সমাগত ঈদুল আজহা - গরু কিনবেন! একটু বুঝে শুনে কিনুন!

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির জুলাই ৮, ২০২১, ০৫:০৩ পিএম
ফাইল ফটো
কুমিল্লাঃ সামনে ঈদ-উল-আজহা, দেশব্যাপী মুসলমানদের পবিত্র কোরবানির ঈদ। সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্যতম প্রিয় ধর্মীয় উৎসব। এই বিশেষ দিনে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে বিভিন্ন ধরণের গবাদিপশু  কোরবানি দেয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর আমাাদের দেশে ৫০ লাখের বেশি  গবাদিপশু কোরবানি করা হয়।
 
কোরবানি উপলক্ষে আমাদের দেশের খামারি ভাইয়েরা বিভিন্নভাবে তাদের গবাদিপশুগুলো মোটাতাজাকরণ করেন, এরই মধ্যে কিছু অসাধু খামারি অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করার জন্য এই সকল গবাদিপশু বিশেষ করে গরুতে বিভিন্ন রকম গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করে মোটাতাজাকরণ করে থাকেন।
 
স্টেরয়েড হরমোন প্রয়োগ করা গরুর মাংস খেলে মানুষের কিডনি-লিভারসহ অন্যান্য সংবেদনশীল অঙ্গ নষ্ট হয়ে ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ দ্রুত বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত পশুর মাংস গ্রহণ করার ফলে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিবর্তন দেখা দেয় নারী ও শিশুর শরীরে। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে স্থুলতা এবং পরবর্তীতে রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলসহ নানা রকম রোগ বিস্তার লাভ করে।
 
মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিরূপ প্রতিক্রিয়া জন্য বিভিন্ন উন্নত দেশের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ পশু মোটাতাজাকরণের জন্য এইসব স্টেরয়েড নিষিদ্ধ করেছে। এইসব পণ্য সাধারণত গুরুতর রোগীদের জীবন রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়, অথচ এখন এই পণ্যগুলোই গরু,ছাগল এবং অন্যান্য কোরবানির পশুর  মধ্যে ইনজেকশন করা হচ্ছে বা খাওয়ানো হচ্ছে। এইধরণের হরমোন প্রাণীতে ব্যবহার না করার জন্য প্রাণী ফিড অ্যাক্ট-২০১০ অনুযায়ী দেশে Decason, Oradexon, Prednisolon, Betnenal, Cortan, Steron এবং আদম-৩৩ ইত্যাদি স্টেরয়েড হরমোন ভেটেরিনারি মেডিসিন নামে বিক্রি করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
 
এই সব ঔষধ খাওয়ানোর ফলে গবাদিপশুর কিডনি ও লিভারের কার্যকলাপ ব্যাহত হয়, ফলে পশুর শরীর থেকে পানি বের হতে না পেরে শরীরে পানি জমা শুরু করে। ফলস্বরূপ গরু মোটা দেখায়। এই প্রক্রিয়ায় প্রকৃতপক্ষে গরুর শরীরে কোন মাংস বৃদ্ধি হয় না। এছাড়াও গরু দ্রুত মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিতে ওষুধ দেয়ার ২০-২৫ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবার কারণে পশুর মৃত্যুও হতে পারে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরুকে ইউরিয়া, গুড় এবং খড় (UMS) নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে দৈনিক খাওয়ানো হলে গরুর শরীরে মাংস বৃদ্ধি হয়ে গরু স্বাস্থ্যবান ও হৃষ্টপুষ্ট হয়।
 
সত্যি বলতে মানুষ জেনে অথবা না জেনে কোরবানির ঈদের সময় অবৈজ্ঞানিক উপায়ে মোটাতাজাকৃত গরু কোরবানি দিয়ে এবং মাংস খেয়ে থাকেন। অতিরিক্ত হরমোন দেয়া গরুর মাংস আগুনেও হরমোনমুক্ত হয় না। এমন গরুর মাংস খাওয়া খুবই বিপজ্জনক। ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধীতে আক্রান্ত হয়ে বিপুল পরিমান অর্থ চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে বাধ্য হন। কোরবানির গরু  কেনা নিয়ে অনেকে তাই ভয়েও থাকেন। তবে যদি আপনি ট্যাবলেট বা হরমোন পুশ করা গরু চেনার উপায় আগেভাগেই জেনে নেন তাহলে ভয়ের আর কোনো কারণ থাকে না।
 
সকলের ঈদ ও কোরবানি কবুল করুন ; হে প্রভু রাব্বানা।