মিশরের মত কিছু ঘটবে কি!

এডভোকেট ফারুখ জাবেদ মে ২২, ২০২৫, ১০:১৯ পিএম

কথা বললে গ্রেপ্তার, প্রতিবাদ করলে গুম, আর রাজপথে নামলে গুলি — এই নিয়মে মিশরে ৩০ বছর স্বৈরশাসন চালিয়েছেন হোসনি মোবারক।
২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে মোবারকের।
তারপর প্রথমবারের মতো মিশর পেল গণতন্ত্র — ক্ষমতায় এলেন মোহাম্মদ মুরসি।

আর গণতন্ত্র পেয়ে জনগণ চাইলো সবকিছু একসাথে — এটা চাই, ওটা চাই, এমন সংবিধান চাই, তেমন সংবিধান চাই। কেউ বলল ডানপন্থিদের নিপাত যেতে হবে, আবার কেউ বলল বামপন্থিদের ধ্বংস চাই।
শেষমেশ আন্দোলনের ভিড়ে আওয়াজ উঠল — মুরসিকেই চাই না।

এই সুযোগে শুরু হলো আন্তর্জাতিক চাপ, প্রতিবেশী দেশগুলোর হস্তক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ বিরোধীরা এক হলো। ফলাফল? রক্তাক্ত রাজনৈতিক পতন।
সরকার অচল, শিক্ষা-অর্থনীতি সবকিছু বন্ধ। এই অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা দখল করলেন জেনারেল সিসি।

এরপর? মিশরে যেন নীরব মৃত্যুর রাজত্ব।
কেউ আর টু শব্দটি পর্যন্ত করে না।
মুরসি-সমর্থকদের দমন করে, বামদের আদর্শে লাথি মেরে, মোবারকের লোকদের জেল থেকে বের করে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঘরবন্দি করা হলো।

অভ্যুত্থানকারীদের কেউ জেলে, কেউ বিদেশে, বাকিরা দৌড়ে পালাতে ব্যস্ত।
১২ বছর ধরে এই চক্রাকারে চলছে "সিসি-তন্ত্র"।

এবার ইতিহাস থেকে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কল্পনায় আসি।

গত ১৬ বছর ধরে একচ্ছত্র শাসনব্যবস্থা চলেছে, যা ছিল অনেকটা মোবারক শাসনের প্রতিচ্ছবি।
প্রতিপক্ষ দমন, গণগ্রেফতার, গুম, মামলা, দমনপীড়ন — কিছুই বাদ যায়নি।

অবশেষে দেশজুড়ে শুরু হলো স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। জনগণ চাইল পরিবর্তন।
ক্ষমতায় এলো এক ভিন্নমতাবলম্বী গণতন্ত্রপন্থী নেতৃত্ব, যিনি হঠাৎ করেই হয়ে উঠলেন "বাংলাদেশি মুরসি"।

গণতন্ত্র ফিরে পেয়ে জনতার একটাই কাজ — দাবি, দাবি আর দাবি।
এটা চাই, ওটা চাই, এমন সংবিধান চাই, তেমন ব্যাখ্যা চাই, এদিকে অবরোধ, ওদিকে বিক্ষোভ।
সবাই চায় সবকিছু, কিন্তু দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না।

যিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তিনি একটার পর একটা সংকটে পড়ে গেলেন।
একদিকে রাজনৈতিক চাপ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক প্রভাব — প্রতিবেশীদের চাপ, করিডোর বিতর্ক, ধর্মীয়-সামাজিক সংস্কার নিয়ে দ্বন্দ্ব।
মনে হচ্ছে কেউ-ই তাকে স্থিরভাবে কিছু করতেই দিচ্ছে না।

এর মধ্যেই একদিন হঠাৎ শুনবেন, ‘উনি’ আর নেই।
ঠিক মুরসির মতো, বিদায় জানাতে হলো তাকে — হয়তো অগণতান্ত্রিকভাবে,নয়তো গনতান্ত্রিকভাবে কিংবা রক্তপাতের মধ্য দিয়ে।

তারপর আবার সেই পুরনো চিত্রনাট্য।
এক নতুন "জেনারেল" আবির্ভূত হবেন, যিনি নিজেকে জাতির ত্রাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেবেন।
স্বৈরতন্ত্রের নতুন সংস্করণ শুরু হবে — আগের চেয়েও ভয়ংকরভাবে।

যারা ২০২৪-২৫ সালে স্বপ্ন দেখেছিল পরিবর্তনের, তারা এবার হবে শোষণের শিকার।

এই জাতির সমস্যা একটাই — ক্ষমতার প্রতি লোভ এবং গোমালিপনার স্বভাব।
আর এই দুই মিলেই জাতির ভবিষ্যৎ হয়ে উঠেছে অন্ধকার।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়— সামনে আসছে আরও দুর্দিন।
এখানে রাজনীতি মানেই ক্ষমতা, আদর্শ নয়।
এখানে দেশপ্রেম মানেই বিপদ।
এখানে সত্য বললে শত্রু বানানো হয়।


লেখক: এডভোকেট ফারুখ জাবেদ