চীনকে টেক্কা দিতে ৬০ হাজার কোটি ডলার জোগাড় করছে জি-৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ২৭, ২০২২, ১১:৩০ এএম
জি-সেভেন বৈঠকে নেতারা

ঢাকাঃ বিশ্বজুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারকারী বহুমুখী প্রকল্প ‌‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’কে (বিআরআই) টেক্কা দিতে ৬০০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭ এর নেতারা।

এই অর্থ দিয়ে কম আয়ের দেশগুলিতে এমন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে, যা যে কোনো আবহাওয়া সহ্য করে টিকে থাকতে পারবে। খবর রয়টার্সের

রোববার জার্মানিতে গ্রুপ অফ সেভেন (জি সেভেন) দেশের শীর্ষ নেতারা আলোচনায় বসেন। ৬০ হাজার কোটি ডলারের পরিকাঠামো তহবিলই ছিল সেখানে প্রথম ঘোষণা। চীন ইতিমধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নিয়েছে। তারই মোকাবিলায় জি-সেভেন এই প্রকল্প হাতে নিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, 'এই বিনিয়োগের ফলে সকলে লাভবান হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও লাভবান হবেন। সার্বিকভাবে আমাদের অর্থনীতি লাভবান হবে।'

সম্মেলনে জো বাইডেন বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তার জন্য পাঁচ বছরের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান, ফেডারেল তহবিল এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ থেকে সংগ্রহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করতে সহায়তা করবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি পরিষ্কার করে দিতে চাই। এটি কোনো সাহায্য বা দাতব্য (তহবিল) নয়। এটি এমন একটি বিনিয়োগ যা প্রত্যেকের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সুনির্দিষ্ট সুবিধাগুলো দেখতে দেবে দেশগুলো।’

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলো, বিভিন্ন উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল এবং অন্যান্য খাত থেকে শত শত বিলিয়ন অতিরিক্ত ডলার আসতে পারে।

বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা এই বিআরআই চাপিয়ে দিয়ে কম আয়ের দেশগুলিকে ঋণজালে আবদ্ধ করছে। এর ফলে চীনের লাভ হচ্ছে। কারণ, তারা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে বাণিজ্য বিস্তার করতে পারছে।

নতুন তহবিল থেকে অ্যাঙ্গোলায় ২০০ কোটি ডলার দিয়ে সোলার ফার্ম গড়ে তোলা হবে, ৩২ কোটি ডলার দিয়ে আইভরি কোস্টে হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় চার কোটি ডলার দিয়ে আঞ্চলিক স্তরে বিকল্প শক্তি বাণিজ্যকে উৎসাহ দেয়া হবে।

বৈঠকের প্রথম দিনেই জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস ভাষণে বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই পরিকাঠামোগত পরিকল্পনা খুব জরুরি। রাশিয়া এখন শক্তিকে (তেল-গ্যাস-কয়লা) একটা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। তাদের মোকাবেলায় এই পরিকল্পনা নেয়া দরকার ছিল।

এদিকে জি-৭ এর সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের টেকসই বিকল্প গড়ে তোলার জন্য পাঁচ বছরের ওই একই সময়সীমায় ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ইউরো সংগ্রহ করবে ইউরোপ।

শলৎস ও বাইডেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেছেন। সেখানে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর জন্য বাইডেন শলৎসের প্রশংসা করেছেন। বাইডেন বলেছেন, জার্মানি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ও শরিক দেশ। বাইডেন জানিয়েছেন, জি-সেভেন ও ন্যাটো দেশগুলি যেন এক হয়ে রাশিয়ার মোকাবেলা করে।

জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের আগে যুক্তরাজ্য ঘোষণা করে, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডা ও যুক্তরাজ্য রাশিয়া থেকে সোনা আমদানি নিষিদ্ধ করছে। এর ফলে রাশিয়ার উপর আরো চাপ তৈরি করা যাবে বলে যুক্তরাজ্য মনে করছে। এর ফলে পুতিন সরাসরি ধাক্কা খাবেন বলে তারা মনে করছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জি-সেভেন বৈঠকে এই নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হবে।

জি-৭ এর আয়োজক জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস শীর্ষ সম্মেলনে অংশীদার দেশ হিসেবে সেনেগাল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জলবায়ু, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গের সমতায়ন ও গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতি বছর জি-৭ নেতাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবার জি-৭ সম্মেলনে গুরুত্ব পাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া, যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির সংকট ও বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট কাটিয়ে উঠার উপায়সমূহ।

এমবুইউ