কুঞ্জবনে রাধাসনে শ্যামরায়।
দেখবি যদি যুগল মিলন আয় গো সখি চলে আয়।
মোহন বাঁশি করে ধরা, হেলায়ে বেধেছে চুড়া,
পীত বসন পীত ধড়া, নুপুর বাজে রাঙ্গা পায়।
নব জলধর রুপে, বনমালা গলে শোভে
সখি সঙ্গে মনোরঙ্গে, ভাসে রাধা শোভা পায়।
রাইয়ের মাথায় ফুল বেনী, মেখে সৌদামিনী,
দেখবি যদি আয় সজনি, যুগল দেখে প্রাণ জুড়াই।
প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
শ্যাম কুঞ্জবনে রাধার সাথে যুগল মিলন অবস্থায় আছে। মানুষের অন্তরের মধ্যে শ্যাম তথা প্রকৃত প্রজ্ঞাময় শক্তির অবস্থান আছে। এই প্রজ্ঞাবান শক্তিই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দর। এই দেহকুঞ্জের মধ্যেই শ্যামকে জাগিয়ে তুলতে নিজেকে রাধার ন্যায় অকৃত্রিম ভালবাসার প্রয়োজন। মন যখন রাঁধার ন্যায় শ্যামের পাশে পাশে অবস্থান করে এবং সকল চিন্তা চেতনায় শ্যামকে মনে-প্রাণে ভালবাসে। তখন তার অন্তরের মধ্যে শ্যাম তার মনের উপর প্রভাব ফেলে। তখন তার পূর্বের আর কামনা বাসনা পূর্ণ মন থাকে না। তখন তার সেই মন শ্যামের জন্য ভালবাসায় লিপ্ত আছে। তার রাধাময় অবস্থা তখন শ্যামের সাথে মিশে গেছে। এখন সে নিজেই শ্যামের শক্তিতে শাক্তিশালী হয়ে গেছে।
শ্যামের হাতে এখন বাঁশি। এই বাঁশির সুরে সকলের প্রাণ জুড়ায়। প্রত্যেকের অন্তরের মধ্যে যে শ্যাম বা কৃষ্ণ আছে তাকে যদি রাধার সম ভালোবেসে জাগিয়ে তোলা যায় তখন তার সাথে নিজ সত্ত্বার মিলন ঘটে। নিজের মনকে রাধার ন্যয় অন্তরের শ্যামের সাথে যখন যুগল মিলন ঘটে তখন এক মহা সুন্দরের সৃষ্টি হয়। এই সুন্দরতম অবস্থায় মানব জীবনের সফলতা আসে। তখন তার মধ্যে আর কোন দুর্বলতা থাকে না। থাকে না কোন চঞ্চলতা। তখন তার মধ্যে মহাশক্তির দ্বারা মহা প্রশান্তি ঘটে। আজ সে শ্যামের শক্তিতে শক্তিশালী। সেই শক্তির কারণে নিজে শ্যামের ন্যায় প্রজ্ঞার বাঁশি বাজাতে সক্ষম।
আগে যেখানে মন বিষয় বস্তুতে মত্ত ছিল। আজ সেই বিষয়ের ঊর্ধ্বে উঠেছে। এখন সে বস্তুর উপরে অবস্থান করছে। তার মনের মধ্যে বস্তু আকর্ষণ নেই। প্রকৃতপক্ষে তার মনের মধ্যে এক মহাশক্তির উদয় হয়েছে। তার মন এখন শ্যামের শক্তিতে শক্তিশালী। এই শক্তির কারণে নিজের সকল দুর্বলতাকে পরিহার করে নিজেকে শক্তির সাথে একাকার করতে সক্ষম হয়েছে। এখন তার আর কোন দুঃখ নেই।