করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে বৃহত্তর সহযোগিতা নিশ্চিত করতে সংস্থা দুটির প্রতিও আহবান জানান তিনি।
বুধবার (২৫ মার্চ) বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদর দপ্তরের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতে এসব কথা বলেন। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ ভিডিও কনফারেন্সে আরো উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের অধিক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮.১৫ শতাংশ, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ।
মন্ত্রী বলেন, আমরা এই বছর ৮.২ শতাংশ আশা করছিলাম। আমাদের এই ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। দুর্ভাগ্যক্রমে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি জিডিপির ১.১ শতাংশ হতে পারে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বিশ্লেষণ এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। যখন আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় আছি।
এসময় মন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ লকডাউন, শাটডাউনের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিবার্যভাবে বিরূপ প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। বিশ্ব শেয়ারবাজার ইতিমধ্যে ২৮-৩৪% হ্রাস পেয়েছে। এই মন্দা দীর্ঘকাল স্থায়ী হলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১.৫% এ নেমে যেতে পারে।
মুস্তফা কামাল বলেন, কভিড-১৯ সংকটটি আমাদের অর্থনীতিকে বহুমাত্রিক দিক থেকে আঘাত করতে পারে। ইউরোপ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শাট ডাউনের কারণে আমাদের প্রধান রফতানি পন্য তৈরি পোশাকের চাহিদা হ্রাসে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে।
ভাইরাস মহামারিজনিত কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন বলে রেমিটেন্সের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন। কোনো দেশের একার পক্ষে এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সম্ভব নয় বলে যোগ করেন অর্থমন্ত্রী।
এমন একটি মুহূর্তে এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে এই ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের জন্য বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ ও আই এমএফ-এর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
এসময় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. ফজলে কবির নিজ দপ্তর থেকে এ কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ১৪ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক তহবিল গঠন করেছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর সহায়তার জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে আইএমএফ, এই অর্থের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার পাবে স্বল্প আয়ের দেশগুলো। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে একটি বড় অংশ সহযোগিতা আশা করছে সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায়।
আগামীনিউজ/মিঠু/নুসরাত