লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৮৯

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ জানুয়ারি ৬, ২০২০, ১০:১৫ পিএম

সময় গেলে সাধন হবে না
দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন করলে না
জানো না মন খালে বিলে
মিন থাকে না জল শুকালে
কি হয় তার বাঁধন দিলে
শুকনা মোহনা॥
অসময়ে কৃষি করে
মিছামিছি খেটে মরে
গাছ যদি হয় বীজের জোরে
ফল তো ধরেনা
অমাবস্যায় পূর্ণিমা হয়
মহা জোগ সে দিনের উদয়
লালন বলে তাহার সময়
দন্ডও রয় না॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা
মানুষ সব কিছুকে বড় বড় বা গোটা আকারে দেখে। সময় কে কৈশোর, যৌবন এবং বৃদ্ধ অনুসারেই বোঝাতে চায়। তাই সকলের ধারণা যৌবনকালে যে কাজ করা দরকার সেটা আর বৃদ্ধ বয়সে সম্ভব হয় না। এই ভাবে গোটা একটা যৌবন বয়স বা বৃদ্ধ বয়সকে দেখার ভিতরে কোন জ্ঞানের বিশ্লেষণ হয় না। আসলে এ জীবন অনন্ত ধারায় প্রবাহিত। যৌবন বা বৃদ্ধ অবস্থাকে বয়সের হিসেবে ভাগ করা কোন জ্ঞানের কাজ নয়। বরং প্রতিটা মুহূর্তকে গুরুত্ব দিতে হবে। যে মুহূর্তে দেহ মনে যে কর্ম উদয় হচ্ছে সে মুহূর্ত সে কর্মকেই জ্ঞান দ্বারা বিচার করতে হবে। সময় অনন্ত ধারা। জ্ঞান থাকলেই মাত্র সময়কে বর্তমানে উপলব্ধি করা যায়। জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ কোন অবস্থাতেই বর্তমানে থাকতে পারে না। সে সব সময় অতীত বা ভবিষ্যতে বিরাজ করে। সেই কারণে বর্তমানে মূল্যবান যে সব কর্মধারা তার দেহ মনে বিরাজ করে তা সে জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে না। কারণ সেই মুহূর্তও সে অতীত বা ভবিষ্যত অবস্থানে থাকে। তাই যৌবন কাল, বৃদ্ধকাল বা অন্য কোন সময়কে গোটাভাবে না দেখে লালন সাঁই সময় বলতে বর্তমান মুহুর্তকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

মীন (মাছ) যেমন পানি শুকালে আর থাকতে পারে না। তেমনি যে মুহূর্তে যে কাজটা দেহ মনে ঘটে সে মুহূর্ত তা উপলব্ধি না করলে আর কোন অবস্থাতেই তার যথাযথ উপলব্ধি হওয়া সম্ভব নয়। অতীতকে টেনে নিয়ে একটা অনুভূতি জাগরণ করা যায় হয়তো কিন্তু যে মুহূর্ত যে ঘটনা ঘটে যায় সে মুহূর্ত যে প্রজ্ঞা আসে তা আর কোনদিন প্রকৃত রূপ নিয়ে অসতে পারে না। তাই প্রতিটা মুহূর্ত জ্ঞান হালে অবস্থান করা মহা সাধনার কাজ। মহাজ্ঞানীগণ প্রতিটা মুহূর্তকে জ্ঞান হালে অবলোকন করেছেন এবং তা থেকে মহাজ্ঞান উপলব্ধি করে নিজেরা মহাজ্ঞানী হয়েছেন।

সাঁইজি লালন একথাও বলেছেন, সময় মতো কৃষি কাজ করলে যেমন সোনা ফলে অর্থাৎ প্রকৃত ফল পাওয়া যায়। কিন্তু অসময়ে কৃষি কাজ করলে যথাযথ ফল পাওয়া যায় না। বীজের গুণে গাছ হলেও তাতে ফল পাওয়া যায় না। তেমনি প্রতি মুহূর্তের কর্মধারা বা যখন যে ঘটনার উদয় হচ্ছে বা যা ঘটে যাচ্ছে তা সেই মুহূর্তের  জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করতে পারাটা মহা সাধনার ব্যাপার। সে মুহূর্ত জ্ঞান দ্বারা সচেতন না থাকলে সেই রূপ আর কোন দিন ধরা দেয় না। সাধনার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। সে যখন যে হালে যে কোন কর্ম করবে সে মুহূর্ত সেই কর্মের উপর প্রজ্ঞা দ্বারা উপলব্ধিই সাধনার মূল ব্যাপার। তাই প্রতিটা মুহূর্তই সাধনা লব্ধ জ্ঞান দ্বারা মানুষকে সজাগ রাখে। এই ২৪ ঘণ্টা যখন যেভাবে ব্যয় হয় বা যে কর্ম করা হয় সে অবস্থায় জ্ঞান হালে থাকতে হবে। এক মুহুর্তের জন্যও অজ্ঞান অবস্থায় থাকা সঠিক নয়। একজন জ্ঞানী সত্ত্বার প্রতিটা মুহুর্ত জ্ঞান হালে। এক মুহূর্তের জন্যও সে অজ্ঞান থাকতে পারে না। সে তার সারাটা জীবনের প্রতিটা মুহূর্তের কর্মের উপর জ্ঞান দ্বারা বিজয় অর্জন করে। এটা মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয় অর্জন। 


২০-০৮-২০১৬                        রাত  ৯:৩১

 

আগামীনিউজ/এএম