নিঃসন্দেহে বর্তমানে মানব জাতি এক সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। করোনা নামক ভাইরাসের আক্রমণে মানব সমাজ আজ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এই দুর্যোগময় সময়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের বক্তব্যে মানুষ আরো বিভ্রান্ত হচ্ছে, ঈমান হারানোর শঙ্কায় পড়েছে। কিন্তু মুসলিম হিসাবে আমাদের একমাত্র দিক নির্দেশনা হওয়া উচিত পবিত্র কোরআন ও হাদিস। এর বাহিরে কারো কোনো বানানো কথা বিশ্বাস করা ও তা পালন করা যাবে না। রোগ ব্যাধি ও বালা-মুসিবত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
মানব জীবনে দুঃখ-কষ্ট বালা-মুসিবত অসম্ভাবী এবং এটা আল্লাহর নির্দেশেই আসে এবং একমাত্র আল্লাহ তালাই আমাদের মুসিবত থেকে উদ্ধার করতে পারেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,"সুখ-দুঃখ সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দান করলে তিনি ব্যতীত উহার মোচনকারী আর কেহ নেই আর তিনি তোমার কল্যাণ করলে তবে তিনিই তো সর্বশক্তিমান।"(সূরা আনাম,আয়াত-১৭)।
ভালো এবং মন্দ উভয় অবস্থা দিয়েই আল্লাহ তাআলা আমাদের পরীক্ষা করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,"জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে থাকি। এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যানীত হবে।"(সূরা আম্বিয়া,আয়াত-৩৫)।
আমরা মুসিবতে পড়লে দিশেহারা হয়ে যাই। আমাদের এই করুন অবস্থার জন্য আমরা নিজেদের এবং অন্যদের দোষারোপ করি কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সমস্ত মুসিবত আল্লাহর নির্দেশেই আসে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,"আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সম্মুখ অবগত।" (সূরা-তাগাবুন,আয়াত -১০)।
আল্লাহ তাআলা বালা-মুসিবতে আমাদের করণীয় কি সে সম্পর্কেও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন আর তা হচ্ছে ধৈর্য ধারণ করা। তিনি বলেন,"যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর প্রতিই প্রত্যাবর্তনকারী।" (সূরা -বাকারা,আয়াত -১৫৬)।
প্রত্যেক মুসিবতের সাথেই আছানি আছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,"অবশ্য কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। অতএব যখনই অবসর পাও সাধনা করো।" (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত ৫-৬)।
রোগ ব্যধি সম্পর্কে আমাদের মাঝে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকে মনে করে রোগ যেহেতু আল্লাহ দিয়েছেন, প্রতিকারও আল্লাহই দিবেন তাই তারা ঔষধ সেবন করতে বা কোনো ব্যাবস্থা নিতে চায় না। আল্লাহই একমাত্র শেফা দানকারি একথা সত্য কিন্তু তিনি কোনো অছিলা ছাড়া কোনো কিছু করেন না। আর রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে অছিলা হচ্ছে ডাক্তার, ঔষধ এবং ব্যবস্থাপনা।
রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজে রোগে আক্রান্ত হলে ঔষধ গ্রহণ করতেন এবং অপরকে প্রয়োজনে ঔষধ গ্রহণ বা অন্য কোনো ব্যবস্থাপনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সাহাবীগণ বিভিন্ন রোগব্যধি ও তার উপশম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি যেসব মতামত দিয়েছেন তা তুলে ধরা হল:-
তিনি বলেছেন ,প্রত্যেক ব্যাধিরই ঔষধ আছে। তাই রোগের উপযোগী ঔষধ ব্যবহার না করা প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ এবং পাপ।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন , "আল্লাহ এমন কোনো ব্যাধি পাঠান নাই যার ঔষধ নাই "। (বোখারী)
রোগব্যাধিতে কালোজিরার ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেছেন,"কালো জিরায় মৃত্যু ব্যতিত প্রত্যেক ব্যধির ঔষধ আছে।"(বোখারী,মুসলিম)
অপবিত্র ঔষধ সম্পর্কে তিনি বলেছেন,"অপবিত্র ঔষধ গ্রহণ করা নিষেধ।" (আহমদ,আবু দাউদ,তিরমিযি )
প্রকৃতির দান মধুর নিরাময় গুনাগুন সম্পর্কে তিনি বলেছেন,"প্রত্যেক মাসে তিন দিন প্রাতঃকালে যে মধু পান করে তাকে বড় রকমের ব্যাধি আক্রমণ করবে না।" (আবু দাউদ)
তিনি এও বলেছেন যে, "প্রত্যেক রোগ ব্যাধির ঔষধ আছে। যখন যে রোগের ঔষধ প্রয়োগ করা হয় আল্লাহর নির্দেশে সে রোগ তখন আরোগ্য হয়।" (মুসলিম)
অপবিত্র ঔষধ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,"নিশ্চয় আল্লাহ রোগ দিয়েছেন ও ঔষধ দিয়েছেন এবং প্রত্যেক রোগের ঔষধ দিয়েছেন এবং রোগের ঔষধ তিনি সৃর্ষ্টি করেছেন। সুতরাং ঔষধ গ্রহণ করো কিন্তু হারাম জিনিসের ঔষধ গ্রহণ করো না।" (আবু দাঊদ)
তিনি স্পস্ট ভাবে আরো বলেছেন,"হে আল্লাহর বান্দাগণ ঔষধ গ্রহণ করো, কেন না এমন কোনো রোগ আল্লাহ সৃষ্টি করেন নাই যার ঔষধ নাই। একটি রোগ আছে যার ঔষধ নাই তা বার্ধক্য। " (আহমদ, তিরমিযী,আবু দাঊদ)।
তিনি আরো বলেছেন,"তোমরা দুটি ঔষধ গ্রহণ করবে। মধু এবং কোরআন।" (ইবনে মাজাহ)
কোরান ও হাদিসের উপরোক্ত আলোচনায় আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের জীবনে যে কোনো সময়ে রোগ ব্যাধি ও বালা-মুসিবত আসতে পারে। সে সময় আমাদের উচিৎ ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং আল্লাহ প্রেরিত সমাধান অবলম্বন করা এবং রাসূল(সা:) হাদিস অনুসরণ করা।
বর্তমানে আমরা একটা সংকটময় মুহূর্ত মোকাবেলা করছি। তাই বিভ্রান্ত না হয়ে আল্লাহ ও রাসূলের(সা:) নির্দেশিত পথে চলবো, তাহলেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি পাবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ সবাইকে রোগব্যাধিতে তাঁর ও তাঁর রাসূলের(সা:) এর নির্দেশ মোতাবেক আমাদের চলার তওফিক দান করে করোনার এই মহামারি থেকে আমাদের মুক্তি দিন- আমিন।
লেখা ও সংকলন: ড.নিম হাকিম ও মো.আব্দুল বাতেন
আগামী নিউজ/নাঈম