকল টানত কামার। হাপরের বাতাসে  জ্বেলে ওঠা কয়লার আগুনে গরম করা হত লোহা।

সেই উত্তপ্ত লাল আভাযুক্ত লোহাকে একহাতে বেড়ি দিয়ে আটকিয়ে ছোট ইস্পাতের পাতাটনের উপর রেখে দু'পাশ থেকে দুজন কামার প্রয়োজনমাফিক হাতুড়ী চালনা করত। পরে সেই গরম লোহা চাহিদামত আকৃতি ধারন করলে কামারশালায় পুতেঁ রাখা মাটির ধারকে  (চারি) জমে রাখা পানিতে ডুবিয়ে শীতল করে নিত।

কামারশালার এমন দৃশ্যগুলো আর সহজে চোখে পড়ে না। কামারশালা এখন বিলুপ্তির পথে। তবে বাপ দাদার পেশা ছাড়তে পারেনি এখনও মুষ্টিমেয় কামার। অন্য পেশায় আয় রোজগারের ভাল সুযোগ থাকলেও কেবল বংশীয়ধারায় পাওয়া পেশা কে আঁকড়ে ধরে আছে তারা।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় কোনরকমে অস্তিত্ব টিকে আছে এমন কামারশালাগুলো ধানকাটা কে ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। কৃষকরা এবং শ্রমিকরা সকাল সন্ধ্যা ছুটে আসছে ধানকাটার জন্য কাস্তে তৈরি করে নিতে। কেউবা আসছে  তাদের পুরানো কাস্তে শান দিয়ে নিতে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আমশট্ট এবং তালোড়া ইউনিয়নের কইল গ্রামে শতাধিক বছরের ঐতিহ্য হিসাবে কামারদের বসবাস। তাছাড়া দুপচাঁচিয়া সদর ইউনিয়নে অল্পবিস্তর কামার বসবাস করে। বর্তমানে বেশিরভাগ কামার তাদের পেশা ছেড়েছে।

আমশট্ট গ্রামের কামার অমল চন্দ্র জানায়, কামারশালায় এখন  ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। কৃষক ও শ্রমিকরা ধানকাটার জন্য কাস্তে তৈরি করে নিচ্ছে। প্রতি পিস কাস্তে তৈরির মজুরী ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া পুরানো কাস্তে শান দিয়ে নেবার জন্য মজুরি ৩০ টাকা।

কামার জয়দেব জানায়, চাহিদার কারনে তারা উপজেলার বিভিন্ন হাটেও অস্থায়ী কামারশালা বসিয়ে কাস্তে তৈরি এবং শান দেওয়ার কাজ করছে। তাছাড়া বৈশাখী ঝড়ের মোকাবেলায় গ্রাম এলাকার লোকজন নতুন করে ঘরের ছাউনি মেরামত করার জন্য কিছু সরঞ্জামাদির অর্ডার দেওয়ার ফলেও কর্মব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাদের।

কামারশিল্প ধ্বংসের কারন জানতে চাইলে কয়েকজন কামার জানায়, আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ওইসব সরঞ্জামাদি দেশীয় কামারী সরঞ্জামাদির তুলনায় কম দামে বাজারজাত করা হচ্ছে। কাজেই কমদাম এবং সহজলভ্যতার কাছে কিছুতেই টিকতে পারছে না কামার শিল্প।

এছাড়া কামারশালায় ব্যবহার করার জন্য চাহিদা মোতাবেক কয়লা যোগানোও দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। পাথুরে কয়লার দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। কামারশালায় কাজ করার জন্য শ্রমিক সংকটও লেগে থাকে। শ্রমিকরা সহজে কামারশালায় কাজ করতে চায় না। শ্রমিক যোগার করতে পারলেও মজুরি দিতে হয় অনেক বেশি। বর্তমানে কামারদের ঘরে  শিক্ষিত হওয়ার কারনে এ পেশা ছেড়েছে আবার অনেকে।

তবে তারা আরও জানায়, কিছু কিছু সরঞ্জামাদি যেমন কোদাল, হাসুয়া, কাস্তে, লোহার বড় পেরেক, ডুমনি ইত্যাদি তৈরিতে এখনও কামারশিল্পের বিকল্প নাই। তা নাহলে কামারশিল্প এতদিনে বিলীন হয়ে যেত। অল্প কিছু সরঞ্জামাদি তৈরির জন্য এখনও ধুঁকে ধুঁকে চলছে কামারশালা।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসীম কুমার দাস বলেন, কামারদের সেই সুদিন আর নেই। তারা এখন সমাজের বিলুপ্তপ্রায় পেশাজীবী। কামারশালায় প্রস্তুত সরঞ্জামাদি কিনে আমাদের সমাজের অংশ হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য কামারদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

আগামীনিউজ/নাসির