মহামারিতে হোস্টেলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের বেহাল দশা

জান্নাত শ্রাবণী জুন ৮, ২০২০, ১১:২৭ এএম
ছবি সংগৃহীত

করোনাভাইরাস মহামারির প্রার্দুভাব অব্যাহত থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আমরা কি একবার ও ভেবে দেখেছি এই সময় মেস বা হোস্টেলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের কথা? যারা টিউশনির টাকায় খাওয়া, পড়ার খরচ জোগাত, তাদের টিউশনি বন্ধ, নেই কোন কাজ কিভাবে তারা তাদের খাবার খরচ ও মেস/হোস্টেলের খরচ বহন করবে?

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং অনন্যা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ লক্ষের বেশি ছাত্র সারা দেশের বিভিন্ন শহরের বাসা বাড়ি মেস বানিয়ে থাকে। এদের বেশিরভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের।উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা সাধারণত পরিবারের সাথে থাকে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর ১৮ মার্চ মেস থেকে চলে যান প্রায় সব শিক্ষার্থী।এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা নিজেদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। সঙ্গত কারণেই তারা মেসের গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ কিছুই ব্যবহার করেননি। তবে বাড়িওয়ালা সবকিছুর বিলসহ এপ্রিলের বাড়ি ভাড়া পরিশোধের জন্য বারবার তাদের তাগিদ দিচ্ছেন।এভাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকলে, মেসে অবস্থান না করেই শিক্ষার্থীদের দিতে হবে ৭ মাসের বাড়ি বাড়া ও আনুসাঙ্গিক বিল। যেখানে এখন দেশের বেশিরভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থাই মারাত্মক রকম খারাপ। ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছে।তাদের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা মোটেই সম্ভব নয়।তাছাড়া এই অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা চাইলেও বাসা ছেড়ে দিতে পারছে না। ৭ মাস বাসায় না থেকে বিদ্যুৎ-গ্যাস ব্যবহার না করে বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হলে অনেক শিক্ষার্থী স্বাভাবিক শিক্ষা জীবনে ফিরতে পারবে না, বন্ধ হয়ে যাবে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ।
 
কিন্তু সরকারি একটি নির্দেশনা পারে সব ঠিক করে দিতে।যেহেতু মালিকপক্ষ এতদীর্ঘ সময় নিজ থেকে বাসা বাড়া মওকুফ করবে না।সরকার যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে কিছু পদক্ষেপ নেয় তাহলে বেঁচে যাবে অকালে ঝরে পড়তে যাওয়া হাজারও শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। সরকার প্রধান যদি জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মানবিক বিবেচনায় বাসা বাড়া মওকুফের অনুরোধ জানাতে পারে।তাছাড়া সরকারি সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে সকল শিক্ষার্থীদের মেস-বাসার বিদ্যুৎ,গ্যাস,পানি বিল মওকুফ করে দেওয়া। 

উল্লেখ্য, ঢাকার সব থানায় এবং অন্য শহরের থানা পুলিশের কাছে সকল মেসের মেম্বারদের তালিকা রয়েছে।রয়েছে তথ্য ফরম।কাজেই শিক্ষার্থীদের মেস সংখ্যা জানা কঠিন কোন কাজ নয়। অথবা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক মেসবাসী শিক্ষার্থীদের প্রমাণপত্র ও আইডি যাচাই পূর্বক বিশেষ অর্থবৃত্তি প্রদান।কিম্বা সহায়তার আবেদন গ্রহণ করে যাচাই পূর্বক ব্যক্তিপর্যায়ে সহায়তা প্রদান করা।

রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজের একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি শিক্ষার্থীরা পায়, তারা এই ঘোর দুর্যোগে নতুন আশার আলো দেখবে।আজকের শিক্ষার্থীরাই তো আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে।

লেখক: জান্নাত শ্রাবণী
সাংবাদিক