জাবিতে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীর বিরুদ্ধে দোকান ভাঙ্গচুর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ

জাবি প্রতিনিধি আগস্ট ৫, ২০২২, ১১:২৮ পিএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকার মোবাইল এজেন্ট ব্যাংকিংসহ খাবার দোকানে ভাঙ্গচুর, দোকানমালিককে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দোকান মালিকেরা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ইতিহাস বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রীতম আরিফ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিপ্লব এবং ৪৪তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে  তারেক মীর, আন্তর্জাতিক সম্পক বিভাগর ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর সিদ্দিকী, ৪৭তম ব্যাচের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের কামরুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের শাহরিয়ার হিমেল, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের গালিবসহ ১৫ থেকে ২০জন বটতলার ‘মনির বিকাশ, হোটেল সিয়াম, ‘রবিউল টি-স্টোর’, এবং ‘ওয়াও ফুড’ দোকান ভাঙ্গচুর ও টাকা পয়সা ছিনতাই করে।’

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এসময় তারা হোটেল সিয়াম থেকে ৮ থেকে ১০  হাজার, রবিউল স্টোর থেকে ৪-৫ হাজার টাকা ছিনতাইসহ তাদেরকে মারধর করে। এ ঘটনায় হোটেল সিয়ামে কর্মরত সাবেদ পায়ে,  রবিউল কোমড়ে এবং ওয়াও ফুডের মালিক হাতে আঘাত পান। এসময় তারা আনুমানিক ৭-১০ হাজার টাকার খাবার নষ্ট করে।

অভিযোগপত্রে দোকানমালিকরা ভাঙ্গচুর, লুটপাট এবং মারধরের বিচার দাবি করেন। অভিযুক্ত তারেক মীর বলেন, আমি ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। আমার ভোকাল কর্ড জনিত অসুস্থতার জন্য তিনি তার হলের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাগর সিদ্দিকী বলেন, জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ওইদিন আমি ভর্তি পরীক্ষার্থীদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। টেন্টের কাজ শেষ করে কিছু এপ্লিকান্টকে পাঠাতে গিয়ে রাত হয়ে যায়। পরে রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। অভিযোগটি মিথ্যা এই কারণে যে, আমি হলের বিষয় শুনে অনেক পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি প্রক্টরিয়াল বডির স্যারেরা আসছেন পাশাপাশি সিনিয়রেরা মিমাংসার জন্য বসছেন।

ওইসময় রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের ছাত্র গৌতম কুমার দাস বলেন, "ওই সময় কোন রকমের দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি শুধুমাত্র আমরা প্রতিবাদ জানানোর জন্য  ওই জায়গাতে অবস্থান নিয়েছিলাম আর এতেই দোকানদাররা ভয় পেয়ে সব দোকান বন্ধ করে ফেলে। আর যদি দোকান ভাঙচুরই করতাম তাহলে আজকে তারা দোকান খুলতে পারতো  না।"

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিপ্লব, প্রীতম ও গালিবকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যায় নি। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল এবং সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান লিটনকে একাধিকবার ফোন করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়  নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, সন্ধ্যায় অভিযোগ হাতে পেয়েছি। নির্ধারিত পন্থায় প্রোক্টরিয়াল বডি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে খেলায় মাঠে ধাক্কাকে কেন্দ্র করে মারামারি ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী মওলানা ভাসানী হল সংলগ্ন বটতলা এলাকায় অবস্থান নেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই দিন বিকেলে খেলার মাঠে মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ কাপালির সাথে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগকর্মী খালিদের ধাক্কা লাগে এবং খেলার মাঠে একদফা মারামারি হয়।

পরে এই ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাসানী হল আক্রমণের উদ্দেশ্যে বটতলায় অবস্থান নেন।এসময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগকর্মীরা ওই এলাাকার বৈদ্যুতিক বাতি ভেঙ্গে এক ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেন। ঘটনাস্থলে তাদের হাতে লাঠি, রড় এবং দেশীয় অস্ত্র বহন করতে দেখা যায়। প্রায় দেড় ঘন্টা এই অবস্থা চলমান থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের আশ্বাসে তারা হলে ফিরে যান।

এসএস