জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো রো‌হিঙ্গা রেজু‌লেশন গৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট নভেম্বর ১৮, ২০২১, ১২:৪৫ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা রেজুলেশনটি জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে। বুধবার জাতিসংঘে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রসায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজুলেশনটি গৃহীত হয়েছে। রেজুলেশনটি যৌথভাবে উত্থাপন করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার (১৭ নভেম্বর) ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজুলেশনটি গৃহীত হয়েছে। রেজুলেশনটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

জা‌তিসং‌ঘের বাংলা‌দেশ স্থায়ী মিশন জানায়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদান এবং জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছে, রেজুলেশনটিতে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। কক্সবাজারের অত্যন্ত জনাকীর্ণ আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর এবং এ লক্ষ্যে এখানে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগেরও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়।

রেজুলেশনটিতে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং চল‌তি বছ‌রের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমা‌রে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটের মতো বিষয়গুলোর প্রতি। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সকল মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে এবারের রেজুলেশনে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরূপণ প্রক্রিয়ার ওপর রেজুলেশনটিতে সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।

এতে মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও এর কার্যকর বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে রেজুলেশনটিতে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, আশা করা যায় এবারের রেজুলেশনটি নিজভূমি মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে যা দীর্ঘস্থায়ী এই সমস্যার টেকসই সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এবারের রোহিঙ্গা রেজুলেশনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে এবারের রেজুলেশন গৃহীত হলো যা রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে যে জন্য তারা পথ চেয়ে বসে আছে।

এবারের রেজুলেশনটিতে ১০৭টি দেশ সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে। যা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি ছাড়াও রেজুলেশনটিতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ সমর্থন এবং সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে গত জুলাইতে জেনেভাতে সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন গৃহীত হয়েছিল। একই ধারাবাহিকতায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো।

আগামীনিউজ/নাসির