মনমোহন দত্তের মরমী সঙ্গীতের প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৬৬

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ জুলাই ২, ২০২১, ১০:২৪ এএম
মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল ও সমাজ সংস্কারক মনমোহন দত্ত। ছবিঃ সংগৃহীত

নয়ন টানে, টানে গো এই রুপের পানে
আমার মন মিশিয়ে যাহার সনে
যার পরশে হয় সরস হৃদয়,
দর্শনে যার হর্ষের উদয়।
সেই মনের মতোন মানুষ রতন বেধেঁ রাখি কোন সন্ধানে।
জাগরনে তার না দেখিতে পেয়ে
ঘুমের আড়ালে থাকি নয়ন দিয়ে
যদি স্বপ্নের ঘোরে দেখা দেয় যে মোরে, রাধিয়া রাখিব স্বপনে
এত ভালবাসি এত যারে চাই
সে কি আমার কথা ভাবে না রে ভাই
যেন অকুল পিয়াসা ব্যাকুল আবেগে তাহার আনিবে ডেকে
নয়নে নয়নে রাখিব বান্ধিয়া
কাঙ্গালের পাখি যাবি কই ছুটিয়া
বলে মনোমোহন মন ভুলান মন, বাঁচি না তোমারে বিনে।

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
মানুষ তার চরম সত্ত্বাকে দেখতে চায়। সেই চরম সত্ত্বাকে দেখলে নয়ন জুড়ায়। তার রূপে নিজের চোঁখ ও প্রাণ পরিপূর্ণ হয়। তাঁকে দেখার জন্য যুগ যুগ ধরে আরাধনা করা হয়। তাঁকে দেখতে পারলেই কেবল এ জীবন স্বার্থক হয়। না দেখলে এ জীবনের কোন মূল্য থাকে না। মানুষ তাকে না পেয়ে তার ভালোবাসায় ঘুমের ঘোরে হলেও তাকে দেখতে বাসনা করে।

আসলে মানুষ যখন সাধনার দ্বারা নিজের মধ্যকার যে চিরসত্ত্বার শক্তি আছে তাকে জাগ্রত করতে সক্ষম হয়, তখন তার রূপের সাথে নিজের শক্তির সমন্বয় ঘটে। সেই শক্তিকে প্রজ্ঞার মাধ্যমে পাওয়া যায়। যে রূপকে পাওয়ার জন্য মানুষ জীবনভর সাধনা করে সেই রূপকে নিজের চোখে দেখার পর আজীবনের তৃষ্ণার সমাপ্তি ঘটে।

মানুষের মন বিভিন্ন সময় বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বস্তুকে পেতে চায়। এসব বস্তুর প্রাপ্তিতে কোন প্রশান্তি নেই। যখন সাধনার শক্তিতে নিজের মধ্যে এক জাতীয় শক্তির সৃষ্টি করা যায়, তখন সেই মন ভুলানো রূপ অনন্ত শক্তির রূপ ধরা পড়ে নিজের প্রজ্ঞার শক্তি দ্বারা। এই রূপকে যখন নিজের কাছে ধরা দেয় তখন আর জীবনের কোন কিছুই অপ্রাপ্তি থাকে না। তখন জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে প্রতিটা কর্মে সেই রূপের সাথে দেখা মেলে। তখন নিজের মধ্যে এক অনন্ত আনন্দ ধারা প্রবাহিত হয়। কোন কিছুতেই আর এই বস্তুবাদী মন দুঃখে নিপতিত হয় না। ফলে প্রজ্ঞাময় সত্ত্বা সব সময় মহা আনন্দে সকল কর্মের উপর বিজয় অর্জন করে।