মনমোহন দত্তের মরমী সঙ্গীতের প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৩

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১, ০৩:৪৪ পিএম
মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল ও সমাজ সংস্কারক মনমোহন দত্ত। ছবিঃ সংগৃহীত

অকূলে ভাসে তরী,
গেছে বেলা।
আকাশে কাল মেঘ,
বাতাসে করে খেলা।
আসে আঁধার ঝিরে,
হেলে দুলে আলোক যেতেছে সরে
অই হের ধীরে ধীরে,
(ওগো) গম্ভীর গরজনে তরঙ্গ আসিছে ধেয়ে
গুদূর বেলা॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
মানুষের জীবন একটা ভাসমান তরীর ন্যায়। এই জীবন তরী ভবসাগরে ভাসমান অবস্থায় আছে। এই সাগরের কোন কূল কিনারা নেই। প্রতিটা মুহুর্তে অন্ধকার ঘোর তুফানে তরী ডুবু ডুবু অবস্থায়। যে কোন মুহূর্তে তরী ডুবে যেতে পারে। কোন নিশ্চয়তা নেই এই জীবন তরী কিনারায় ভিড়ানোর ক্ষেত্রে।
এই প্রজ্ঞাবান গানের মাধ্যমে মনোমোহন মানব জীবন তরীকে উপলক্ষ্য করে এক অনিশ্চয়তার অবস্থা বর্ণনা করেছেন। মানুষ অনন্ত বস্তু রাশির মধ্যে জীবন পরিচালনা করে। প্রতিটা বস্তুময় চিন্তার দ্বারা সে চালিত হয়। প্রতিটা বস্তুময় চিন্তায় ব্যক্তির নিকট এক কুলবিহীন সমুদ্র। প্রতিটা কর্মের মধ্যে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

জীবন তরী অজ্ঞানতার কারণে যে কোন মুহূর্তে যে কোন বস্তু চিন্তায় ডুবে গেলে তার মৃত্যু ঘটবে। তার বস্তুময় মন তাকে সর্বদা বস্তুমূখী করে রাখে। এই বস্তুমূখী কর্ম তাকে আস্তে আস্তে তার জীবন তরীকে বস্তু সাগরে ডুবিয়ে দেয়। অজ্ঞান মন তাকে কোন অবস্থায় বস্তুর ঊর্ধ্বে উঠতে দেয় না।

এই অনন্ত বস্তুময় জীবন সাগরে তার জীবন তরীকে বস্তুময় জলরাশি থেকে ভাসিয়ে মুক্তির দেশে পৌঁছাতে হলে একমাত্র সম্বল তার সাধনার শক্তি। এই শক্তি দ্বারাই কেবল বস্তুর লোভ, দ্বেষ ও মোহময় মনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হবে। প্রজ্ঞার শক্তিই এইমাত্র ভরসা। কারণ মনকে কেবল মাত্র সাধনার শক্তি দিয়ে পরিচালনা করলে সে বস্তু লোভে গভীর বস্তু রাশির মধ্যে ডুবে যাবে না। কেবলমাত্র প্রজ্ঞার শক্তিই তার বস্তুময় মনকে বস্তুময় সাগরের গভীরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটা কর্মের উপর প্রজ্ঞার শক্তিকে সতর্ক অবস্থায় থাকলেই কেবল এই ভবসাগরের বস্তুময় তুফান থেকে নিজেকে মুক্তির জগতে পৌঁছানো সম্ভব।

২৭-০২-২০২১

দুপুর ০৩:৪৫