রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলার জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ: মোজাম্মেল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৩, ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আইনশৃঙ্খলা মানতে চায় না। তারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

মোজাম্মেল হক বলেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সভায় দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা করেছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে জনগণ স্বস্তিতে আছে বলে আমাদের মূল্যায়ন। যদিও দেশে ছোটখাটো ঘটনা ঘটে, এটি স্বাভাবিক। মেজর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

‘আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে তারপরেও উদ্বিগ্ন, সেটি রোহিঙ্গাদের নিয়ে। সেখানে মাদক, নাশকতা ইত্যাদি বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা ওদের আইডি কার্ড না দিলেও ওরা যেভাবেই হোক সিম কার্ড এনে ব্যবহার করছে। আমাদের দেশ থেকে পাচ্ছে না, কিন্তু মিয়ানমার থেকে সিমকার্ড এনে ব্যবহার করে। তারা অত্যন্ত আনরুলি আপনারা দেখেছেন’ বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই শরণার্থীরা থাকেন, তারা কিন্তু আবদ্ধ থাকেন। আমরাও মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশের মানুষও শরণার্থী ছিল, তারা কখন আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেনি। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার, মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গারা এসে আশ্রয় নিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে আশ্রয় দিয়েছেন, তারা আইনশৃঙ্খলার জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ। তারা আইনশৃঙ্খলা মানতে চান না।

তিনি আরও বলেন, তাদের (রোহিঙ্গা) জন্য ভাসারচরে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে যে সুব্যবস্থা আছে সেখানেও তারা যাচ্ছেন না। ওখানেই থাকবেন। বিভিন্ন ক্রাইমের সঙ্গে নিজেদের ও অন্যদের জড়িয়ে ফেলছেন। মানবিক কারণে তাদের কিছু বলা যাচ্ছে না। যেহেতু তারা আশ্রিত। তাদের গ্রেফতারও করা যায় না, বিচারও করা যায় না। কারণ তারা তো আমাদের দেশের নাগরিক না। তাদের বিচার করা, গ্রেফতার করার জন্য দেশে কোনো আইন নেই। কিছু করাও যায় না আইনানুগভাবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা সেখানে আছে, আমরা মনে করি যাদের মদদে তারা উৎসাহ পায়। যাদের জন্য কথায় কথায় সেসব এনজিও বা আন্তর্জাতিক সংস্থা এমনসব কাজে জড়িতদের জন্য এ দেশের আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না। তারপরেও আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়।

তিনি বলেন, মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আমরা চেষ্টা করছি ডোপ টেস্ট, চাকরিতে আবেদন করতে ডোপ টেস্ট হবে। ডোপ টেস্টের মেয়াদ খুব অল্পকাল। তিনদিন পরে গেলেই অর্থাৎ তিনদিন মাদক সেবনে বিরত থাকলেই ডোপ টেস্টে আর ধরা পড়বে না যে মাদকসেবী। তারপরেও ডোপ টেস্টের মাধ্যমে কিছু মানুষের চাকরি চলে গেছে। পুলিশ বাহিনীর লোকই সবচেয়ে বেশি চাকরিচ্যুত হয়েছে।

‘মাদকসেবীদের নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে আমরা উদ্বিগ্ন মাদকসেবীদের সংখ্যা আমাদের আশানুরূপ কমেনি, অনেকক্ষেত্রে বেড়েছে। কীভাবে মোটিভেশন চালানো যায়, অভিভাবকদের সঙ্গে সমাবেশ করা, স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। জাতির জন্য উদ্বেগের কারণ। এজন্য এদের নিরুৎসাহিত করতে গণমাধ্যমকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

মোজাম্মেল হক বলেন, মাদকসেবীদের নিরাময়কেন্দ্র সরকারি-বেসরকারিভাবে রয়েছে, সেগুলো খু্ব একটা মানসম্পন্ন নয়। সরকারি নিরাময়কেন্দ্রগুলোর আসন বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু আসন বাড়ানো হয়েছে। বিভাগীয় শহরে নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। মাদকের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকলেও জঙ্গি দমন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। এককালে যেভাবে জঙ্গিবাদে উত্থান হয়েছিল সেটা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এদেশে জঙ্গির বিষয়টি খুবই সহনশীল পর্যায়ে আছে। জঙ্গি দমনে পুলিশের নতুন শাখা হয়েছে- এটিইউ এবং সিটিটিসি।

তিনি আরও বলেন, বিদেশে বসে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে মিথ্যাচার করছে। চমকপ্রদ ও আজগুবি কথা বলছে, মানুষ বিভ্রান্ত হয়। একেকদিন একেক রকম গুজব তারা ছড়ায়, দেশবাসীর জন্য যা খুব অকল্যাণকর। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশে ওইসব প্রতিষ্ঠানের অফিস না থাকায় নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি না।

অনিবন্ধিত যেসব অনলাইন পত্রিকা আছে সেগুলোকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন থাকেলে জবাবদিহিতা চাওয়া যায়। নীতিমালা ভঙ্গ করলে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যায়। রেজিস্ট্রার্ডবিহীন, নামসর্বস্ব পত্রিকা মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করার সুযোগ পায়। সে কারণে আমাদের আহ্বান অনলঅইন পত্রিকা যারা চালান রেজিস্ট্রেশন করেন। নির্ধারিত নিয়ম ও সময়ে যদি রেজিস্ট্রেশন না করে সেগুলো যাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। নইলে যারা ভালো নিউজ করে তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা যাতে পাচার না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কারা হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে সেগুলো দেখার জন্য।

তিনি বলেন, অল্প সংখ্যক এনজিও, শতাধিকও হতে পারে যারা কোথা থেকে ফান্ড পায়, এই টাকা কোথায়, কিভাবে খরচ করে, নিয়ম আছে যে তারা কোথা থেকে টাকা পায় এবং কবে কিভাবে খরচ করলো অডিট রিপোর্টের মত এনজিও ব্যুরোকে দেবে। অনেকগুলো এনজিও আছে নিয়মকানুন মেনে চলে না। সেজন্য এনজিও ব্যুরোকে আজকের সভা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত এনজিওকে নিয়মমতো যেটা তাদের হিসাবপত্র দেওয়ার কথা, অডিট রিপোর্ট দেওয়ার কথা সেটা যেন দেয় এবং যেগুলোতে সন্দেহজনক লেনলেন হয় মনে করে সেগুলো পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবে। সন্দেহজনক লেনদেন থাকলে পুলিশ বিভাগ সেগুলো খতিয়ে দেখবে, তদন্ত করে দেখবে।

মাদক নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, মাদক যেসকল রুটে আসে তা বন্ধ করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ সকলে তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২২ কেজি আইস নামে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার যে হচ্ছে না, তা কিন্তু না। এটা ঠিক যে নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আজকে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, কোন রুট দিয়ে যাতে মাদক ঢুকতে না পারে৷

আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক সেটা জামায়াত হোক, সরকারিদল হোক, বিরোধী দল হোক বা কোন দল করে না শুধু দুর্বৃত্ত হোক আইনশৃঙ্খলা যারা লঙ্ঘন করেছে, বিশেষ করে যাদের ওপেন অস্ত্র নিয়ে দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্দেহজনক লেনদেন হয় এনজিও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এরকম কোনো তথ্য এসেছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এসব এনজিওগুলো নিয়ে তো পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়। শোনা কথার ওপর তো সিদ্ধান্ত হয় না। সিদ্ধান্ত নিতে হয় তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেসব লেনদেন সন্দেহজনক সেগুলোর রিপোর্ট আমরা এনজিওগুলোর কাছে চেয়েছি। আমাদের যা বলা হয়েছে তা সঠিক কি না তা যাচাইয়ের জন্য এ তথ্য চাওয়া হয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত ইসলামকে আবার মাঠে নামানো হলো মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী হিসেবে এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। এটা রাজনৈতিক প্রশ্ন এটার জবাব দেবে আওয়ামী লীগের যিনি মুখপাত্র তিনি। এ মুহূর্তে আমি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী হিসেবে কোনো মন্তব্য করছি না। আমি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সভা করেছি। সেটাতেই সীমাবদ্ধ থাকি।

জামায়াত মাঠে নামলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ডাউন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এরকম মনে করছি না। মাঠে নামলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যারা নস্যাৎ করে তারা যদি মাঠে না নামে তাহলে আরও বেশি করবে। মাঠে নামলেই যে হয় তা নয়। আমরা সবসময় চাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাক। আওয়ামী লীগ সবসময় নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুক। ভোট হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার সে অধিকার যাতে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে প্রয়োগ করতে পারে সেটাতে আমরা বিশ্বাস করি।


এমআইসি