সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বছরের পর বছর দখল, উদ্ধারে নেই কোন উদ্যোগ

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি এপ্রিল ১৬, ২০২২, ০৩:৩০ পিএম

পটুয়াখালীঃ মহিপুরে বছরের পর বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০.৩৮ একর জমি দখল বিদ্যালয়ের জমি এভাবে বেদখল হলেও উদ্ধারের উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা মাঝে মধ্যে সরেজমিন ঘুরে দায়িত্ব শেষ করছেন। স্কুলের জমি দখল করে
২০টি পরিবার বসবাস করছেন।

স্কুলের জমিতে বসবাসকারী দখলদাররা হলেন, পনু, বেলায়েত, জাফর, জমিরুল, শহিদুল ইসলাম, মহসীন, হুমায়ুন, হাবিব, জামাল, সোহাগ, মানিক, নাসির, ইউনুচ, মহিমা, খাদিজা, আঃ আজিজ, নুরু আকন, বেল্লাল হোসেন, আবুল কালাম, আ: জলিল হাওলাদার।

উল্লেখ্য, জেএল ৩৪ নম্বর লতাচাপলী মৌজার এসএ ৬২৯ নম্বর খতিয়ানে ৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ১৪.৩৮ একর জমি রেকর্ডভুক্ত আছে। বেদখল হওয়ার কারণে বর্তমান বিএস জরিপে জেএল ৬০ নম্বর লতাচাপলী মৌজার বিএস ০২ নম্বর খতিয়ানে ১২৫৮, ১২৫৯, ১২৬০, ১২৬১, ১৩৪৭, ২০১৯, ২০২০, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪, ২০২৫, ২০৭৬, ২০৭৮ নং দাগসমূহে ৯.৮৯ একর জমি রেকর্ডভুক্ত হয়। বাকী ৪.৪৯ একর জমি ০১নং খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে। এদিকেবিদ্যালয়ের নামে বিএস জরিপে ৯.৮৯ একর জমির রেকর্ড বিদ্যমান থাকলেও স্কুলের দখলে আছে মাত্র ৪.০০ একর বাকী ৫.৮৯ একর জমি স্থানীয় বাসিন্দারা দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে পুকুর খনন করে ভোগদখল করছেন। ২০০৭ সালের সিডর পরবর্তীতে লতাচাপলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীরহাটের পশ্চিম পাশের পুরানো বেড়িবাঁধ সম্মুখে একটি জলকপাট ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন বেড়িঁবাধটি নির্মিত হয়েছে স্কুল এবং মোকলেচ মোল্লা ও মনির হোসেনের জমিতে। কিন্তু স্কুল ও জমির মালিকরা অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের কোন টাকা পায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়,  স্কুলের জমিতে স্কুভিটর (ভেকু মেশিন) দ্বারা পুকুর  খনন করছেন বেলায়েতের ছেলে জহিরুল ইসলাম ও মা মাজেদা বেগম। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পাউবো বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজ চলছে। কিন্তু পাউবো’র নতুন বেড়িবাঁধটি সম্পূর্ণ স্কুলের জমির উপর দিয়ে গেছে। ৪৮নং পোল্ডারের আওতাভুক্ত পাউবো বেড়িবাঁধের দু’পাশের স্কুলের জমি। এসএ ও বিএস নকশানুযায়ী বেড়িবাঁধের ঢাল বাদে স্কুলের জমির সীমানা। কিন্তু দু’পাশে অত্যন্ত ২০টি পরিবার বসবাস করছেন। এমনকি স্কুলের জমিতে কেউ কেউ পুকুর খনন করেছেন, কেউ আবার গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন।

স্কুলের জমিতে বসবাসকারী আ: জলিল বলেন, আমরা প্রথমে খাস জমি ভেবে বসবাস শুরু করেছি। পরবর্তীতে শুনেছি স্কুলের জমি। এখন স্কুল কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমি মেনে নিবো।

আরেক দখলদার মহসীন বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধের খাস জমিতে বসবাস করছি। স্কুলের জমি তা আমার জানা নেই।

৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো: নাসির উদ্দিন জানান, দীর্ঘ বছর যাবৎ স্কুলের জমি স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধভাবে দখল করে বসবাস করছেন। তাদের কাছে কোন কাগজপত্র না থাকলেও তারা স্বেচ্ছায় জমি ছেড়ে যাচ্ছেন না। অবৈধ দখলদারদের আইন অনুযায়ী উচ্ছ্বেদ করা হবে। আমি ইতোমধ্যে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ শুরু করেছি।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল বাসার বলেন, স্কুলটির নামে এত জমি আছে তা আমার জানা ছিলো না। আমি সম্প্রতি বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে জমি দখলমুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে বলছি। আমি ম্যানেজিং কমিটিকে জমি উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার মো: মনিরুল ইসলাম জানান, স্কুল কমিটি তাদের জমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাঁধা প্রদান করেছেন। আমি কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছি। স্কুল কমিটির অভিযোগের সত্যতা রয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার নিকট এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। তারপরও আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার নিকট আবেদন করলে সরেজমিনে পরিমাপপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাসেল কবির মুরাদ/এমএম