নিন্ম সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারি অর্থ লোপাট করে যাচ্ছেন ঠিকাদার নুমংপ্রু মারমা

নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৩:৪১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানঃ নির্মান কাজে নিন্ম মানের ইট, বালি ও সিমেন্টের মিশ্রনে ফাঁকি দিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করে যাচ্ছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার নুমংপ্রু মারমা টাইগার নামের এক ঠিকাদার। তিনি জনসংহতি সমিতির প্রভাবশালী নেতা ও যুব সমিতির সভাপতি। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেনেজ এমনকি ধর্মীয় উপসানালয় নির্মাণেও খুবই নিন্ম মানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। একাধিক পত্রিকায় নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ করে সরকারি অর্থ লোপাটের সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে বার বার তিনিই ঠিকাদারি কাজ পাচ্ছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের থানচিতে নুমংপ্রু মারমা টাইগারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ৯ টি কাজ চলমান, কিছু সম্প্রতি শেষ হয়েছে কিছু চলছে। আর এই চলমান এমং শেষ হওয়া কাজের সবগুলোতেই একেবারে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও রাস্তা নির্মাণের এক সপ্তাহ পরে তা উঠে পড়েছে আবার কোথাও কালভার্ট সংস্কার করা হলেও মাস না পেরোতেই আগের অবস্থায় চলে এসেছে। 

জানা গেছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চলছে থানছির বিদ্যামনি পাড়ায় গীর্জা নির্মাণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গীর্জা নির্মাণে ইট, বালু, রড ও সিমেন্ট থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সবই একদম নিন্মমানের।গীর্জা নির্মাণের কাজ চলমান হলেও গীর্জা প্রবেশের রাস্তার কাজ এখনও শুরু হয়নি।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও মানুষ অর্থ খোঁজে। দুর্নীতি করতে ঠিকাদারেরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় দেননি। এ কাজ করার চেয়ে না করায় ভালো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটা গীর্জা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিলেন তবে এখানে যে সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ করা হচ্ছে তা দশ বছর  স্থায়িত্ব হবে কি না আমাদের জানা নেই।

এ বিষয়ে বান্দরবান পার্ব্যত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার হোসেন আগামী নিউজকে বলেন, নিন্ম মানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমি অবশ্যই এখানে প্রকৌশলী পাঠাচ্ছি এবং খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

এদিকে থানচি সদর হতে ছাংদাক পাড়া যাওয়ার রাস্তায় উপর একটি জনগুরুত্বপূর্ণ এক সাথে ২টি কালভার্ট সেতুটি গত এক বছরের ৩ বার ফাঁটল হয়ে গত তিন মাস ধরে মেরামত বা সংস্কারের সংশ্লিষ্টরা নিরব ভূমিকা পালন করছেন। উপজেলার অভ্যন্তরীনভাবে  জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়া যানচলাচলে বিঘ্ন ধরার জুমের ফসল ,কাঁচা মালামাল,ফলজ্য বনজ্য দ্রব্যাদি পরিবহনের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। 

উপজেলা  সদর হতে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে ছাংদাক পাড়া যাওয়ার রাস্তা উপর কয়েকটি কালভার্ট সেতুতে নির্মানের সময় স্থানীয় বালির পাথর ব্যবহারের কারনে গত এক বছরে ৩বার বিশাল গর্ত ও ফাঁটল ধরেছে । এ রাস্তায় এবং কালভার্ট সেতু দিয়ে জিনিংঅংপাড়া,শাহজাহান পাড়া, তংক্ষ্যং পাড়া, হাবরু হেডম্যান পাড়া, ছাংদাক পাড়াসহ অর্ধশতাধিক পাড়াবাসী যাতায়াত করেন। কালভার্ট সেতুটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়াই দৈনিক ৫ শতাধিক জনসাধারন ও জুমিয়াদের জুম ও ফলজ প বনজ্ বাগানের উৎপাদিত ফসল পরিবহনের সুযোগ না থাকায়  জুম ও ফলজ্য বনজ্য বাগানে উৎপাদিত ফসল আম, কাজুবাদাম, মার্ফা, আদা, হলুদ, কলা  ইত্যাদি বাজারজাত করতে না পাড়ায়  ঐ সব উৎপাদিত ফসল গুলি পঁচন ধরেছে । অপরদিকে উপজেলা সদর হতে অভ্যন্তরীন যোগাযোগে জনদুর্ভোগে পৌহাইতে হয়েছে।   
 
থানচি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও)এর সূত্রে জানা যায়, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে অর্থায়নের  উপজেলা  সদর হতে ছাংদাক পাড়া যাওয়ার রাস্তার উপর গত কয়েক বছর মধ্যে ৩টি কালভার্ট সেতু নির্মান করা হয়েছে । প্রতিটিতে ২৭ লক্ষ টাকা  করে মোট  ৮১ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে । নির্মানের অক্রুটিপূর্ণভাবে শতভাগ  বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠ অধিদপ্তরে বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। যে কালভার্ট সেতুটি ফাঁটল ধরেছে সেটিও নুমংপ্রু মারমা (টাইগার) ঠিকাদারকে বাস্তবায়নে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল । 

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ঔ ঠিকাদার একাধারে  ২০১৯-২০ সালে  বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নের প্রায় কোটি টাকা উপরে  ছাংদাক পাড়া বৌদ্ধ বিহার ভবন নির্মান,  থানচি রেষ্ট হাউজ হতে বাজার পর্যন্ত রাস্তা নির্মানসহ বহু নির্মান কাজের স্থানীয় বালির পাথর, পুরোনো রড, সিমেন্ট ব্যবহার করে যাচ্ছে । 

এদিকে থানচি সড়ক হতে সাখই মুরুং কমান্ডার পাড়া পর্যন্ত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা সংস্কার করা হলেও এক মাসের মাথায় রাস্তা পুরোনো চেহাড়ায় ফিরেছে। কোন মত পিচ ঢালাই দিয়ে এই সংস্কার কাজ করেছে ঠিকাদার টাইগার।

স্থানীয়দের ভাষ্য, পরিকল্পিতভাবে ঔ সিন্ডিকেট ঠিকাদার সংস্থা  বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন সাফল্য অর্জনকে সংকটে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন ।

তবে ঠিকাদার নুমংপ্রু মারমা টাইগার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ভালো মানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করেই কাজ করছি। তবে রাস্তা ও কালভার্ট সংস্কারের প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়ে যান। 

আগামীনিউজ/এএইচ