ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর স্বপ্ন এখন মরিচীকা মতো!

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি এপ্রিল ২০, ২০২১, ০৫:৫৬ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

ঠাকুরগাঁওঃ উত্তরের  সীমান্ত কোল ঘেঁষা জেলাগুলোর একটি ঠাকুরগাঁও। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকে এ  জেলায় তেমন কোনো বড় শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। এর কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থা কারনে তাই রাজধানীর কোনো শিল্প উদ্যোক্তা এই দুটি জেলায় কোনো ভারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেনা।

এক সময় ঐতিহ্যের ও জনপদছিল  ঠাকুরগাঁও। আজ হারিয়ে গেছে পুরোনো সেই ঐতিহ্য বিট্রিশ আমলে  প্রতিষ্ঠিত অনেক পুরোনো মসজিদ, মন্দির,  রয়েছে দু একজন রাজার বাড়ি। তাছাড়া ১৯৪৫সালে  বিট্রিশ আমলে  প্রতিষ্ঠিত প্রায় আড়াইশ একর জমির উপর নির্মিত হয়  ঠাকুরগাঁও বিমান  বন্দরটি। বিমান বন্দরটি চালু হয় ১৯৬৬সালে।

মুক্তি যুদ্ধের সময় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ১৯৭৭-১৯৮১ সাল পর্যন্ত ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট যাতায়াত করেছে, তারপর বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবন্দরটি  রানওয়ে দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফিট এবং প্রস্থ ৬শ ফিট, বিমান বন্দরটিতে একটি টার্মিনাল ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। প্রায় আড়াইশ একর জমির মধ্যে, বর্তমানে ১৫০ একর জমিতে সরকারি ভাবে অথবা লিজ প্রদান করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। পাকিস্থান সরকার আইয়ুব খান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সময় চালু থাকলেও বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর চালুর লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি সংস্কার করা হয়। পরে সেটি আর চালু হয়নি।

তৎকালীন আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিমানের লোকসান হয়েছিল। যা খুব স্বাভাবিক ছিল। অতঃপর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মাঝে ৪০ বছর গড়িয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বন্দরটি চালু হওয়া এখন সময়ের দাবী। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের প্রায় ৮০% যাত্রী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এবং দিনাজপুরের। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর থেকে ১০-১৫ মিনিটে ভারতের বাগডোগরা বিমানবন্দরে অবতরণ করা সম্ভব, ট্রানজিট ফ্লাইটে  আশেপাশের কয়েকটি দেশে যাওয়া সম্ভব।

অথচ একটি সময়োপযোগী আন্তরিক সিদ্ধান্তের জন্য বঞ্চিত হচ্ছি ৩ টি জেলার মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে অর্থনীতি। ২০১৬ বিমানবন্দরটি চালু করার কথা থাকলেও আর চালু হয়নি। সেসময় বর্তমান সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ছিলেন রাশেদ খান মেনন।

এখানে এসে তিনি ঠাকুরগাঁও এর বিমানবন্দরের  অবকাঠামো পরিদর্শন করেন। পরে সেখানে তিনি বিমানবন্দর চালু করার বিষয়ে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।  রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে আড়াই’শ একর জমির ওপর নির্মিত এ বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের সব ধরনের অবকাঠামো রয়েছে। এটি চালু করতে তেমন কোনো খরচ হবে না। এটি চালু করার জন্য যা দরকার, আমরা তিন মাসের মধ্যে সে কাজ শুরু করব।’ সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করার অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পঞ্চগড় স্থলবন্দর চালু হলে এ এলাকায় বিমান লাভবান হবে ।কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২০১৮ মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা আগমনেই বিমান বন্দর চালুর স্বপ্ন দেখছিল ঠাকুরগাঁওবাসী। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখনও মরিচীকার মত হয়ে গেছে। কবে চালু হবে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরের, কবে পুরণ হবে ঠাকুরগাঁওবাসীর স্বপ্ন?

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলেও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চালুর কারণে এই এলাকার মানুষের মাঝে উন্নয়নের সঞ্চার ঘটবে বলে বিশিষ্টজনেরা মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এবং পাশে ভারতের বড় বড় শহর থাকায় এ পাশ দিয়ে ভারতে বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করা গেলে আরো বেশি উন্নয়ন করা সম্ভব বলে মনে করে এ এলাকার সুধীজন।

বিশিষ্টজনেরা  জানান, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর সিদ্ধান্ত বারবার হয়েছে কিন্তু পরে আলোর মুখ দেখেনি বিমানবন্দরটি। বিমানবন্দরটি চালু হলে শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষই সুবিধা ভোগ করবে না বরং আশের পাশের কয়েকটি জেলায় কয়েক লাখ লাখ মানুষ এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। জেলাটি বাণিজ্যিক জেলায় পরিণত হলে বেকারত্বও দূর হবে।

ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বিমানের টিকিট বুকিং দেয়ার জন্য রয়েছে মোট ৫টি বুকিং অফিস। প্রতিদিন এ অফিসগুলোতে গড়ে ৫৫-৬০ টিকিট বুকিং হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য। এ অবস্থায় ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলে পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ ঠাকুরগাঁওয়ের লোকজন সহজে এ বিমানবন্দর দিয়ে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে পারবে।

ঠাকুরগাঁও শরীফ বিমান এয়ারলাইন্সের মালিক সাকের উল্লাহ জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের টিকিট অনেক বিক্রি হয়। সেই পরিমাণ সেবা দিতে আমরা পারছি না। তাই বেশির ভাগ মানুষ টিকিট না পেয়ে ফিরে যায়। ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর চালু হলে বিমান খাত লাভজনক হবে ও মানুষ কম সময়ে দ্রত বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছাতে পারবে। অন্যদিকে বিমানবন্দরটি চালু হলে ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এটির সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় ঢাকার ব্যবসায়ীদের এই অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহ নেই। যদি শিবগঞ্জ বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়। তাহলে এই এলাকায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ফলে মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। কার্গো বিমান চালু হলে অন্য জেলা থেকে মালামাল পরিবহন করা যাবে এবং এ এলাকার মালামাল সহজে ও কম খরচে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে। ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামীলীগিরে সভাপতি জনাব মুহম্মদ সাদেক কুরাইশী বলেন, সৈয়দপুর বিমান বন্দর কাছাকাছি হওয়ার কারনে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি এখনও চালু হয়নি। তবে বিমানবন্দরটি  চালুর জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি বর্তমানে এখন চালু হলে জেলার উন্নতি হবে কৃষি, ব্যবসা বানিজ্য, চাকুরি  ও যাতায়াতে ব্যবস্থার এমন  প্রত্যাশা সকলের। ঠাকুরগাঁয়ের জনগনের দাবি বর্তমান মাননীয় প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা যেন এটি চালু করে ঠাকুরগাঁওবাসীর  স্বপ্ন পুরন করেন। ঠাকুরগাঁও আবার যেন তাঁর পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পায়।

আগামীনিউজ/এএস