লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৭৭

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৯:১৬ এএম

মন বিবাগী বাগ মানে না রে।
যাতে অপমৃত্যু ঘটে তাই সদায় করে॥
কিসে হবে ভজন সাধন
মন হল না মনের মতন
দেখে শিমুল ফুল; সদাই ব্যাকুল
দুকুল হারালাম মনের ফেরে॥
মনের গুণে কেহ মহাজন হয়
ঠাকুর হয়ে কেহ নিত্য পূজা খায়
আমার মন তো, আমার করলো হত
মনকে বুঝাইতে নারি জনম ভরে॥
মনকি মুনাই হাতে পেলাম না
কিরূপে আজ তারে করি সাধনা
লালন বলে, আমি হলাম পাতালগামী
কি করিতে এসে, গেলাম কি করে॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ

মন মানুষের জন্মগত শত্রু। যার মন যত শক্তিশালী তথা বস্তুর প্রতি আকর্ষিত তার দুঃখ বেশী। মন যেহেতু বস্তু দ্বারা গঠিত তাই মন সর্বদা বস্তুতে বিভোর থাকে। বস্তুতে বিভোর থাকার কারণে বস্তুর মধ্যেই তার অপমৃত্যু ঘটে। বস্তুর আকর্ষণের কারণে মন অপমৃত্যুকে সদাই ডেকে আনে। তাই মনকে প্রজ্ঞার দ্বারা পরিচালিত করতে না পারলে মানব জীবনের সারা জীবন দুঃখ বয়ে আনে। কারণ মন আসলে কিছু না, বস্তুর সমন্বয়েই এই মন সৃষ্টি।

লালন সাঁইজী তার বাণীতে বলছেন, মনের গুণে কেহ মহাজন হয় এবং ঠাকুর হয়ে পূজা পায়। আবার আরেক মন মানুষের জীবনের ধ্বংস ডেকে আনে এবং তাকে হত করে। আসলে মানুষ যখন প্রজ্ঞার শক্তি দ্বারা নিজেকে পরিচালিত করে তখন তার মধ্যে মনের আর বিরামহীন কর্মকাণ্ড থাকে না। মন তখন প্রজ্ঞার বশে থাকে এবং সবসময় নিজেকে সতর্ক থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

লালন সাঁইজী তাই মনকে আয়ত্বে আনার জন্য প্রজ্ঞাবান হওয়ার আহ্বান করছেন। যে তার প্রজ্ঞাকে শক্তিশালী করে তখন আর বিরাগী মন তাকে অগ্রাহ্য করে ইচ্ছা মতো পরিচালিত হতে পারে না। তাই প্রজ্ঞার এই শক্তি অর্জন করার জন্য গুরুর নির্দেশনা মোতাবেক সাধনার শক্তির দ্বারা মনকে পরিচালিত করাই শ্রেয়।

০৫-০৬-২০১৭ 

সন্ধ্যাঃ ৬:৩০