মনমোহন দত্তের মরমী সঙ্গীতের প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-২

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ১২:৪৮ পিএম
মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল ও সমাজ সংস্কারক মনমোহন দত্ত। ছবিঃ সংগৃহীত

অখন্ড ব্রহ্মান্ড জোড়া, পরমাত্মা যদি হয়
খন্ড ভেবে কিসে লবে রলো তারই পরিচয়॥
সাকারে কি নিরাকারে অখন্ড ভাবে বিচারে
খন্ড করে কভু তারে ভাবনা উচিত নয়॥
হয়ে খন্ড ভেবে খন্ড হতেছে খন্ড বিখন্ড
হাতে নিয়ে ব্রহ্মদন্ড, দেখরে ব্রহ্মান্ডময়॥
খন্ডে খন্ডে সে অখন্ড, লীলাতে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড
লীলার খন্ড হলে পশু, অখন্ড কেবল রয়॥
যত খন্ড সব অখন্ড এমনি তার কৌশল কান্ড
মনোমোহন কয়, ব্রহ্ম অন্ত, এক ভিন্ন দ্বিতীয় নয়॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
সৃষ্টিকর্তা একক শক্তিমাত্র। সেই শক্তিকে কোন এক সত্ত্বার মধ্যে আবদ্ধ করা যায় না। সমগ্র ব্রহ্মান্ড জোড়া এই শক্তির প্রকাশ। যেখানে যে অবস্থায় বিশ্ব ব্রহ্মান্ড আছে সেখানেই এই শক্তির অবস্থান আছে। এই শক্তির দ্বারাই বিশ্ব আবর্তিত হচ্ছে। এই শক্তির বাইরে কোন অস্তিত্ব নেই। কেবলমাত্র মানুষের অন্তরের মধ্যেই কেবল পরমাত্মার অবস্থান না। বিশ্ব ব্রাহ্মন্ডের প্রতিটা অনু-পরমানুর অবস্থানের সাথে এই পরম শক্তির অবস্থান। মানুষ যেমন সেই পরমাত্মার অংশ বিশেষ। এই অংশ কোন খন্ডিত অবস্থা নয়। বরং অখন্ডময় সমগ্র শক্তিরই একটা প্রকাশ মাত্র। এই অখন্ড শক্তির অবস্থা সর্ব্বত্র বিরাজিত। বস্তুবাদী মানুষ তার বস্তুগত চিন্তার কারণে নিজেকে আলাদাভাবে চিন্তা করে। তার বস্তুর প্রতি লোভ, দ্বেষ ও মোহের কারণে তার সত্ত্বার সাথে বস্তুকে একাকার করে ফেলে। সব কিছুর সাথে নিজের আমি বা আমার হিসেবে মনে করে। আসলে নিজের মধ্যকার বস্তুর আকর্ষণ তাকে বস্তুর প্রতি এরূপ চিন্তায় লিপ্ত রাখে।

পৃথিবীর সকল কিছুর মূলে আছে শক্তি। এই শক্তিকেই দর্শন শাস্ত্রে ব্রহ্মান্ড হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই ব্রহ্মান্ড তথা বিশ্ব শক্তিই সৃষ্টির মূল। এই শক্তি একক ও অখন্ড। খন্ডিত করে দেখা শক্তির প্রকৃত অবস্থা নয়। বিশ্বময় শক্তির অংশই মানুষসহ বিশ্বের সবকিছু। প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা মনোমোহন তার প্রজ্ঞার শক্তিতে বিশ্বময় ব্রহ্মান্ড শক্তিকে একক ও অখন্ড শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই অখন্ড শক্তিময় রূপই সৃষ্টির একক শক্তির মূল।

২৫-০২-২০২১

দুপুর ১২:৪৭