মোহনগঞ্জে ভিজিডি কার্ডে ঘুস নেওয়ার অডিও ফাঁস

জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০৫:৫৫ পিএম

নেত্রকোনাঃ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে অতি দরিদ্রদের ভিজিডি কার্ড করা জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক মেম্বারের বিরুদ্ধে। কার্ড প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা চান মেম্বার এমন অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযাগ দিয়েছেন কয়েজন ভুক্তভোগী। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলার মাঘান-শিয়াধার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রনক মিয়ার বিরুদ্ধে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহম্দে আকুঞ্জি মঙ্গলবার অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়টি তদন্ত করতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত বুধবার এ ঘটনায় অভিযোগ দেওয়া হয়।

এর মধ্যে টাকা চাওয়ার বিষয়ে মেম্বার রনক মিয়া ও তার সহযোগী বাদশা মিয়ার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ওই কল রেকর্ডে- ‘মেম্বার তার সহযোগী বাদশাকে প্রতি ভিজিডি কার্ডে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য বলে দিচ্ছেন। এত টাকা মানুষ দিতে চায় না বাদশার এমন জবাবে মেম্বার বলেন- তাহলে সাড়ে তিন হাজারের কম নিস না।’

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাঘান-শিয়াধার ইউনিয়নের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রনক মিয়া এলাকার লোকজনের কাছে ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার করে টাকা চেয়েছেন। কারো কারো কাছে মেম্বার তার সহযোগী বাদশা মিয়ার মাধ্যে টাকা চেয়েছেন। পরে তিনি সবাইকে কার্ড প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা দিলেই হবে বলে জানিয়েছেন।  এ ঘটনায় বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কুড়েরপার গ্রামের সুজন মিয়া, বিনা আক্তার, হেলেনা আক্তার, পুতুলা আক্তার, রাজিয়াসহ বেশ কয়েকজন ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতি দরিদ্রদের জন্য ভিজিডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। প্রতি কার্ডের বিপরীতে একজন দরিদ্র মানুষ প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পাবেন বিনামূল্যে। যাচাই বাচাই করে  এ তালিকা ফাইনাল করেন সংশ্লিষ্ট মেম্বার।

অভিযোগকারী মাঘান ইউপির ছয় নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক  মো. সুজন মিয়া জানান,  আমার এক আত্মীয়র জন্য ভিজিডি কার্ড বানাতে গিয়েছিলাম মেম্বারের কাছে। মেম্বার বলেছে-পাঁচ হাজার টাকার কমে কার্ড করা যাবে না। এভাবেই অন্য সবার কাছে কারো কাছে পাঁচ হাজার, কারও কাছে সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। আমার কাছে টাকা চাওয়ার প্রমাণ আছে।

মেম্বারের সহযোগী সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, কল রেকর্ডে মেম্বারের সাথে কথোপকথনকারী ব্যক্তি আমিই। মেম্বার আমাকে ভিজিডি কার্ড করে নেওয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নিতে বলেছিল। কিন্তু পরে আমি আর এ কাজ করিনি।

মাঘান ইউপির ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অভিযুক্ত রনক মিয়া বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ভিজিডি কার্জ করতে কারও কাছে কোন টাকা চাইনি। অভিযোগকারী সুজনের সাথে আমার পুরনো বিরোধ আছে তাই সে এই বিষয়টাকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনে পরাজিত আমার প্রতিপক্ষের লোকজন। আমার ওয়ার্ডে মাত্র ১২টি ভিজিডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। কল রেকর্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার সাথে অন্য বিষয়ে কথা হয়েছে। ভিজিডি কার্ডের টাকার বিষয়ে নয়। তবে এ বিষয়ে আর কোন জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে থাকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুমানা রহমান বলেন, এ বিষয়ে গত রোববার আমি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। এখনও কাজ শুরু করিনি। কাল-পরশু দুই পক্ষকে ডেকে তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ চাইব। পরে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহম্দে আকুঞ্জি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএস