মনমোহন দত্তের মরমী সঙ্গীতের প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৩৪

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ মে ১, ২০২১, ১২:০৭ পিএম
মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল ও সমাজ সংস্কারক মনমোহন দত্ত। ছবিঃ সংগৃহীত

কর প্রভু
জ্ঞানের উদয়
তুমি আমি অভেদাত্মা যেন উপলব্ধি হয়।
ভাবে কর দেখা দেখি
তৃষ্ণিত ব্যাকুল আঁখি, অতিচঞ্চল হৃদয়।
অজ্ঞানতার অন্ধকারে,
জ্ঞানাজ্ঞানে দ্বন্ধ করে
রাখে আলো বন্ধ করে, করে সন্দেহ উদয়।
তুমি কৃপা বিতরণে,
জীব ভাব বিমোচনে,
অনুক‚ল হও এক্ষণে, দাওহে শ্রীপদাশ্রয়।

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
মনোমোহন দত্ত একজন প্রজ্ঞাময় সত্ত্বা। তিনি মানব মনের অজ্ঞানতা অবস্থাকে দূরীভ’ত করে নিজের মধ্যে প্রজ্ঞার শক্তি অর্জনের জন্য নিবেদন করছেন। মানুষ জন্মগত ভাবে বস্তুর প্রতি মোহগ্রস্থ অবস্থায় থাকে। সেই মনের অবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারে একমাত্র সাধনার দ্বারা অর্জিত প্রজ্ঞার শক্তি। এই প্রজ্ঞার শক্তি সহজে অর্জিত হয় না। কারণ মানুষ বস্তুর আকর্ষণে নিজের মনের মধ্যে বস্তুর প্রতি মোহ সহজে সৃষ্টি হয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে প্রজ্ঞার শক্তি অর্জন করতে হলে সাধনার প্রয়োজন হয়। কোন সত্ত্বা যখন ভাগ্যক্রমে নিজের দেহমনের বিভিন্ন জাতীয় দুঃখকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় তখন সে এ অনন্ত দুঃখ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়। ফলে তার মনের মধ্যে যে অন্ধকার ভাব থাকে তাকে দূর করে প্রজ্ঞার শক্তি অর্জনের জন্য সাধনা করে। সে নিজের মনের মধ্যে বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণে যে বস্তু অন্ধকারে ডুবে থাকে তাকে দেখতে পাবে। নিজের এই বস্তুময় ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য এই আকুল আবেদন। 

মানুষ দেহধারী ভিন্ন সত্ত্বা হলেও তার স্বভাবগত ভাবে মনের রাজ্যে অন্যান্য প্রাণকূলের ন্যায় বস্তুর প্রতি ঘোর আকৃষ্ট অবস্থা। অন্য কোন প্রাণী তার জৈবিক চাহিদা মোতাবেক বস্তুকে গ্রহণ করে এবং সীমিত প্রাপ্তির পর প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু মানুষের বস্তুর যে অনন্ত মানসিক চাহিদা তার কোন পরিসমাপ্তি নেই। চাহিদার ভিন্নতা থাকলেও অনন্ত বস্তুর যে চাহিদা তা অসীম। এই অসীম বস্তুময় আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে প্রজ্ঞার শক্তির মাধ্যমে নিজেকে নিত্য অভেদাত্মার সাথে মিশে যাওয়ার জন্য আকুল আবেদন।