মনমোহন দত্তের মরমী সঙ্গীতের প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৩৫

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ মে ২, ২০২১, ১১:৩৪ এএম
মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল ও সমাজ সংস্কারক মনমোহন দত্ত। ছবিঃ সংগৃহীত

করিব তোমার পূজা বাসনা অন্তরে।
মনপ্রাণ লয়ে মাগো ডাকিব কাতরে।
দিব ভক্তি পুষ্পাঞ্জলি হাতে হাতে করতালি,
বিশ্বাস চন্দন গন্ধ মাখিব আদরে।
প্রেম বিশ্ব পত্র দলে পুজিব গো কৌতুহলে,
জপিব অজপা যোগে নাম প্রাণ ভরে।
ইচ্ছাময়ী তারা তুমি, ইচ্ছাতেই ইচ্ছি আমি,
তোষ মা, মনোমোহন ইচ্ছা পূর্ণ করে।

প্রজ্ঞাময় ব্যাখাঃ
প্রজ্ঞাময় সত্ত্বা বিশ্বময় শক্তির উপর নির্ভর করে মনপ্রাণ দিয়ে তার সাথে মিশে যেতে প্রচেষ্টা করে। সেখানে সেই শক্তির ইচ্ছার উপরই নিজের ইচ্ছাকে সমর্পন করে। সেখানে প্রেম ও ভালবাসার মাখামাখি অবস্থা দেখা যায়। তার মধ্যে মনে প্রাণে কোন কিছু প্রাপ্তির আশার পরিবর্তে সেই শক্তির সাথে মিশে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য। কোন কিছু প্রাপ্তির কারণ না। মানুষ সব সময় বস্তুর উপর নির্ভরশীল। এই বস্তু প্রাপ্তিই মানব জীবনে ধর্মের মূল হিসেবে কাজ করে। সে বস্তুর উপর নির্ভরশীল সে কারণে সেই বস্তু প্রাপ্তির জন্যই তার ধর্মীয় সকল প্রকার ডাকাডাকি। বস্তু প্রাপ্তি এবং বস্তু যেন না হারায় এই দু’লক্ষ্যই ধর্ম-কর্ম করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করে। বস্তুর বাইরে তার কোন প্রার্থনা নেই। ধর্মের মূল নির্ভর করছে বস্তু নির্ভর চিন্তা চেতনা। সে কারণে ধর্ম পরিপালন করা সত্তে¡ও মানুষের মধ্যে বস্তু নির্ভরতা তথা বস্তু হারানোর ভয় সবসময় থেকেই যাচ্ছে। বস্তু হারানোর ভয় থেকে মানুষকে মুক্ত না করা পর্যন্ত মানুষ নিজের মধ্যে প্রশান্তি আনতে পারবে না। প্রজ্ঞাই মানুষকে এই আমৃত্যু বস্তু ভয় থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়।

প্রজ্ঞাময় সত্ত্বা যখন নিজের মধ্যকার শক্তির উপর নির্ভর করে এবং নিজেকে বিশ্বময় শক্তির ইচ্ছার উপর সপে দেয় এবং নিজের ইচ্ছাকে আলাদা করে না দেখে তার ইচ্ছার উপরই নিজেকে সমর্পন করে তখন তার মধ্যে প্রশান্তি আসে। তখন আর সে বস্তুর উপর নির্ভর না করে বিশ্ব শক্তির ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা মনে করে। এই ভাবে নিজের ইচ্ছার ঊর্ধ্বে উঠে যখন নিজের ইচ্ছার ঊর্ধ্বে উঠে যখন বিশ্ব শক্তির বাস্তবায়িত করতে সর্বদা প্রচেষ্টায় রত থাকে তখনই তার নিজ ইচ্ছায় যথার্থ পরিপূর্ণ ঘটে।