মনমোহন দত্তের মরমী সঙ্গীতের প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-১২

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ মার্চ ৮, ২০২১, ১০:২১ পিএম
মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল ও সমাজ সংস্কারক মনমোহন দত্ত। ছবিঃ সংগৃহীত

আদম খোদা মইত কহজি
নূররছে আদম রানায়া, একদম জুদা নাহিম॥
আল্লা আছে আলেপে
সাবুদ করো কালেপে
ধ্যানে দিদার ধুন্দে ফকির, দইরাপ্ত করো দিলমেজি॥
ধরবে যদি মাঝকে
ডুরী লাগাও আসকে
হলে দীল, দেওয়ানা, ফানাফিল্লা রাজি হবে আল্লাজি॥
তিন তিন বোয়ে যিম পারা
হাসি খেলবো মিলে পিয়া
মনোমোহন কয় ছিল দরিয়া সিচলে পাবি সাঁই দরদি॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
খোদা কোন সত্ত্বা না। খোদা একক শক্তির প্রকাশ মাত্র। আদমও কোন ব্যক্তি নয় মাত্র। আদম একটা স্তরের নাম মাত্র। আল্লাহ বা খোদা যে শক্তির প্রকাশ সেই নূর বা শক্তি থেকেই আদমের প্রকাশ। আদম অর্থই প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা। আল্লাহ বা খোদা যে শক্তির প্রকাশ সেই নূর বা শক্তি থেকেই আদমের প্রকাশ। আদম মানব কুলের প্রথম প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা। বাহ্যিকভাবে মানবের ক্রমধারার পূর্বেও অনেক সত্ত্বার আবির্ভাব ছিলো। কিন্তু আদম প্রথম প্রজ্ঞাবান মানব সত্ত্বা যিনি তার প্রজ্ঞা তথা খোদার নূর বা প্রজ্ঞার শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে আদম রূপে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। সেই কারণে আদমের সাথে খোদার তুলনা বা আলাদা করা যায় না। প্রতিটা মানুষের মধ্যেই তার অন্তরে আল্লা তথা খোদার নূর বা শক্তি সুপ্ত অবস্থায় আছে। যখন মানুষ সাধনা তথা ধ্যানের মাধ্যমে নিজের অজ্ঞানতা দূর করতে সক্ষম হয় তখন সেই খোদার সাথে তার দিদার ঘটে। তখন তার মধ্যকার শক্তিকে সে অনুভব করতে সক্ষম হয়। নিজেকে তার শক্তির সাথে সংযোগ ঘটিয়ে শক্তিশালী হয়। তখন আর তাঁর নিজের মধ্যে বস্তুর দূর্বলতা থাকে না। তখন সে সকল প্রকার বস্তুময় আকর্ষণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে সেই মহাসত্ত্বার সাথে একাকার অবস্থায় বিরাজ করে।

মনোমোহন প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা বলেছেন, অন্তরের মধ্যে সেই সত্ত্বার প্রতি আকর্ষণ বা প্রেম জাগ্রত হলে মনের সকল প্রকার অন্ধত্ব দূর হয় এবং অন্তরের মধ্যে যে প্রজ্ঞার শক্তি আছে তার সাথে একত্রিত হওয়া সম্ভব হয়।