আর্জেন্টিনা নাকি ফ্রান্স, শেষ হাসি কার?

ক্রীড়া ডেস্ক ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ১০:১৩ এএম

ঢাকাঃ দেখতে দেখতে গত হয়ে গেল একটা মাস। ২০ নভেম্বর কাতারে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা উঠেছিল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর। সেই দিনে কাতারে জামায়েত প্রায় কয়েক লাখ দর্শক। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতার মুখোমুখি হয়েছে ইকুয়েডরের। ৩২ দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে আজ কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স।

কাতার বিশ্বকাপ এরই মধ্যে তকমা পেয়ে গেছে ঘটন-অঘটনের বিশ্বকাপ হিসেবে। শুরু থেকে আন্ডারডগদের দাপটে ঘরে ফিরে গেছে জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, মেক্সিকোর মতো পরাশক্তির দলগুলো। তবে শুরুতে ফেভারিট না হলেও একের পর এক অনবদ্য পারফর্ম্যান্স দিয়ে ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার এটি ষষ্ঠ ফাইনাল হলেও ফ্রান্সে তাদের থেকে একবার কম ফাইনাল খেলেছে।

আজ লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ফুটবল বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত লড়াই। যে লড়াই শেষে একদল সোনালি ট্রফি হাতে দেশে ফিরবে, অন্য দলের সঙ্গী হবে আফসোস! কোন দলের হাতে উঠবে স্বপ্নের ট্রফি? আর্জেন্টিনা নাকি ফ্রান্স?

বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স নাম লেখানোর পর থেকেই আলোচনা চলছে। গত বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। সে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ এখন লিওনেল মেসিদের সামনে। পাশাপাশি বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা ঘুচানোর সুযোগও আছে আলবেসিলেস্তদের। তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতে ফ্রান্স ও উরুগুয়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে আর্জেন্টিনা। দুটি করে বিশ্বকাপ জিতে তিন দলই বর্তমানে আছে সমান্তরালে। কিন্তু ফ্রান্সও বিশ্বকাপ ট্রফির দিকে পাখির চোখ করে তাকিয়ে আছে। টানা দুবার বিশ্বকাপ জিতে তারা ব্রাজিল ও ইতালির পাশে নাম লেখাতে চায়।

ব্রাজিল ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে টানা দুবার বিশ্বকাপ জিতেছে। বিশ্বকাপে এমন ঘটনা ওটাই ছিল শেষ। এর আগে ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে টানা দুবার বিশ্বকাপ জয় করেছে ইতালি। ফ্রান্স কি ব্রাজিল ও ইতালির পাশে নাম লেখাতে পারবে? আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ফুটবলীয় লড়াইয়ে এগিয়ে আর্জেন্টিনাই। আলবেসিলেস্তদের ছয় জয়ের বিপরীতে ফ্রান্সের জয় তিনটি। অতীত লড়াইয়ের পাশাপাশি বর্তমান পারফরম্যান্স বিচার করলে দল দুটির লড়াইয়ে কাউকে এককভাবে এগিয়ে রাখা বেশ কঠিন। ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম যেমন লিওনেল মেসির প্রতি সম্মান রেখে কথা বলছেন। তেমনি আর্জেন্টাইনরাও ফ্রান্সের প্রতি সম্মান রেখেই কথা বলছেন।

ফরাসি তারকা আতোয়ান গ্রিজম্যান বলে দিয়েছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই লিওনেল মেসি বিশ্বের সেরা ফুটবল তারকা। তবে আমরা বিশ্বকাপ জয়ের জন্যই খেলতে নামব।’

আর্জেন্টাইনরাও জানেন, ফ্রান্সের শক্তি অনেক। কিলিয়ান এমবাপ্পের গতির সঙ্গে লড়াই করাই বেশ কঠিন। সেখানে আছেন আতোয়ান গ্রিজম্যান এবং ওসমান ডেম্বলেদের মতো তারকা। লক্ষ্যভেদে বুড়ো অলিভিয়ের জিরুদ এখনো অতুলনীয়। ডিফেন্সে রাফায়েল ভারানেরা বর্তমান বিশ্বের সেরাদের সারিতে। তাই বলে ফ্রান্সকে মোটেও ভয় পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তাদের সামনে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটা বেশ ভালোভাবেই সাজিয়ে দিয়েছেন লিওনেল স্কালোনি। তারা এখন ড্রেসিংরুমে গান গায়, বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চায় তারা।

বিশ্বকাপটা জিততে চায় আর্জেন্টিনার জন্য। কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার জন্য। আর্জেন্টিনার লক্ষ্যের সঙ্গে মিশে আছে আবেগ, ভালোবাসা। পৃথিবীর কোটি কোটি ভক্তের শুভকামনা। অন্যদিকে ফরাসিরা আবেগের রাশটা টেনে রেখে বাস্তবতাকে সঙ্গে নিয়ে সামনে চলছে। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে কোনো ভুল করতে রাজি নন দিদিয়ের দেশম।

আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য অবশ্য একটা সুখবর আছে। ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে যে আকাশি নীল-সাদা জার্সি গায়ে ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা, লিওনেল মেসিরা এবার সেই একই রঙের জার্সি গায়ে খেলতে নামবেন। এই খবর আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের মধ্যেও নাকি দারুণ উৎসাহ এনে দিয়েছে। ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। আজ সেই ফাইনালে কি তৃতীয় ট্রফিটা জিততে পারবে তারা! দুই দলেই আছে বিশ্বমানের ফুটবলার। যারা নিজেদের কাজটা শতভাগ করতে জানেন। এ কারণেই ফাইনালের লড়াইটা হয়ে উঠবে আরো সুন্দর। আরো মধুর। আরো কঠিনও নয় কী! আর্জেন্টাইন সমর্থকরা দোহা দখল করে বসে আছে। তারা বিশ্বকাপ ট্রফি ছাড়া ঘরে ফিরতে রাজি নয়। ফরাসি সমর্থকের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও তারাও দাবি ছাড়ার পাত্র নয়। ফুটবলারদের পাশাপাশি দর্শকদের মধ্যেও চলছে কথার লড়াই। এখন দেখার বিষয় শিরোপা উঠছে কার হাতে- আর্জেন্টিনা নাকি ফ্রান্স।

বুইউ