ঢাকাঃ করোনা চিকিৎসায় বিবাহিতরা স্বাস্থ্যকর্মীরা মানসিক রোগে বেশি ভুগেছেন। ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর এর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, কুশলাবস্থা, সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরসমূহ এবং মানিয়ে নেওয়ার কৌশল’ শীর্ষক জাতীয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) মিলনায়তনে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে এ গবেষণা পরিচালনা করে নিপসম। গবেষণা দলের প্রধান নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ ফল তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ওপর মানসিক প্রভাব, সংশ্লিষ্ট কারণ ও মোকাবিলার কৌশল শীর্ষক জরিপটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে ১ হাজার ৩৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর। তাদের মধ্যে ছিলেন ৫৯৬ জন চিকিৎসক, ৭১৩ জন নার্স ও ৮৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা অন্তত এক মাস করোনা রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত নারীদের পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) ঝুঁকি ছিল বেশি। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশেরই পিটিএসডি ছিল। তাদের মধে ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছিলেন বিবাহিত।
স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাজের চাপ অনেক বেশি ছিল, তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর (পিপিই) অপ্রতুলতায় ছিলেন এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন। বাংলাদেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ২৩ দশকি ৫০ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত হন।
স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মধ্যে চিকিৎসকদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক হয়েছিল। এরপরই ছিলেন টেকনোলজিস্ট ও নার্স। পিটিএসডিতে আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, টেকনোলজিস্ট ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ও নার্স ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গবেষণা দলের প্রধান নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, পিটিএসডি আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা সবার থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন বা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন বা তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে। এই স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করা উচিত।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবার পাশাপাশি গবেষণাও বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে গবেষণা ফলের ওপর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কোর্সের সময়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোর্সের সময়ে ভিন্নতা দেখা যায়। একই কোর্স এমপিএইচ কোথাও ৬ মাস, কোথাও ৯ মাস, কোথাও ১২ মাস আবার কোথাও ১৮ মাস। ফলে সময় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। জটিলতা দূর করতে হলে সব স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিএইচ কোর্স ২ বছর মেয়াদি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন প্রমুখ।
এসএস