আলাদা হবে নুহা-নাবা, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১, ২০২২, ১২:২৩ পিএম

ঢাকাঃ কুড়িগ্রামের পরিবহন শ্রমিক আলমগীরের ঘর আলো করে একসঙ্গে দুই সন্তানের জন্ম হয় প্রায় সাড়ে সাত মাস আগে। সন্তানদের জন্মের পর যেখানে আনন্দে ভাসার কথা সেখানে খেটে খাওয়া মানুষটির পরিবারে নেমে আসে দুশ্চিন্তার ছায়া। কারণ তার স্ত্রী নাসরিনের কোলজুড়ে পৃথিবীতে আসা ফুটফুটে দুই যমজ কন্যাসন্তান নুহা-নাবার মেরুদণ্ড ও স্পাইন জন্মগতভাবে জোড়ালাগা। যদিও শিশু দুটি বাকি সবদিক দিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় 'কনজয়েন্ড টুইন' বলে খ্যাত এই সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। সবকিছু ঠিক থাকলেও দুই বোনের মেরুদণ্ডের নিচে জোড়া লাগা অংশ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনায় গঠন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড।

তবে নুহা ও নুবার চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তা শেষ হতে চলছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দির আহমেদ।

বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুহা ও নাবার চলতি মাসের শেষ দিকে তাদের অস্ত্রোপচার করার কথা ভাবছেন চিকিৎসকরা। সফলভাবে এটি শেষ হলে এটাই হবে দেশে কোনো মেরুদণ্ড জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচার।

জটিল ও স্পর্শকাতর এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তাকে সহায়তা করবেন আরও কয়েকজন চিকিৎসক।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যমজ শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ মেরুদণ্ড জোড়া লাগা যমজ শিশুর চিকিৎসায় ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দেন।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি ছাড়াও পেডিয়াটিক মেডিসিন, ভাসকুলা সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন। 

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগের কথা। তিনি চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রাম যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ড জোড়া লাগা এই নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। তিনি এই শিশুদের দেখতে যান এবং উন্নত চিকিৎসায় তাদের ঢাকাতে আসতে অনুরোধ করেন।

অধ্যাপক হোসেন বলেন, পাঁচ মাস ধরে এ মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগে তার অধীনে চিকিৎসাধীন। বয়স কম থাকায় তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুই ধাপে অস্ত্রোপচার হবে। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এক মাস পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। দুই ধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েক মাস তাদের হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।

চিকিৎসক বলেন, মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল স্পর্শকাতর। তবে আমরা আশাবাদী।

শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থার ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমলি স্ক্যানে কোনো জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। গর্ভাবস্থার বাকি সময়টা ছিল অস্বাভাবিক। গর্ভাবস্থার ৩৫ সপ্তাহে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রসব করা হয়। জন্মের পরপরই তারা কেঁদে ওঠে। এ সময় তাদের জন্মের ওজন ছিল ৮ দশমিক ৫ কেজি।

চিকিৎসকরা বলছেন, মূত্রনালী পৃথক হলেও তাদের মলদ্বার সংযুক্ত। শিশুরা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত, গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে যমজ দুই বোনকে আলাদা করার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে মেডিক্যাল সকালে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

পরবর্তী চিকিৎসা নিয়ে কোনো পথে হাঁটা যায় সেসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, জোড়া লাগা শিশু দুটির বাবা কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ীর আলমগীর রানা। তিনি পেশায় পরিবহন শ্রমিক। প্রায় সাড়ে সাত মাস আগে রানার স্ত্রী নাসরিন যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। শিশু দুটির মেরুদণ্ড ও স্পাইন জন্মগতভাবে জোড়ালাগা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে কনজয়েন্ড টুইন বলে।

তাদের বয়স সাত মাস ১৩ দিন। এ যমজ শিশু বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বুইউ