পরিপূর্ণ স্বাস্থবিধি মেনে খুলবে কক্সবাজারের পর্যটন এলাকা

ম. শাফিউল আল ইমরান জুলাই ১০, ২০২০, ০৫:৩৮ পিএম
কক্সবাজারের কলাতলী সমুদ্র সৈকত - ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের পর্যটন খাত। গত কয়েক মাস ধরে দেশের সব পর্যটন স্পট বন্ধ থাকায় এ বছর এ খাতে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। আর্থিক ক্ষতির মুখে অনেকে কার্যক্রম সংকুচিত করে ফেলেছেন। দিনকে দিন এ ক্ষতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে পর্যটন এলাকাগুলোতে যারা আনুষাঙ্গিক ব্যবসা করতেন তারা জীবিকার তাগিদে অন্য কাজে করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্য লকডাউন তুলে দিয়ে পরিপূর্ণ স্বাস্থবিধি মেনে সব খুলে দেয়া হবে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকা কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, কুয়াকাটাসহ  অন্যান্য জায়গাগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে করোনা শুরু থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেছে। করোনা রোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করার পর সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন জেলাটিকে লক ডাউন ঘোষণা করে। এখনো লক ডাউন অবস্থা বিরাজ করছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত  কক্সবাজারে এ সময়ে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকার কথা সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো কিন্ত এবার যেন নিরব এক অধ্যায়। কেউ আর বেড়াতে আসেনা । কিন্তু গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগী শনাক্তের পর থেকে পর্যটকদের ভাটা পড়েছে।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন

বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্রাভেলার্স ডায়েরি’ এর চেয়ারম্যান ওয়াহিদ অর্ণব আগামীনিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লেগেছে ট্রাভেল, ট্যুরিজম ও এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে। গত প্রায় ৬ মাস ট্রাভেল এজেন্সির মালিক, স্টাফ, দেশের বিভিন্ন টুরিস্ট অঞ্চলের হোটেল, মোটেল, কটেজসহ ইনবাউন্ড ও ডমেস্টিক ট্যুরিস্ট বেসড সকল আবাসন ব্যবসায়ী, এর ওপরে নির্ভরশীল পরিবহন ব্যবসায়ী, ট্যুরিস্ট গাইডসহ অন্তত ২৫ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশের সবচেয়ে অ্যাকটিভ ও সর্বাধিক ট্রাভেল ও ট্যুরিজম এজেন্টদের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) প্রাথমিকভাবে একটি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করে। যাতে দেখা যায় প্রাথমিক ধাক্কায় অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। টোয়াব, আটাব, হাব, বিডি ইনবাউন্ড, পাটা বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, সম্মিলিত পর্যটন জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন নির্ণীত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন চিত্র থেকে দেখা যায় অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এ দেশের ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রি। অথচ ছোট, বড় ও মাঝারি অন্তত ৫হাজার ট্রাভেল এজেন্সি যারা সিভিল অ্যাভিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত এবং বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড এদের অভিবাবক। কিন্তু কোনো প্রকার প্রনোদনা বা আর্থিকভাবে সহযোগিতা না পেয়ে অনেকেই নিরবে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে পাগল প্রায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।

শাহপরীর দ্বীপ, যেখানে সাগার আর পাহাড় এসে মিশে গেছে -ছবি সংগৃহীত

কক্সবাজারের অদূরে হোটেল টিউলিপের সিএফও জুলহাস বিশ্বাস আগামীনিউজকে বলেন, আমাদের অর্থিক ক্ষতি এখনও নিরূপণ করা হয়নি। তবে, এটুকু বলতে পারি, অনান্য ব্যবসার চেয়ে আমাদের ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। এরপরও আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কারণ, আস্তে আস্তে সব খুলে দিচ্ছে, আমরা সরকারি নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা নতুন উদ্যোমে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি সরকারের দিক থেকে সহযোগিতা চাই, যাতে আগামীতেিআমরা পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারি। আমাদের বিশ্বাস সরকার এ খাত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী হবেন।

কক্সবাজারের লক ডাউন ১১ জুলাই শেষ হবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি). মো. কামাল হোসেন আগামীনিউজকে বলেন, রোববার (১১ জুলাই) একটা মিটিং আছে, সেখানে সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা হবে।

কঠোর বিধবমিনিষেধ আরোপ করে সীমিত আকারেই সবকিছু খুলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু গাইডলাইন, নজরদারি এবং ভালো মনিটরিংয়ের ওপর ভিত্তি করেই পর্যটন শহরের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো খুলবে।

আগামীনিউজ/ইমরান/মনির