করোনায় সম্প্রীতির রাজনীতির সুবাতাস: সর্বদলীয় ঐক্যর ডাক

মো.ইয়াকুব আলী এপ্রিল ৮, ২০২০, ১২:০৬ পিএম

ঢাকা: রাজনীতিবিদদের একে অপরের ওপর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করাটাই যেন বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কৃতি। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চিরাচরিত সেই চিত্রটি আর নেই। বিরোধ-তর্ক-বিতর্ক থেকে বেড়িয়ে ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন নেতারা। সকল দলগুলোর ভিন্ন আদর্শ হলেও করোনা মোকাবেলাই সবাই একই সুরে কথা বলে যাচ্ছে। যে যার সামর্থ দিয়ে করোনার প্রতিরোধ ও দেশের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশে রাজনীতিতে সম্প্রীতির সুবাতাস বইছে।

করোনা মোকাবেলায় গত ২৫ মার্চ প্রথম বিবৃতি দিয়ে জাতীয় ঐক্যর ডাক দেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ড.কামাল হোসেন। এরপর ঐক্যফ্রন্টর নেতারা,পর্যায়ক্রমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রোববার সকালে সর্বদলীয় ঐক্যর ডাক দেন। কিন্তু এরপরেও সরকার তার দিক থেকে তার মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় দিশেহারা সরকারি দল আওয়ামীলীগ অবশেষে জাতীয় দুর্যোগ করোনা মোকাবেলায় সর্বদলীয় ঐক্যর ডাক দেয়।  

সোমবার(৬এপ্রিল)করোনা মোকাবিলায় বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘ আসুন সবাই করোনাভাইরাসে সৃষ্ট  সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী জনকল্যাণের জন্য যে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছেন সে অনুযায়ী সবাই একযোগে কাজ করি, এটা দেশবাসীর প্রত্যাশা। কাজেই এখানে পারস্পরিক দোষারোপ না করে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ  বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করা দরকার।’

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় যে কোনো গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী উদ্যোগে শামিল হতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে সরকারকেই এ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এই মহাদুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।’এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, 'সবাইকে মিলেই করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। '


আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এই মুহূর্তে গোটা দেশ ও বিশ্ব একটি আতঙ্কের মধ্যে আছে। জাতীয় ক্রাইসিস এবং বয়স বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। সংবিধান ও আইনি দিক যথাযথভাবে মেনে, বয়স বিবেচনা ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তিনি আশা করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ভালোভাবে দেখবে।

এদিকে, মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে এক সংবাদ বিবৃতিতে ভয়াবহ করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় ৫ দফার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এক বিবৃতিতে বলেন,' সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

প্রয়োজন জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা। এই মুহূর্তে দোষারোপ নয়, যেসব ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে সবার পরামর্শই গুরুত্বপূর্ণ। নেতারা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের সব বিষয় পৃথিবীর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। সামনে দূরতিক্রম্য পথ রয়েছে। সে কারণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা জাতীয় রাজনৈতিক কর্তব্য।'

করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এক বিবৃতিতে বলেন, 'সরকার সবার বিচরণ সীমিত করে জনগণকে ঘরে আবদ্ধ রেখেই নিজের একক প্রচেষ্টায় এই বিপদ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছে। এতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী জাতীয় প্রয়াসের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছে না।

তারা বলেন, সর্বদলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সরকার আর ক্ষমতাসীন দলকেই এই উদ্যোগের কাণ্ডারি হতে হবে। তাদের সব রাজনৈতিক দলকে একই প্লাটফরমে এসে এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য খোলা মন নিয়ে আহ্বান করতে হবে।'


এছাড়াও  বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষায় এবং করোনা পরবর্তী সামাজিক-অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে ভবিষ্যতমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রী নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের নানা দেশে রাজনৈতিক দূরত্ব ও বিভেদ অনেকাংশে কমে এসেছে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট জরুরি পরিস্থিতিতে। ভারতের সংঘাতপূর্ন অঞ্চল কাশ্মীরে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে নেতৃবৃন্দকে।   যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রসঙ্গে বিভিন্ন উদ্যোগ থেমে আছে। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে ব্রেক্সিট নিয়ে তুমুল আলোচনা ও মতবিরোধের বিষয়গুলোও আপাতত স্থগিত রয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিশ্বের নানা স্থানে চলমান যুদ্ধগুলো অঘোষিত বিরতি চলছে। সিরিয়া, ইরাক পরিস্থিতি শান্ত।  শান্ত আছে অস্থির ও সংঘাতময় দেশ আফগানিস্তান।

২০২০ সালের শুরুতে ইরানি জেনারেল সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও পারস্য উপসাগরে যে প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছিল, সেটাও স্তিমিত। খোদ ইরান ভয়াবহ করোনায় আক্রান্ত। প্রতিপক্ষ সৌদি আরব ওমরাহ বন্ধ করে দরজা-জানালা লাগিয়ে দিয়েছে করোনা ঠেকাতে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন পশ্চিমা শক্তিও মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের যাবতীয় তৎপরতা বন্ধ করে নিজ নিজ দেশের দিকে মনোযোগী হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই চরমভাবে করোনায় ভীতিকর বিস্তারের মধ্যে রয়েছে।

আগামী নিউজ/ইয়াকুব/ডলি/নাঈম