চালকদের নায়ক সাইমন সাদিক: সময়ের চেয়ে জীবন আগে

নিজস্ব প্রতিবেদক ‌ জানুয়ারি ১৭, ২০২০, ০৮:২৯ পিএম

ঢাকাঃ সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে এবং সড়কে যানবাহন চালনা ও পথচারী নিরাপত্তা সম্পর্কে রিক্সা, মোটরসাইকেল ও রাইড শেয়ারিং অ্যাপস এর চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় রাজধানীর মিরপুর ৬ এর বি ব্লকের ২ নং সড়কের ১ নং হাউজের নিজ কার্যালয়ে দুই ঘন্টাব্যাপী প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র তারকা সাইমন সাদিক।

অনুষ্ঠানে তিনি চালকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার জীবনই শুধু নয় আপনার পরিবারের কথা অন্যের পরিবারের কথা ভেবে চালক হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। দুর্ঘটনার পর অনেক সময় আপনারা আন্দোলনে নামেন। আমরা আন্দোলন চাই না, কোনো দুর্ঘটনা, মৃত্যু চাই না। কারণ আপনার দিকে তাকিয়ে যেমন একটি পরিবার তেমনি যিনি আপনার যানবাহনে বসে তার দিকেও তাকিয়ে অনেক মুখ। আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে যে, সময়ের চেয়ে জীবনের গুরুত্ব মূল্য বেশি। কোনো অপমৃত্যু আমাদের কাম্য নয়।

সড়কে না হেঁটে পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করে সড়কে নেমে ৭০/৮০ কিমি স্পিডের গাড়ি থামিয়ে দেবেন না, আগে জীবন, তারপর সময়। ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করে গতিসম্পন্ন গাড়ি থামাতে গিয়ে মৃত্যু ডেকে আনবেন না। আশা করি এই প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী চালক ভাইরা সড়কে দক্ষ চালকের পরিচয় দেবেন।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন ও সড়কে যানবাহন চালনা, যাত্রী-পথচারী নিরাপত্তার নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারি অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনা তখনই বেশি ঘটে যখন সড়কে যানবাহন কম থাকে বা তুলনামূলক ফাঁকা থাকে। কারণ কে আগে বা পরে যাবে সে সম্পর্কে না জেনে যানবাহনের গতি বাড়িয়ে দিয়ে ঝুঁকি তৈরি করে। কোন যানবাহন জরুরী কোনটা কম জরুরী তা অধিকাংশ চালকই আমরা জানি না। নতুন নতুন যানবাহন সড়কে নামলেও চালকের মানসিকতা ও জ্ঞান সেকেলে। তাছাড়া সড়কের অবস্থা ও সংকেতগুলো বুঝি না।

কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা শুধু চালকের কারণেই ঘটে না, পথচারি ও কখনো কখনো যাত্রীর বেপরোয়া মানসিকতার কারণে ঘটে। তবে চালক হিসেবে দুর্ঘটনা এড়ানোর দায়টা বেশি। কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথম দায় চাপানো হয় চালক-হেলপারের ওপরে।

তিনি আরো বলেন, রাগ-ক্ষোভ ও বিপ মেজাজ নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসবেন না। বেপরোয়াভাবে রেশারেশি করে গাড়ি চালাবেন না। যানের ক্ষতির চেয়ে মালের (যানবাহনের) ক্ষতি বেশি মূল্যায়ন করবেন না বরং ইনডিকেটর, টায়ার, ব্রেক সবসময় চেক করবেন। দুর্ঘটনা ঘটলে নতুন আইনে চালক দায়ী হতে পারেন, কিংবা মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব ডেকে আনতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় ড্রাইভিং সিটে বসা মানে সব যাত্রীর নিরাপত্তা কিংবা অন্য পরিবহনের যাত্রীর দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের মহাপরিচালক ট্রেইনিং (থিওরি এন্ড রোড) মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকার সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৭শ' ৯৩ রিক্সা এবং ২ হাজার ভ্যানসহ মোট ২৯ হাজার ৭শ' ৯৩টি লাইসেন্স প্রদান করেছে। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা যায় এরপরেও কয়েক লাখ লাইসেন্সবিহীন রিক্সা ও ভ্যান সড়কে বিভিন্ন স্থানে চালাচল করছে এবং কোনো রিক্সা চালকদেরই সড়ক ব্যবহার বিধির উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

তিনি বলেন, সড়কে ট্রাফিক নির্দেশনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে। রাজধানীর বিশেষ এলাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কিন্তু সবাই আইনটা মানি, কিন্তু সাধারণ সড়কে ঢুকতেই আইন অমান্যের হিড়িক পড়ে যায়। এই অবস্থানের উত্তোরণ ঘটাতে হবে। মনে রাখতে হবে একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।

পাথওয়ে’র নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, মোটরসাইকেল এবং রাইড শেয়ারিং চালকদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ চালকদের তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। যার ফলে দেখা যাচ্ছে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে, মহাসড়ক গুলোতে নসিমন, করিমন, ইজি বাইকসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং মাঝারি যানবাহন চলাচল করছে। যার চালকরা সঠিকভাবে সড়ক ব্যবহার করছেন না। ফলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে একটি প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা। যাতে করে তারা সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে এবং সড়ককে নিরাপদ রাখতে পারে। আমরা পাথওয়ের মাধ্যমে সেই কাজটিই করছি। আয়শূন্য বা বেকারদের দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ করে আসছি। আজকে ৭০ রিক্সা ও ৫০ মোটরসাইকেল চালককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

আগামীনিউজ/মোরসু/এনএ