হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা

নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন কক্সবাজারের ডিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৪:৩৪ পিএম

ঢাকাঃ সমুদ্রসৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালন না করা কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মামুনুর রশীদ আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

আদালত এ বিষয়ে শুনানি শেষে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ৯ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে ডিসি মানুনুরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ সংক্রান্ত অভিযোগ বিষয়ে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বুধবার ব্যাখ্যা দিতে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হন ডিসি মামুনুর রশীদ।

এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে ডিসির পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতজা উদ্দিন ফকির।

আদালতের নির্দেশনা না মানায় আজ কক্সবাজারের ডিসি মামুনুর রশিদকে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট বলেছেন, কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় আপনার পারফরমেন্স শুধু জিরো নয় নেগেটিভও। বার বার বলার পরও আপনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেননি। আপনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মান্য করুন। আদালতের আদেশ না মানলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আপনি এই ঝুঁকিতে যাবেন না।

শুনানির শুরুতে কক্সবাজারের ডিসির পক্ষে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকিরকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আমরা কখনো ঢালাওভাবে কারো বিরুদ্ধে কনটেম্পট করি না। তাকে অনেকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে আদালতের মনোভাব জানিয়েছেন। এরপরও তিনি সব্বোর্চ আদালতের আদেশ মানেননি। এ কারণে তলব করেছি।

ডিসিকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, কক্সবাজারকে সারাবিশ্বের মানুষ চেনে। আপনি সেই কক্সবাজারের ডিসি। কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় ভূমিকা রাখুন। আপনাকে সারাবিশ্বের মানুষ চিনবে।

আদালত আরও বলেন, উচ্ছেদ করে আমরা তাদের বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে বলছি না। আপনি সুন্দর ব্যবস্থাপনা করুন। মানুষ আপনাকে মনে রাখবে। আমরা প্রতিদিন পত্রিকা-টিভি খুলে দেখি আপনি কী করছেন। কিন্তু আপনার পারফরমেন্স জিরো তো নয়ই নেগেটিভও।

এ সময় কক্সবাজারের ডিসি আদালতকে বলেন, আমি কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। এখন আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করব।

তখন আদালত বলেন, শুধু করব বললে হবে না। আপনাকে করতেই হবে। আদালতের আদেশ না মানলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।

তখন ডিসি মামনুর রশিদ বলেন, আমি আদালতের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। পরে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একইসঙ্গে ৯ নভেম্বরের মধ্যে তাকে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।

গত ২৫ আগস্ট আদালত অবমাননার অভিযোগের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করে তাকে তলব করেন। যে ৫ জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন তারা হলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, উপ-পরিচালক, টাউন প্ল্যানার তানভির হাসান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনর রশিদ, পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবর রহমান।

ওই দিন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, কক্সবাজার অবৈধ স্থাপনা ‍উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা পর সেটা উচ্ছেদও করা হয়েছিল। কিন্তু ইদানীং একশ’র মতো দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার মাস আগে আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। এরপর দীর্ঘ শুনানির পর বার বার সময় নেওয়ার পরও জেলা প্রশাসক ওইসব স্থাপনা উচ্ছেদ করেননি। যে কারণে জেলা প্রশাসকসহ সকলের উপর আদালত অবমাননার অভিযোগে একটা রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। 

এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।

নোটিশে বলা হয় যে, কক্সবাজার সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে সেখান থেকে সকল অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করার আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থে এইচআরপিবি আদালতে রিট মামলা দায়ের করলে আদালত রায় দেন। রায়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশনা দেন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৭ জুন বিবাদীদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিলেও এখনও তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এমএম