ফেসবুকে যা করা অপরাধ

ডেস্ক রিপোর্ট নভেম্বর ২১, ২০২০, ১১:২২ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ দেশে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো ফেসবুক। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারের উপকারিতার পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীনও হচ্ছেন অনেকে।

আইন অনুযায়ী, ফেসবুকে মিথ্যা ও অশ্লীল এমন কোনও কিছু ব্যবহার করা যাবে-যা কোনও ব্যক্তি পড়ে, দেখে ও শুনে ‘নীতিভ্রষ্ট’ হতে পারেন। কোনও স্ট্যাট্যাস বা ট্যাগের কারণে কারও ‘মানহানি’ ঘটে, এমন কোনও কিছু করা যাবে না।

এমন কোনও কিছু লেখা বা শেয়ার দেওয়া বা কমেন্ট করা যাবে না, যার মাধ্যমে কেউ ‘উসকানি’ অনুভব করেন এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। সর্বোপরি এমন কিছু লেখা ও ট্যাগ করা যাবে না, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ণ হয়। আইনে নীতিভ্রষ্ট, মানহানি, উসকানি,ভাবমূর্তির সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলেও প্রচলিত ধরন অনুযায়ী-যে কর্মকাণ্ডগুলোকে এই শব্দগুলো দিয়ে সুনির্দিষ্ট করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

আইন কী বলে?

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ২৫ ধারা অনুযায়ী, ‘যদি কোনও ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ডিজিটাল মাধ্যমে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে এমন কোনও তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক, অথবা মিথ্যা বলে তিনি জানেন, কোনও ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কোনও তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করার, বা বিভ্রান্তি ছড়াতে মিথ্যা কোনও তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন-তবে সেটি অপরাধ বিবেচিত হবেন। এ কারণে তিনি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে, বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ব্যক্তি যদি উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা বারবার সংঘটন করেন, তবে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস ২০২০’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল বিভাগের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে যেসব কনটেন্টকে ক্ষতিকারক বলি, সেগুলোকে তিনটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। পর্নোগ্রাফি, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে অসত্য সংবাদ, গুজব, ঘৃণা ছড়ানোএবং জঙ্গি উপাদান। এ তিন ধরনের কনটেন্টে লাইক দেওয়া, শেয়ার করা, মন্তব্য করা কিংবা এ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস আপলোড করা অপরাধ।’

মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ফেসবুকে ফেক আইডি খোলা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী অপরাধ। শুধু ফেক আইডি খোলার অপরাধেই কাউকে সাজার আওতায় আনা সম্ভব।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও কিছু শেয়ার করে প্রচারে সহায়তা করার দায়ভার কেউ এড়াতে পারেন না উল্লেখ করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, ‘যে কোনও কিছু চোখের সামনে দেখলেই শেয়ার করে ফেলা উচিত নয়। বিভিন্ন চক্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে গুজব রটায় এবং অসত্য খবর তৈরি করে। এসব শেয়ার করার আগে অবশ্যই নিজের বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে।’

দেখলেই শেয়ার দেওয়া ব্যক্তিদের জন্য পরামর্শ কী হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই দেখতে হবে যে, সোর্সটি কী। প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া ছাড়া অন্য কারও খবরই শেয়ার করা উচিত নয়। যদি শেয়ার করার উপযোগী কোনও জরুরি খবর কোনও অপরিচিত ওয়েব পোর্টাল থেকে প্রচারিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, খবরটি সত্যি হলে অবশ্যই মূলধারার মিডিয়ায় বিষয়টি আসবে। সেক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো দেখা দরকার এবং প্রয়োজনে সেখান থেকে শেয়ার করা যেতে পারে।’

কোনও কিছু বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে যাচাই করা দরকার যে খবরটি সত্যিই কী না। বিশেষ করেস্পর্শকাতর বিষয়গুলো শেয়ার করার সময় এটি বিশেষভাবে চিন্তা করতে হবে। ‘বেখেয়ালে’ শেয়ার করে ফেলা কোনও অজুহাত হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গুজব বা মিথ্যা তথ্য প্রচারের কারণে অনেক সময় দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বা ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যায়। তাই এসব মিথ্যা খবর প্রচারে সহায়তাকারীরা আইনের আওতায় আসতে পারেন। সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যদি মনে হয় যে, কোনও মানুষ প্রকৃতই ‘বেখেয়াল’, উনার তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকাই উচিত হবে না।’

আগামীনিউজ/এএইচ