১ কোটি ৮৫ লাখ টন মাটি ফেলা নিয়ে সমস্যা

৭ বছরে ১১.৩৫ কোটি টন পলি অপসারণ, ১২শ’ কিমি. নৌ-পথ নাব্য

তরিকুল ইসলাম সুমন জানুয়ারি ২৫, ২০২০, ০৪:২৯ পিএম

অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ২৪ রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে গত সাত বছরে ৫৭০ দশমিক ৪৪ লাখ ঘনমিটার বা ১১ দশমিক ৩৫ কোটি টন পলি অপসারণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ১২শ’ কিলোমিটার নৌ-পথ নব্য করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি নৌ-পথের ৯৯৭ লাখ ঘনমিটার (ড্রেজিং কাজ বিআইডব্লিউটিএ ১৭২ লাখ ঘনমিটার, ড্রেজিং কাজ বেসরকারি-৬৩২ দশমিক ৩০ লাখ ঘনমিটার, ড্রেজিং কাজ দুর্যোগ এলাকা-১৯৩ লাখ ঘনমিটার) খননের মাধ্যমে ২৩৮৬ কিলোমিটার নৌ-পথের নাব্যতা উন্নয়নের অংশ হিসেবে উল্লেখিত অর্জন হয়েছে। ২৪টি নৌ-রুটের মধ্যে ৮টি রুটের (এমজি চ্যানেল, খাগদোন, লাউকাঠি, ভোলা নালা, কীর্তনখোলা, ইছামতি, কর্নতলী, সুরমা নদী) কাজ শেষ করা হয়েছে।

বর্তমানে ১৬টি (তিতাস, বাউলাই, নতুন নদী, রক্তি, রকশা নালা, মগড়া, কংস, ভোগাই-কংস, বুড়ি, পালরদি, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা, মধুমতি, ভৈরব, আত্রাই, দুধকুমার, নরসিংদী জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদ)। তন্মধ্যে ১০টি রুটের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ এবং ৩টি রুটের ৫০ শতাংশ এর মধ্যে এবং ৩টি রুটের কাজ শুরু হয়েছে। এসব রুটে ৩৩টি ড্রেজার ড্রেজিং কাজ করছে।

খাগদোন, লাউকাঠি, ভোলা নালা, কীর্তনখোলা, ইছামতি, কর্নতলী দিয়ে কার্গো লঞ্চ চলাচল করতে পারত না প্রকল্পে আওতায় ড্রেজিং এর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে এখন সারা বছর চলাচল করছে।

ভৈরব-ছাতক নৌ-পথে শুকনা মৌসুমে হাফলোড দিয়ে কার্গো চলাচল করতে ড্রেজিং-এর পর সারা বছর ফুললোডে কার্গো চলাচল করছে। 
খুলনা-নোয়াপাড়া নৌ-পথে প্রকট নাব্যতা সংকট ছিল, জোয়ারের সুবিধা ছাড়া এ গুরুত্ব রুট দিয়ে কার্গো চলাচল করতে পারত না। প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং-এর পর সার্বক্ষণিক কার্গো জাহাজ চলাচল করছে। মৃত বা মৃত প্রায় গাগলাজোড়-মোহনগঞ্জ, আনোয়ারপুর-তাহেরপুর, বরিশাল-পটুয়াখালী নৌ-পথের সাহেবেরহাট নালা ড্রেজিং করে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

নোয়াপাড়া নদী বন্দরের পোর্ট অফিসার মো. সামুদ পারভেজ আগামীনিউজ ডটকমকে জানান, একটা সময় ছিল ভৈরব নদী দিয়ে মালামাল নিয়ে আসা যাওয়া করতে পারতো না। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ডুবোচরে আটকে যেত কার্গো জাহাজ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ভৈরব নদীটি গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের সার, কয়লা, সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ টি জাহাজ আসা যাওয়া করে। এ নদী খননের পরে নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচল করতে পারছে।

তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম চালিকা শক্তি হলো নৌ-পথ। এ নৌ চলাচল বিঘ্নিত হলে এর ফলাফল হয় দুর্বিসহ। বিভিন্ন ঘাট এলাকায়ও নৌযান ভিড়তে সমস্য ছিল যা ড্রেজিং করে দেওয়া হয়েছে। নৌ চলাচলে এখন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তার পরেও সার ও নৌযান পরিবহণ মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিয়ত এ ভৈরব নদী সচল রাখা হচ্ছে। কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান ও ড্রেজিং করে দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকা ড্রেজিং করে এর মাটি দিয়ে প্রায় ৫ হাজার একর অকৃষি জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও ৫০০টি শিক্ষা-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এর নিচু জায়গা, খেলার মাঠ, ঈদগা মাঠ, স্টেডিয়াম, কবরস্থান, গীর্জা-মন্দির তীর্থস্থান, ইত্যাদি ভরাট করা হয়েছে। হাওর অঞ্চলের তাহেরপুর, বিশ্বম্বরপুর, মদন, নিকলি, গাগলাজোড়-ধর্মপাশা-মোহনগঞ্জ, বাঞ্চারামপুর ইত্যাদি এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার নিচু জায়গা ভরাট করে গ্রামের গরিব মানুষের, গবাদি পশুর বসবাসের জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক এবং বিআইডব্লিউট এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান আগামীনিউজ ডটকমকে জানান, বরগুনার খাগদোন লঞ্চঘাট এলাকার ৩০ হাজার ঘনফুট, ছাতক হতে ভোলাগঞ্জ নতুন নদী ১২ লাখ ঘনমিটার, কুমিল্লার হোমনা-তিতাস নদীর ৫ লাখ ঘনমিটার, পাবনা ও নাটরের আত্রাই নদীর ১৫ লাখ ঘনমিটার (৪৫ কিলোমিটারের মাটি শক্ত ও পাথুরে), নরসিংদি ও বেলাবো কটিয়াদির আড়িয়াল খা নদীর ১০ কিলোমিটার এলাকার ৬৫ লাখ ঘনমিটার মাটি রয়েছে।

এছাড়াও মংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ড্রেজিংকৃত মাটি অপসারণ করা যাচ্ছে না। এসব নদীতে জমে থাকা ৯৭ দশমিক ৩০ লাখ ঘনমিটার বা ১ কোটি ৮৫ লাখ টন (১ ঘন মিটার=১ দশমিক ৯৯টন হিসেবে) মাটি ফেলা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। জায়গার অভাবে ড্রেজিংকৃত পলি মাটি কেউ নিতে চাচ্ছেন না। আবার কটিয়াদি  আড়িয়াল খা নদীর সীমানা জটিলতার কারণে খনন করা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটি ২০১২ সালে একনেকের অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসে। এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের জুনে। এতে ব্যয় হবে  প্রায় ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।

আগামীনিউজ/টিআইএস/এএম