সাংগঠনিক ভারে স্থবির

সম্মেলনের অভাবে গতিশীলতা নেই জাতীয় পার্টির সৈয়দপুর নেতৃত্বে

জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জুন ১, ২০২২, ০১:৪৫ পিএম

নীলফামারীঃ সৈয়দপুরে জাতীয় পার্টি সাংগঠনিক ভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। গতিশীলতা নেই নেতৃত্বে। দীর্ঘদিন ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে সংগঠন। কবে নাগাদ সম্মেলন হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। জাতীয় পার্টির মাঠ পর্যায়ের একাধিক নেতা কর্মী অভিযোগ করে বলেন দলের এমপি আহসান আদেলুর রহমান কর্মীবান্ধব নন। সৈয়দপুরে কখন আসেন আর কখন যান তা দুইচারজন শহুরে নেতা ছাড়া অন্যদের জানার সুযোগ হয় না। ব্যক্তিগত তো দূরের কথা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও তাকে মেলা ভার। করোনা কালের দুই বছর দলের এমপি সংগঠনের নেতাকর্মী ও জনগনের কাছে থাকাতো দূরের কথা কাউকে হাই হ্যালো করেছে বলে মনে হয় না। তাদের কথা, দীর্ঘদিন ধরে দল আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি হচ্ছে না। সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে দলের গতি বৃদ্ধি পায়। কর্মীরাও পায় আস্থার যায়গা। যা দলের নেতাকর্মীদের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। দলের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় যুব সংহতির সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৯ মে। তিন বছর মেয়াদি এ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ৫ বছর আগেই। অথচ পুরোনো কমিটি দিয়েই সংগঠন চলছে। শুধু জাতীয় পার্টিই না দলের অঙ্গ সংগঠন, জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় মহিলা পার্টি, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ও জাতীয় ওলামা পার্টি কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তব উপস্থিতি চোখে পড়ার মত নয়। তার মূল কারণ ওইসব অঙ্গ সংগঠনের সম্মেলন হয়নি দীর্ঘদন ধরে। ফলে নতুনরা নেতৃত্বে না আসায় স্থবির হয়ে পড়েছে কার্যক্রম বলে অভিযোগ করেন তারা।তবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কথার সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের কথায় সামান্য ফারাক মিলেছে।

কথা হয় জাতীয় পার্টির উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক, সদস্য সচিব জিএম কবির মিঠু ও সৈয়দপুর পৌর শাখার আহ্বায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন এবং সদস্য সচিব আলতাফ হোসেনের সঙ্গে। তারা যা বলেছেন তা পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে দলে আছি। দল থেকে পাওয়ার জন্য নয়, মায়ার কারণে আছি। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে পছন্দ করে। মানুষের উপকার করতে চাইলে যে কোন জায়গা থেকে করা যায়। সংগঠনকে মানুষের মাঝে টিকিয়ে রাখতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছি। দেশব্যাপি জাতীয় পার্টির সুনাম আছে। দেশের উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি করেছেন প্রয়াত পল্লীবন্ধু আলহাজ্ব হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। বাস্তবতা বিবেচনায় বড় দলের সঙ্গে থেকে দলের ভিত্তি জাতীয় ভাবে আমরা মজবুত করতে চাইছি। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফের জাতীয় পার্টিই ক্ষমতায় আসবে।

সংগঠনে স্থবিরতা ও সম্মেলন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নেতা জানান, স্থানীয় এমপি আহসান আদেলুর রহমান আদেল জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ইউনিটগুলোর সম্মেলন করায় দায়-দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়। তিনি চাইলেই সম্মেলন হবে। তার মতে দলের নেতাকর্মীদের ধরে রাখার জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শুধু জাতীয় পার্টি নয়, আমি সবদল ও সবমতের মানুষের জন্য কাজ করতে চাইছি। আমি মনে করি কাজের মাধ্যমেই সৈয়দপুরে জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত হবে।

আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন বলেন, কেন্দ্রীয় ভাবে সম্মেলন করার চাপ না থাকায় আমাদের ইউনিটগুলোতে সম্মেলন হচ্ছে না। তার মতে সম্মেলন সময়মত হলে নতুন নতুন নেতৃত্বের 
সৃষ্টি হয়। সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফিরে পায় প্রানচাঞ্চল্য। এ জন্য সম্মেলন খুবই প্রয়োজন। তাছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি না থাকায় দলের কর্মকান্ড সীমিত হয়ে পড়েছে। তার আশা আগামী ২০২৩ সালের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। সেই লক্ষ্যকে ঘিরেই এ বছরের যে কোন সময় সম্মেলন হবে বলে তিনি ধারণা পোষন করেছেন। জিএম কবির মিঠু বলেন, আমরা অবশ্যই বিরোধী দল।

কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি দেয়া হলে তা পালন করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর সংগঠন চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক জটিলতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হচ্ছে না। দলে জবাবদিহিতা শিথিল হয়েছে। ফলে সম্মেলনে বিলম্ব ঘটছে। এ ছাড়াও করোনাকাল ছিলো দুই বছর।

তিনি আরো জানান, সম্মেলন হলে দলের গতিশীলতা আসে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর। অবশ্য এমপির সহযোগিতা পেলে আমরা দলকে সুসংগঠিত করবো সম্মেলনের মাধ্যমে।

দলের পৌর শাখা ইউনিটে সঠিক সময়ে সম্মেলন না হওয়া প্রসঙ্গে আলতাফ হোসেন বলেন, নিয়ম মতে আহ্বায়ক কমিটি ছয় মাসের মধ্যে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে। সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমরা পৌর শাখা শহরের ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ড সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছি। কিন্তু এমপির অসহযোগিতার কারণে অবশিষ্ট পাঁচ ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়নি। গঠন হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। এমন অবস্থায় দল স্থবির হয়ে 
পড়েছে। নামকা ওয়াস্তে জাতীয় পার্টি চলছে। তিনি আরো বলেন এমপির সকল ধরনের সুবিধা থেকে দলের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত। এ জন্য এমপিও স্থানীয় ভাবে দলের কাছে আস্থা হারাতে চলেছে। যথা সময়ে সম্মেলন না হওয়ায় দলের গতি মন্থর হয়ে গেছে। সেজন্য দ্রুত সম্মেলন করা প্রয়োজন উপজেলা ও পৌর শাখার।

এদিকে এমপি আহসান আদেলুর রহমান আদেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছেন জাতীয় যুব সংহতির সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান ভুট্টো। তিনি অক্ষেপ করে বলেন এমপির অসহযোগিতার কারণে দলকে সুসংগঠিত করা যাচ্ছে না। এমপি আর কর্মীদের মাঝে দিনদিন দূরত্ব বাড়ছে। এখনও সুযোগ আছে, তিনি কর্মী বান্ধব হলে সাধারণ মানুষ যেমন উপকৃত হবে তেমনি দলও হবে শক্তিশালী।

এমবুইউ