কোরবানির পশুর হাট বন্ধ

উত্তরাঞ্চলে হাজার কোটি টাকা প্রবাহে বাধার আশংকা

জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জুলাই ১১, ২০২১, ০১:৫৭ পিএম
ফাইল ছবি

উত্তরাঞ্চলঃ দেশে চলছে প্রচন্ড কঠোর লকডাউন। বসছে না পশুর হাট। উত্তরাঞ্চলে কোরবানির পশুর হাট না বসলে প্রায় হাজার কোটি টাকা প্রবাহে বাধার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন সমাজের বিশিষ্টজনরা। কোরবানির পশু বিক্রির টাকা খামারি, পাইকারি গরু ব্যবসায়ী, ব্রোকার, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, মসলা ব্যবসায়ী, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ ব্যবসায়ী, গো-খাদ্য ব্যবসায়ী, মিল মালিক এবং কামার শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের মাধ্যমে হাত বদল হয়। সবমিলে প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় কোরবানির পশু বিক্রিকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলে, এমনটি মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীরা। 

প্রাণি সম্পদ দপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অফিসের তথ্যমতে, উত্তরাঞ্চলে ছোট বড় মিলে কমপক্ষে ৪০ হাজার পশুর খামার রয়েছে। কেনা বেচার হাট রয়েছে ২ শতাধিক। প্রতিটি খামারে ৫টি থেকে ৫০টি পর্যন্ত কোরবানির পশু আছে। গরু, ছাগল ও ভেড়া মিলে পশুর সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি। খামারিরা কোরবানি উপলক্ষে ওইসব পশু লালনপালন করে। এসব খামারকে ঘিরে লক্ষাধিক মানুষের সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। খামারের আয় দিয়ে তাদের পরিবার চলে। পশু খামারে উৎপাদিত গরুর মূল্য নিম্নে ৪০ হাজার থেকে ২/৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। করোনার আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে গরু ব্যবসায়ীরা উত্তরাঞ্চলে আসতো কোরবানির পশু ক্রয় করতে। তারা ব্রোকারদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি কিংবা খামারে গিয়ে পশু সংগ্রহ করে নিয়ে যেত বড় বড় শহরে। বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাইরের ব্যবসায়ীরা আর আসছে না। এমন অবস্থায় গরু প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আকাঙ্খিত মূল্যে হেরফের ঘটছে। ছাগল ও ভেড়ার মূল্যও ১ থেকে ২ হাজার টাকা কম দাম হাকছে ক্রেতারা।

রংপুরের বদরগঞ্জের খামারি শরিফুল ইসলাম জানান, তার খামারে বিভিন্ন জাতের ৫০টি গরু, ১৫০টি ছাগল ও ভেড়া আছে। কিন্তু করোনা কালে হাট না বসায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দাম হাকছে। এতে করে গরু প্রতি ৫ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া প্রতি ২ হাজার টাকা গড়ে ক্ষতি হবে। খরচসহ আসল টাকাটাও যদি উঠে আসে তাহলেও খামার ধরে থাকার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু ক্ষতি হলে আর ঘুরে দাড়ানো সম্ভব হবে না। তার মতে, হাটে পশু নিয়ে গেলে বাইরের খরিদদাররা আসে। এর ফলে দামও বেশ ভালো মিলে। ক্রেতা বিক্রেতার সমন্বয় ঘটলে পণ্যের দামও আশানুরুপ পাওয়া যায়।

এমন ধরনেরই মন্তব্য করেন কাহারোল, গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, চিরিরবন্দর, বিরামপুর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, তারাগঞ্জ, ডোমার ও পঞ্চগড়ের একাধিক খামারি। ওইসব এলাকার খামারিরা বলেন, করোনার উর্ধ্বগতির কারণে গ্রামের হাটেও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছে। মানুষ আতংকে হাটে আসছে না। অনলাইনে পশু বিক্রয় বিষয়ে তারা জানান, এ পদ্ধতি নতুন, এখনও আমরা রপ্ত করতে পারি নাই। তবে নীলফামারীর সবচেয়ে বড় হাট ঢেলাপীর।

এ হাটের ইজারাদার আব্দুল মোত্তালেব হক আগামী নিউজকে বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে আগামী মঙ্গলবার থেকে কোরবানির পশুর হাট পরিচালনা করবো। এতে করে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় উপকৃত হবে। কারও মাঝেই থাকবে না কোন আতংক। ভয়হীন পরিবেশে কোরবানির হাটে পশু কেনাবেচা চলবে।

প্রাণি সম্পদ দপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক ডা. হাবিবুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা অনলাইন পশু কেনাবেচার সিস্টেম চালু করেছি। যাতে করে খামারি ও ক্রেতা উভয়ে লাভবান হন।