দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন

সোহেল মুন্সী জানুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৩:৩৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ আজ নির্যাতনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে বিশ্ব মুসলিম সর্বত্র নিষ্পেষিত। পদে পদে লাঞ্চিত ও অপমানিত। জোটবদ্ধ কুফরী শক্তি ইসলাম ও মুসলিম নিধনের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পৃথিবীর বুকে ইসলাম নামের বৃক্ষটি তার শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে জীবন্ত থাকাকে আদৌ তারা মেনে নিতে পারে না। তাই প্রতিনিয়ত তার শাসরুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ হীনস্বার্থ হাসিলের লক্ষে তারা একে চলছে, কুটিল ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। ইসলামের হাটি হাটি পা পা কালে (শুরু লগ্নে) প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর যুগে মক্কার মুশরিকরা এর চেয়েও অমানুষিক নির্যাতন মুসলমানদের উপর চালিয়েছে।

কয়েক শতক ধরে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিষ্পেষণ চলছে।সাম্প্রতিকালে এসব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মিয়ানমারে মুসলিম নিধন চলছে অনেকদিন যাবত। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ মুসলমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।এসব বর্বরতা এখনও চলছে সেখানে। শ্রীলংকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অনেক মুসলমানের জানমালের ক্ষতি হয়েছে। চীনেও মুসলিমরা অবারিত নির্যাতিত হচ্ছে। রাশিয়ার চেচনিয়া ও দাগেস্থানে মুসলিম নির্যাতন চলছে দীর্ঘকাল থেকে। আর ফিলিস্তিনরা তো নিজ আবাসভূমিতেই পরবাসী হয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কাল থেকেই। সাম্প্রদায়িক সময়ে নির্যাতন আরও বেড়েছে । ইউরোপ ও আমেরিকায়ও ইসলাম বিদ্বেষ চলছে অনেকদিন ধরে।

চীনে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন 

চীন একটি কমিউনিস্ট দেশ। সিনহুয়া (সরকারি বার্তা সংস্থা) ও সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম কর্তৃক পরিবেশিত সংবাদই একমাত্র জানার উপায় চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। ফলে চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বা সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনের খবর বাইরে আসে কদাচিৎ।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা জাতিসঙ্ঘে দাখিল করা প্রতিবেদনে চীনে গণহারে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের আটকের তথ্য দিয়েছে। ১০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রেখে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য বল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়।

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মত স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশী মিডিয়ার ওপর এখানে যাবার ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।

কিন্তু গত বেশ ক'মাস ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবরাখবর বেরুচ্ছে যে শিনজিয়াং-এ উইগুর এবং অন্যান্য মুসলিমরা ব্যাপকহারে আটকের শিকার হচ্ছে। চীনে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীদের শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করা হচ্ছে। উইঘুর পুরুষরা চীনের আটক কেন্দ্রে বন্দি। এজন্য তাদের স্ত্রীদের বাসায় তদারকির জন্য যায় সরকারি কর্তারা। কখনও কখনও সরকারি কর্মকর্তাদের বাসায়ও ওই স্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। উভয় সময়ই তাদের সঙ্গে বিবাহিত মুসলিম নারীদের একই বিছানায় থাকতে বাধ্য করা হয়। -দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট  

চীন একটি বহুজাতিক দেশ।  ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার সুবৃহৎ দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতিগোষ্ঠী ছাড়াও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বাস করে। চীনে ধর্মও প্রচলিত বেশ কয়েকটি।  বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বৌদ্ধ, তাও, ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্ম প্রধান। চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ১০টি ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তারা হলো- হুই, উইঘুর, কাজাখ, কিরগিজ, তাজিক, তাতার, উজবেক, তুংশিয়াং, সালার এবং পাওআন।

এ প্রদেশে ২৪ হাজার মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ বছরের পুরনো মসজিদও রয়েছে। এতে বোঝা যায়, এই অঞ্চলে মুসলমানদের অবস্থান খুব প্রাচীন ও সুপ্রতিষ্ঠিত।১৯৩৬ সালের জনসংখ্যার পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী চীনের কুয়োমিংতাং প্রজাতন্ত্রে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো ৪ কোটি ৮১ লাখ। মাওসেতুংয়ের নীতির পর এই সংখ্যা কমে দাড়ায় ১ কোটি। দৃশ্যত এখানকার ৩ কোটি ৮০ লাখ মুসলিম কোথায় উধাও হয়ে যায় সে ব্যাপারে সরকারি ব্যাখ্যা কখনই দেওয়া হয়নি।

তাদের মোট জনসংখ্যা দুই কোটি ৩২ লাখ (২০১২)। চীনের নানা জায়গায় মুসলমানরা বাস করলেও এই ১০টি সংখ্যালঘু জাতি প্রধানত উত্তর-পশ্চিম চীনের জিনজিয়াং (স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল), নিংশিয়া (স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল), সাংহাই, কানসু প্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত বেশি বাস করে। চীনের মোট জনসংখ্যার ১.৬৪ শতাংশ মুসলিম। সব সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলিম ২০ শতাংশ, যার ৯০ শতাংশই হুই এবং উইঘুর মুসলিম। আর চীনের ৫৮.২ শতাংশ মুসলিমের বাস জিনজিয়াং প্রদেশে।

কাশ্মীরে মুসলিম গণহত্যা ও নির্যাতনের নির্মম ইতিহাস

ভারতের অহংকার, এ বিশ্বে তারাই সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু একথা বলে না, তারাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণবাদী ও দখলদার দেশ। তার নমুনা কাশ্মির। দুনিয়ার আর কোথাও মাথাপিছু হারে এত অধিক সংখ্যক দখলদার সৈন্য নেই যা রয়েছে কাশ্মিরে। ইরাকের জনসংখ্যা তিন কোটি এবং আয়তন ১৬৯,২৩৫ বর্গমাইল। ইরাকে দখলদার মার্কিন ও তার মিত্রবাহিনীর সৈন্য সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। আফগানিস্তানের জনসংখ্যা তিন কোটি বিশ লাখ এবং আয়তন ২৫১,৮৮৯ বর্গমাইল। এবং সেখানে দখলদার ন্যাটো বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা এক লাখের মত। কাশ্মিরের জনসংখ্যা মাত্র এক কোটি এবং আয়তন ৮৫, ৮৬৬ বর্গমাইল। অধিকৃত সে কাশ্মিরে ভারতীয় দখলদার বাহিনীর সেনা সংখ্যা ৫ লাখ। অর্থাৎ প্রতি একলাখ মানুষের জন্য ইরাকে যেখানে ৫৪৫ জন এবং আফগানিস্তানে যেখানে ৩১২ জন দখলদার সেনা, কাশ্মিরে সে সংখ্যা হল ৫ হাজার। হিসাবে দাঁড়ায়, গড়ে প্রতি ১০০০ কাশ্মিরীর জন্য রয়েছে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য। প্রতিটি কাশ্মিরী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি গড়ে ৫ জন ধরা হয় তবে অর্থ দাঁড়ায়, যে গ্রামে ২০০ ঘর মানুষের বাস সেখানে অবস্থান নিয়েছে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য।

কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর বিশাল অবস্থান আজ থেকে নয়, ১৯৪৭ সাল থেকেই। তবে সে সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বেড়েছে ১৯৮৯ সালে। কারণ তখন থেকেই কাশ্মিরে ভারতপন্থি শেখ আব্দুল্লাহ পরিবারের প্রভাব ব্যাপক ভাবে লোপ পায় এবং তীব্রতর হয় স্বাধীনতার দাবী। সে দাবী এখন প্রতিদিন তীব্রতর হচেছ এবং সে সাথে দিন দিন বাড়ছে সৈন্য সংখ্যা। সম্ভবতঃ সেদিন বেশী দূরে নয় যখন এ সৈন্য সংখ্যা ১০ লাখে গিয়ে পৌঁছবে। অথচ ভারত বিশ্বজুড়ে বলে বেড়ায়, ভারত উদারপন্থী, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক দেশ ইত্যাদি ইত্যাদি। গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিগণ তো সে দেশের নাগরিকত্ব স্বেচ্ছায় বরণ করে নিবে, আইন মেনে চলবে।কিন্তু তাদের মাথার উপর এত সৈন্য কেন? কোন গণতান্ত্রিক দেশে এর নজির আছে কি? সমগ্র ভারত শাসনেও এতজন ইংরেজ সৈন্য ছিল না যা এখন ভারতীয় সৈন্যের লেবাসে রয়েছে কাশ্মীরে। এটিই কি গণতন্ত্রের নমুনা? ভারত একথাও বলে বেড়ায়, কাশ্মিরী জনগণ ভারতের সাথে স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছে এবং তারা ভারতীয় নাগরিক রূপেই থাকতে চায়।
 
প্রশ্ন হল, কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর এ বিশাল উপস্থিতি কি সেটাই প্রমাণ করে? কোন জেল খানায় ১ হাজার কয়েদীর বাস হলে সে জেলখানার পাহারায় কি এভাবে মিশিন গান ও কামানধারি ২০ জন সৈন্য পাঠানো হয়? পাঠানো হয় কি ট্যাংক, হেলিকপ্টার গানশিপ ও সাঁজোয়া গাড়ি। কোন দেশে কি তার নিজদেশের জনগণের ঘরের সামনে মেশিন-গানধারি সৈন্য পাঠায়? ঘর ও রাস্তা পাহারার জন্য কি কামান, সাঁজোয়া গাড়ি বা ট্যাংক পাঠায়? এগুলো তো থাকবে সীমান্তে। স্বাধীন দেশের জনগণ তো নিজঘর ও রাস্তাতো নিজেরাই পাহারা দেয়। রণ প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে সামনে যখন সৈন্যের আগমন ঘটে তখন বুঝতে কি বাঁকি থাকে, সে সৈন্যের আগমন ঘটেছে স্বাধীনতার হরণে, প্রতিরক্ষায় নয়। কোন দেশে সৈন্য কি ঘরে ঢুকে স্বাধীনতার প্রতিরক্ষা দেয়? তারা তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বা ঘরের সামনে খাড়া হয় কোন দেশকে জেলখানা করতে। যেমনটি ইসরাইলী সেনাবাহিনী করেছে সমগ্র ফিলিস্তিনে। তবে কাশ্মিরকে এখন জেলখানা বললেও ভূল হবে। জেলখানার কয়েদী থেকে তার কাঙ্খিত দেশের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয় না। কিন্তু ভারত সেটি কাশ্মিরীদের থেকে কেড়ে নিয়েছে। কাশ্মিরী জনগণ বহু আগেই প্রমাণ করেছে, তারা ভারতের নাগরিক হতে চায় না। এটি তাদের উপর জোর করে চাপানো হয়ে। ১৯৪৭ সালে হিন্দুরাজা জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ মুসলিম নাগরিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতে যোগ দিয়েছে। কাশ্মীরের জনগণ সেখানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইশতেহার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদের ইশতেহারে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীর অঞ্চলের ভবিষ্যত নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার জাতিসংঘের ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে অসম্মতি জানিয়ে আসছে। এ কারণে ভারত সরকার এখন পর্যন্ত সেখানে গণভোট আয়োজন করেনি।

রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন

মিয়ানমার সরকারের কড়াকড়ির কারণে রাখাইন রাজ্যের প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দেখা গেছে শুধু আগুন আর কালো ধোঁয়া। সেই সঙ্গে পালিয়ে আসা লাখ লাখ মানুষের ভিড়। এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে নিদারুণ মানবিক সংকটের অন্যতম দৃষ্টান্ত। এটি হলো রোহিঙ্গা সংকট।

মায়ানমার বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশ। মায়ানমারের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান অংশ রোহিঙ্গা।  দাপ্তরিক ও ব্যবসায়িক কাজে ব্রিটিশরা ভারতীয় মুসলমানদের (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান) বার্মায় নিয়ে আসে। মায়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর অনেক মুসলমান তাদের পূর্ববর্তী পদে বহাল থাকে এবং অনেকে ব্যবসা এবং রাজনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

রাজা বায়িন্নাউং (১৫৫০-১৫৮৯) এর আমলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায় এবং বৌদ্ধরা মুসলিমদের হত্যা করে। ১৫৫৯ সালে ব্যাগো দখলের পর বৌদ্ধ রাজা হালাল মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করে। ধর্মের নামে প্রাণীহত্যাকে বর্বোরচিত ঘোষণা করে তিনি ইদ উল আযহা পালন নিষিদ্ধ করেন। তার প্রজাদেরকে তিনি জোরপূর্বক বৌদ্ধ ধর্মের বাণী শুনতে বাধ্য করতেন এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করতেন। ১৮ শতকে রাজা আলাউঙ্গাপায়া মুসলমানদের জন্য হালাল খাবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

১৯৬২ সালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে সেনাপতি নে উইন ক্ষমতায় গেলে মায়ানমারে মুসলমানদের অবস্থা করুণ হয়ে পড়ে। মুসলমানদেরকে সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে পালিয়ে যেতে শুরু করে। ১৯৭৮ সালে আরাকানে কিং ড্রাগন অপারেশনের সময় দুই লাখ এবং ১৯৯১ সালে ২৫০,০০০ রোহিংগা মুসলিম বাংলাদেশে শরনার্থী হিসেবে স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসে। এরপর ২০১৭ সালে মায়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন শুরু হলে বাংলাদেশসহ সহ প্রায় ২০ লাখ রোহীঙ্গা পালিয়ে এসে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেই। 

ফিলিস্থিনি মুসলিম নির্যাতন

মুসলমানদের প্রথম কেবলার দেশ ফিলিস্তিনে মুসলমানরাই নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিজ দেশেই পরাধীনের মতো জীবন চলছে তাদের। ইসরাইলের ইহুদি শাসক ও সেনাবাহিনী দ্বারা চরম অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হচ্ছে দেশটির মুসলমানরা।

ফিলিস্তিনিরা হতভাগ্যই বটে। তারা প্রায় এক শতক ধরে নিজেদের ভূখণ্ডে দখলদার ইহুদিদের হাতে মার খাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ঝরছে রক্ত। লাশের পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে। ফিলিস্তিনিরা আজও মরছে।

ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। আরব মুসলমানেরা ছিল সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এসে বাসা বাঁধতে থাকে। তাদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ে। সবকিছুর উদ্দেশ্য—আরব ভূখণ্ড দখল। 

১৯৪০ দশকে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠালগ্নে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি পরিবারকে তাদের বসতভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া গাজায় গত এক দশকের ইসরাইলি অবরোধের কারণে ২০ লাখ লোকের বসতি গাজার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার বিক্ষোভের কারণে প্রতিনিয়তই ইসরাইলি সেনাদের দ্বারা ফিলিস্তিনিরা নিহত হচ্ছেন।

ইয়েমেনে মুসলিম নির্যাতন

আরবিতে ‘উম্মাহ’ বলে একটা শব্দ আছে, যার অর্থ সমাজ বা সম্প্রদায়—ইংরেজিতে যাকে বলে কমিউনিটি। মুসলিম দুনিয়ার রাজনীতিবিদ, শাসকগোষ্ঠী বা ধর্মীয় নেতারা সুযোগ পেলেই এই শব্দটা অহরহ ব্যবহার করেন আর ‘উম্মাহ’র একতার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু গত চৌদ্দ শ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে কোনোকালে বা কোনো অঞ্চলে এমন একতার তেমন কোনো উদাহরণ পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুসলমান মুসলমান মারামারি-কাটাকাটি আর যুদ্ধ করে যত মুসলমানের মৃত্যু হয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। ইয়েমেনে সৌদির জোটের নেতৃত্ব চলছে ইয়েমেনি মুসলিম গণহত্যা। সৌদির ভয়ংকর বিমান হামলায় দেশটিতে হাজারো মানুষের জীবন চলে গেছে। ধ্বংস হচ্ছে শহরের পর শহর। সৌদি আরবকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে বড় ভূমিকা রয়েছে ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া’খ্যাত ইসরাইলেরও। সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনি বাহিনীর বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করছে হুথি বিদ্রোহী ও স্বাধীনতাকামী একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তাদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে ইরানসহ একাধিক দেশ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের সব দেশ ও বিশ্বনেতারা ইয়েমেন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু সেখানে মানবিক বিপর্যয় নিয়ে যেন কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। জাতিসংঘ, এমনকি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনও (ওআইসি) রহস্যজনকভাবে নীরব। এ ধরনের সংস্থাগুলো মাঝেমধ্যে দু’একটি বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছে। ইয়েমেন সমস্যার সমাধানে তাদের যেন কোনো আগ্রহই নেই।

বিশ্বশক্তিগুলোর শক্তি প্রদর্শনের আরেকটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সিরিয়া। বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে দেশটি। মুসলিমপ্রধান দেশটিতে ২০১১ সাল থেকে চলে আসা গৃহযুদ্ধে লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দাবি, এ যুদ্ধে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৯২ থেকে পাঁচ লাখ ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে এ সংখ্যায় ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। তবে এটা সত্য যে, সিরিয়ায় মৃত্যুর শিকার মানুষের সংখ্যা আঁতকে ওঠার মতো। এর একটি বড় অংশই নারী ও শিশু। এ দুই শ্রেণি সবচেয়ে অসহায় হলেও বিশ্বের ইতিহাসে যুদ্ধগুলোতে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেÑসিরিয়ায় তারই প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে।

আগামীনিউজ/এএইচ