রমজানের প্রস্তুতি হবে যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক এপ্রিল ৬, ২০২১, ০৪:৪৪ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ পবিত্র রমজান মাস শুরুর বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। মাত্র এক সপ্তাহ পেরুলেই বরকতস্বরূপ এই মাস শুরু হবে। তাকওয়া অর্জনে টানা ৩০ দিন রোজা রাখবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। দ্বীনি পরিবেশে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হবেন তারা।

করোনা সংক্রমণের মধ্যেই গেল বছর রমজান মাসে রোজা পালন করেছেন দেশবাসী। এবারও সেই পরিস্থিতি। করোনার কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই রমজান মাসের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে আমাদের। বাজার দর যখন চড়া, চারপাশের যখন স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা চলছে তখন সবকিছু মাথায় রেখেই প্রস্তুতিটা নিতে হচ্ছে। কেমন হবে এবারের রমজান মাসের প্রস্তুতি চলুন দেখে নেই।

তালিকা প্রস্তুত করুন

হ্যাঁ, প্রথম কাজটি হবে একটি তালিকা করা। রমজানে কী কী করবেন তা একটি তালিকায় লিখুন। মনে স্থির করেও রাখতে পারেন। তবে কাগজে লিখে চোখের সামনে থাকলে তা প্রতিদিন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তালিকাটি এমন স্থানে রাখুন যেন সহজেই পাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে রাখুন

রমজানে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আগেই কিনে নিন। এক্ষেত্রেও তালিকা করে নিতে পারেন। যেমন ইফতারের প্রয়োজনীর খাবারগুলো, ঘরের জিনিস ইত্যাদি কিনে রাখুন। শুকনো খাবারগুলো একসঙ্গে কিনে রাখতে পারেন। কিন্তু কাঁচা বাজার, ফলমূল যথারীতি প্রতিদিন বা একদিন পর পরই কিনুন। যেহেতু এখন করোনার সময় তাই সম্ভব হলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো অনলাইনেও কিনে নিতে পারেন।

ঘর পরিস্কার করুন

রোজার পরই ঈদ আসবে। রোজা রেখে ঘর পরিস্কার করা একটু বেশিই কষ্টকর। তাই রমজান মাস শুরুর আগেই ঘর পরিস্কার করে নিন। ঘরের ফার্নিচার, আলমারির কাপড়, কাঁচের পাত্রগুলো পরিস্কার করে নিন। নামাজের ঘরকে সব সময় পরিস্কার রাখার চেষ্টা করুন।

জামা কাপড় পরিস্কার রাখুন

রমজান মাসে ঘর পরিস্কারের পাশাপাশি এই বিষয়টিও নজরে রাখবেন। নামাজে ব্যবহৃত সব কাপড়গুলো আগেই পরিস্কার করে রাখুন। এই মাসে ছেলেরা বেশিরভাগ সময়ই পাঞ্জাবি পরতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য় আরামদায়ক পাঞ্জাবিগুলো প্রস্তুত রাখুন। গরমের সময় আরামদায়ক পোশাকের কথা মাথায় রাখবেন।

কেনা জিনিসগুলো গুছিয়ে নিন

ইফতারের জন্য কেনা সামগ্রীগুলো গুছিয়ে রাখুন। চিনি, ছোলা, বেসনসহ শুকনো জিনিসগুলো কৌটায় ভরে রাখুন। যেখানে রাখবেন সেই স্থানটিও যেন পরিস্কার হয়। হাতের নাগালেই রাখুন। তাহলে সহজে খুঁজে পাবেন।

স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিকল্পনা করুন

নিঃসন্দেহে, রমজান মাসের ইবাদত করতে সুস্থ দেহের প্রয়োজন। একটি সুস্থ দেহ একটি সুস্থ মনের দিকে পরিচালিত করে। রোজা রেখে সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পরিকল্পনা করুন এমনভাবে যাতে আপনি পরিমিতভাবে খাবার খেতে পারেন। খাবার অপচয় করবেন না।

শরীর-চর্চার প্রস্তুতি

রমজান মাসে রোজা রেখে ব্যায়াম করা সম্ভব নয়। তাই হাটাচলা ও শরীরিক পরিশ্রমের কাজগুলো অব্যাহত রাখুন। মনে রাখবেন, অনুশীলন এড়ানো উচিত নয়। কারণ এগুলো আমাদের রক্ত সঞ্চালন ও শক্তি ঠিক রাখে।

ইবাদত করুন

রমজান মাসের সবচেয়ে বড় কাজ রোজা রাখা আর ইবাদত করা। প্রতিদিন কুরআন পড়ুন। রমজানের প্রতিদিন এক পাতা করে হলেও কুরআন পড়ুন। এই অভ্যাস অব্যাহত রাখুন। ইনশাল্লাহ,আপনার ইবাদত ও দোয়া কবুল করবেন মহান আল্লাহতায়ালা। ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযম ও অনুশীলন করতে উত্সাহিত করে। নবী বলেছেন, "আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলো হ'ল এগুলো, যা সামান্য হলেও সামঞ্জস্যভাবে করা হয়।"

তাওবাহ-ইসতেগফার করুন

রমজানের আগের সব গোনাহ থেকে তাওবাহ ইসতেগফার করে নিন। আগে থেকে তাওবাহ-ইসতেগফার করে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ লাভে নিজেকে প্রস্তুত করা খুবই জরুরি। আর তাতে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার আগের সব গোনাহ মাফ করে দিয়ে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ দিয়ে জীবন সুন্দর করে দেবেন। এ জন্য বান্দা বেশি বেশি পড়বেন, ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন।'

মানসিক প্রস্তুতি

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, ‘রোজা মানুষের মনের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। যেমন- কর্মে মনোযোগ আসে, পশুত্ব দূরীভূত হয়, সমাজ গঠনে সহায়তা করে।’

আর ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘সিয়াম মুসলমানদের কেবল পরকালের মুক্তির পথ দেখায় না, নৈতিক চরিত্র গঠনেও এর দারুণ ভূমিকা রয়েছে।’ সুতরাং নিজের মনকেও প্রস্তুত করে নিন। আল্লাহ ধ্যানে মগ্ন হোন।

আগামীনিউজ/নাসির