লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৭৬

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ০৩:০৭ পিএম

মন তুই করলি একি ইতরপনা।
দুগ্ধেতে যেমন রে তোর মিশলো চোনা॥
শুদ্ধ রাগে থাকতে যদি
হাতে পেতে অটলনিধি
বলি মন তাই নিরবধি
বাগ মানে না॥
কী বৈদিকে ঘিরলো হৃদয়
হ’ল না সুরাগের উদয়
নয়ন থাকিতে সদাই
হ’লি কানা॥
বাপের ধন তোর খেল সর্পে
জ্ঞানচক্ষু নাই দেখবি কবে
লালন বলে হিসাবকালে
যাবে জানা॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা: মন মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু যখন সেই মন কেবল বস্তুতেই অবস্থান করে। মানুষ প্রজ্ঞাবান না হওয়ার কারণে বস্তুর মধ্যে সবসময় নিজের মনকে ডুবিয়ে রাখে। আর বস্তুর যে দুঃখ বা আগুন সেখানে নিজেকে দগ্ধ করে। দুধে যেমন চোনা পড়লে আর তা পান যোগ্য থাকে না তেমনিভাবে মন সবসময় ইতরপনা করার কারণে সবসময় মানুষ দুঃখে পতিত হয়। মন যদি প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির নির্দেশ মোতাবেক সর্বদা সাধনার শক্তিতে নিজেকে পরিচালনা করতো তাহলে তার মধ্যে আর সেই ইতরপনা অর্থাৎ অজ্ঞান ভাব সৃষ্টি হতো না। সে তখন তার মনের মধ্যে যে মহামূল্যবান মনিমুক্তা আছে তার সন্ধান পেত। তার মনের মধ্যে যতক্ষণ প্রজ্ঞার সৃষ্টি না হয় ততক্ষণ সে  বস্তুর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং বস্তুর দুঃখে বা আগুনে সে দগ্ধ হয় এবং নিজেকে দুঃখে পতিত করে।

মানুষ যখন তার প্রজ্ঞাবান গুরুর নির্দেশ মোতাবেক নিজেকে সাধনার শক্তিতে শক্তিশালী করে তখন তার মধ্যে এক মহা শক্তির আবির্ভাব হয় এবং নিজের মধ্যে যে লোভ, দ্বেষ এবং মোহের মাধ্যমে নিজেকে ধ্বংস করছিল তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে। সেই মহা প্রজ্ঞার শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে নিজেকে বস্তু দুঃখের ঊর্ধে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তখন বস্তু আকর্ষণ তাকে পরাজিত করতে পারে না। তখন সে একজন প্রজ্ঞা জ্ঞানে শক্তিশালী জ্ঞানী সত্ত্বা।

০৪-০৬-২০১৭ 

রাতঃ ৯:৪৫