লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৭৯

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৭:৫৪ পিএম

মনেরে বুঝাতে আমার দিন হল আখেরী।
বোঝে না মন আপন মরন একি অবিচারী॥
ফাঁদ পাতিলাম শিকার বলে
সে ফাঁদ বাঁধিল আপন গলে
এ লজ্জা কি যাবে ধুলে
এই ভবের কাচারি॥
পর ধরতে যাই লোভ দেখায়ে
আপনি লোভে পড়ি যেয়ে
হাতের মামলা হারায়ে
শেষে কেঁদে ফিরি॥
ছা’য়ের জন্যে আনিলাম আধার
আধারে ছা’খেল এবার
লালন বলে বুঝলাম আমার
ভগ্নদশা ভারি॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা :
লালন সাঁইজী আফসোস করে বলছেন, সে মনকে বুঝতে তার প্রায় দিন শেষ। মন এমনভাবে বস্তুর প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়েছে যে, সে তার নিজের মৃত্যুকেও বুঝতে পারছে না এবং নিজের প্রতি সে অবিচার করছে বলে লালন উল্লেখ করেছেন।

মন নিজের গলায় নিজের মৃত্যুফাঁদ বয়ে আনে। যে মন অন্যকে লোভ দেখিয়ে ধরতে চায় সেই মনই নিজেই লোভে নিজের মৃত্যুকে ডেকে আনে। লোভের বশবর্তী হয়ে মন তাকে বস্তুর প্রতি আকর্ষণ করে তাকে বস্তুর মধ্যে দাফন করে ফেলে। বস্তুর আকর্ষণই মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটায়। মন যখন বস্তুর প্রতি বিরামহীনভাবে ধাবিত হয় তখন তাকে আর মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো যায় না।

মানুষ তার শ্রম দ্বারা বস্তু অর্জন করে। সেই বস্তুর দ্বারা মানুষ যখন মৃত্যুর মুখে পতিত হয় সে ভাব কে লালন বলেছেন ‘ছায়ের জন্য আনলাম আধার, আধার খেল ছা’। বস্তু যেমন মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য অত্যাবশক তেমনি যদি প্রজ্ঞার শক্তি দ্বারা মনের সেই বস্তুর আকর্ষণকে প্রতিহত করা না যায় তখন সেই বস্তুর দ্বারা মানুষের মৃত্যু ঘটে। যদি তার সাধনার শক্তি দ্বারা নিজের মধ্যে প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তার মন সবসময় সজাগ থাকে এবং ফলে বস্তু তাকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করতে পারে না। প্রজ্ঞার শক্তিই পারে কেবল তাকে বস্তু মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে।

 

০৫-০৬-২০১৭
সন্ধ্যা : ৭:২৫