যুবসমাজের অবক্ষয়

বদরুল আরেফিন  আগস্ট ৪, ২০২১, ০৮:৩১ পিএম
ছবিঃ সংগ্রহিত

ঢাকাঃ জীবনের উদ্দেশ্য কী? - এমন একটি দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া আমার পক্ষে একটি বাতুলতা মাত্র। 

জীবনের স্বর্ণালি সময় যৌবন। আর জীবন সম্পর্কে বর্তমানে যুবকদের যে খেয়াল তা নিয়ে আমার অল্প দিনের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণজাত মূল্যায়ণ এই যে, যুব সমাজে বিরাট এক নৈরাজ্য আর হাহাকার বিরাজ করছে। যুবকদের মধ্যে বাসা বেঁধেছে করালগ্রাসী পুঁজিবাদী চেতনা। তাদের ধারণা অর্থ বা বিত্তের পাহাড় গড়ে তোলাই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। সমাজে জেঁকে বসতে হলে এই অর্থের কোনো বিকল্প নাই। এর ছেলে, ওর ছেলে সবাইকে ডিঙিয়ে যেতেই হবে, অন্যথায় সমাজভুক্ত হওয়া যাবে না। গগনচুম্বী ইমারত গড়ে তুলতে না পারলে বুঝি জীবনের ষোল আনাই বৃথা। অন্তরাত্মার খোরাক নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। 

এমন স্থুল মানসিকতা তৈরি হলো কেন? এই সমস্যার জন্য দায়ী ইদানীন্তন সামাজিক অস্থিরতা, অসুখ আর অপ্রতিরোধ্য এক পচন। আমি হলফ করে এই সামাজিক ব্যবস্থাকেই দায়ী করবো। কেননা, সমাজ মরুর কাজই হলো তরুণ তরুর রস শুষে নেওয়া। অথচ এসকল তরুর গোড়ায় নিয়মিত জল ঢাললে কি আশ্চর্য ফলই না পাওয়া যেত! সমাজ গঠনে যাদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার কথা তারা নিজেরাই অর্থ আর বিত্তের মোহে অন্ধ। মানুষ ও তার চরিত্র মূল্যায়ণের নিমিত্তে তারা যে মানদন্ডটি স্থির করেছেন তা সামগ্রিকভাবেই আর্থিক। এতে করে যুব সমাজে ভালো থাকার যে একটা তুলনামূলক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা দেখে সবাই বহত খুশ হলেও, এর পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ!

হাল আমলে পরিচ্ছদ বিন্যাসের যে অনাসৃষ্টি দেখা দিয়েছে তা যে সমস্যা সৃষ্টি করছে না, তা কিন্তু জোরগলায় বলার কোনো উপায় নাই। বাড়ছে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি। প্রেম ভালোবাসার নামে চলছে কাম সাধনা। 

এ দায় কার? এর জন্য অবশ্যই আমাদের সংস্কৃতি কর্মীরা দায়ী। তাদের হিতাহিতজ্ঞানশূন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের চর্চার কারণেই সমাজে এহেন কুরুচিপূর্ণ অপসংস্কৃতির অনুগমন ঘটছে।  চলচিত্রে ফিলহাল দেখা মেলে একজন যৌন নিপীড়নকারী সিনেমার নায়ক বনে যায়। সুতরাং একজন যৌন নিপীড়নকারীই হয়ে উঠছে আমাদের মডেল।

অথচ তারা আমাদের সংস্কৃতির ধারক, বাহক। আমাদের কল্পনায় ও চিন্তায় সঞ্জীবনী রস যোগানো তাদের ধর্ম। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে লড়াইয়ের শক্তি ও সাহসের মূলমন্ত্র - ইতিহাসচেতনা, স্বাধিকারবোধ, মানবিকতা ও অপরাজেয় নৈতিক মূল্যবোধ- তুলে দেবার দ্বায়িত্ব তাদেরই।

আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই কিন্তু সেটা কেবল কাগজে আর কলমে। আমরা এখনও পরাধীন, দাস, সাংস্কৃতিক দাসত্ব তো করেই যাচ্ছি। সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা। তাই আশা রাখি, একদিন আমাদের চৈতন্যোদয় হবে এবং আমরা এই দাসত্বের শৃঙ্খল চূর্ণ করে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে একটি নতুন সুশৃঙ্খল সমাজের বুনিয়াদ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।

লেখকঃ বদরুল আরেফিন 
প্রভাষক, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন,
লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া৷